ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঢাকার দিনরাত

প্রকাশিত: ০৪:২৪, ৯ জুন ২০১৫

ঢাকার দিনরাত

ঢাকায় দেড়-দু’কোটি নাগরিকের ছোট একটি অংশও যদি কর্মব্যস্ত থাকে, কাজের উদ্দেশে ঘর থেকে বের হয় তাহলেও যানজট সৃষ্টি হতে পারে শুক্র-শনিবার ছাড়া সপ্তাহের অন্য যে কোন ছুটির দিন। স্বীকার করে নেয়া ভাল যে, শুক্র-শনি দু’দিন সরকারী অফিস আদালত ছুটি মানে গায়ে গা ঘেঁষা এ মহানগরীর রাস্তাঘাট সুনসান হয়ে যাবে- এমন চিন্তা বহুকাল হলো জলাঞ্জলি দিয়েছে ঢাকাবাসী। ওই দু’দিন বিকেল থেকে মধ্যরাত অবধি সড়কে ও বিপণি বিতানগুলোতে মানুষের এতটাই উপচে পড়া অবস্থা হয় যে মনে হবে এদিন ঢাকায় কোন বিশেষ উপলক্ষ রয়েছে। এত কথা বলার কারণ গত সপ্তাহে শব-ই-বরাতের ছুটির দিন বুধবার ঢাকা ছিল আশ্চর্যরকম ফাঁকা। সেদিন অবশ্য সংবাদপত্রের কার্যালয় ছিল খোলা। সন্ধেবেলা অফিস থেকে বেরিয়ে অবাক হওয়ার দশা। বাংলামোটর মোড় জনবিরল না হলেও মানুষজন খুব বেশি নেই। এ সময়টায় ফুটওভারব্রিজের ওপর দাঁড়ালে দেখা যায় দু’পাশে ছুটে চলা লাগাতার যানবাহন। নগরীর দক্ষিণ মুখকে যদি অফিসপাড়া ধরি আর উত্তর দিককে ধরি বাড়ির দিক তাহলে সন্ধেবেলা অফিসমুখো যানবাহনের সারি কম থাকারই কথা। কিন্তু পরিস্থিতি তেমন থাকে না। দু’দিকেই প্রচ- যানবাহনের চাপ থাকে। অথচ শব-ই-বরাতের ছুটির দিনে রাস্তার উভয় পাশেই সামান্য সংখ্যক গাড়ি। এক তরুণ জুতার নিচে চাকা লাগিয়ে রাস্তায় স্কেটিং শুরু করে দিয়েছে। বাস চালকদেরও নিশ্চয়ই পুলক লেগেছে। পাল্লা দিয়ে গাড়ি চালানোর ভয়ঙ্কর নেশায় তাদের পেয়ে বসেছে। ঠিক ওই সময়ে ঢাকার অন্যতম ব্যস্ত এলাকা কারওয়ান বাজারের সামনে এভাবেই দুর্ঘটনায় পতিত হলো দুটি মিনিবাস। ঘটনাস্থলেই নিহত হলো একটি বাসের কিশোর হেলপার। ওই বাসেই ছিলেন জনকণ্ঠের উদ্যমী কর্মী নোমান। আহত হলেন তিনিও। মোদির সফরকালে রাজপথ ও নৈশভোজে কবি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঢাকায় ছিলেন দু’দিন এক রাত। তার নিরাপত্তায় ব্যাপক ব্যবস্থাই নেয়া হয়েছিল। তিনি যখন যে সড়ক দিয়ে যাতায়াত করেছেন সেসব সড়কে আগে থেকেই সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছিল। ফলে দুটো দিন মহানগরীর ট্রাফিক অবস্থা এবং নাগরিকদের চলাচল কেমন রূপ নিয়েছিল তা অনুমান করতে কষ্ট হয় না। মিস্টার মোদিকে বহনকারী বিমান তখনও ঢাকার মাটি স্পর্শ করেনি সিএনজি অটোরিক্সার চালক তার নাম করে ট্রাফিক জ্যামের দোহাই দিয়ে বাড়তি ভাড়া হাঁকলেন। ধমক দিয়ে বললাম, সে হিসাব আমার আছে বলেই তিনি ঢাকায় নামার এক ঘণ্টা আগেই এয়ারপোর্ট এলাকা পার হতে চাইছি। বরং এখন একটুও জ্যাম নেই। বেচারা চালকের মুখ বন্ধ হয়ে গেল। দুটো দিন ঢাকার সাধারণ মানুষের মুখেও ছিল মোদির কথা। দাদা-দিদি মোদি-মমতা একসঙ্গে ঢাকায় আছেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন। এবার নিশ্চয়ই আমাদের কিছু প্রাপ্তি ঘটবে। যা হোক মোদির আগমন উপলক্ষে সোনারগাঁ হোটেলের আশপাশে দু’দেশের নেতৃবৃন্দের বড় বড় প্রতিকৃতি দিয়ে সাজানো হয়েছিল। আমাদের জনপ্রিয় কবি নির্মলেন্দু গুণ তাঁর মোদি দর্শনের প্রসঙ্গ ফেসবুকে তুলে ধরেছেন। লেখাটি তুলে দিচ্ছি : কাল রাতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মনোহর মোদির সম্মানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া নৈশভোজে গিয়েছিলাম সোনার গাঁ হোটেলে। জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যেমন কথা বলা ও বই উপহার দেয়ার সুযোগ হয়ছিল, কাল তা হয়নি। নিরাপত্তায় নিয়োজিত ব্যক্তিগণ বই নিয়ে হলের ভিতরে প্রবেশ করতে দেয়নি। ফলে মোদির সঙ্গে কথা বলা, বই উপহার দিয়ে নিজেকে কবি প্রমাণ করার সুযোগ হয়নি। কালকের সকল খাবারও ছিল নিরামিষ। তবে শেষ দিকে কিছুটা সারপ্রাইজ পাওয়া হলো। তিনি যখন নৈশভোজ সেরে হল ত্যাগ করছিলেন, তখন আমি তাঁকে কাছে থেকে দেখার লোভ সম্বরণ করতে না পেরে গেটের দিকে যাই এবং কয়েকজন মন্ত্রীর পেছনে নমস্কার দেয়া ভঙ্গিতে দাঁড়াই। আমার দৈহিক উচ্চতাহেতু আমি তাঁর চোখে পড়ি এবং সম্ভবত আমার পাকা চুল-দাড়ির কারণে তিনি আমার চেহারার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করার আগ্রহ বোধ করেন, দু’জনের ঘাড়ের ওপর দিয়ে আমার সঙ্গে করমর্দন করার জন্য তাঁর বাঁ হাতটা বাড়িয়ে দেন। আমরা মুহূর্তের জন্য উষ্ণ করবন্ধনে আবদ্ধ হই। আমাদের প্রধানমন্ত্রী পাশে থেকে দৃশ্যটি প্রত্যক্ষ করেন। আমাকে কবি হিসেবে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়ার সুযোগ থাকলেও তিনি তা গ্রহণ করেননি, যা তিনি করেছিলেন জাপানী প্রধানমন্ত্রীর বেলায়। তার ফল হলো এই যে, মোদি জানলেন না, তিনি কার সঙ্গে করমর্দন করেছিলেন, ঐ নৈশভোজ শেষে। কাছে থেকে নরেন্দ্র মোদিকে দেখে, তাঁর সঙ্গে করমর্দন করে আমার ভাল লাগল। মনে হলো তাঁর মাধ্যমে তিস্তার জল আমরা পাব এবং আমাদের দুই দেশের সম্পর্ক আরও একটু ভাল হবে। আমি যে কিছুটা অন্যরকম মানুষ, সেটা শনাক্ত করতে ব্যর্থ না হওয়ার জন্য ভারত অধিনায়ক শ্রী নরেন্দ্র মনোহর দাস মোদিকে শ্রদ্ধা ও ধন্যবাদ জানাই। গুলিস্তান থেকে ফুলবাড়িয়া ঢাকায় প্রকাশ্য রাজপথে অনেক জীবন নাটকও মঞ্চস্থ হয়ে থাকে। নাটকের কুশীলবরা জানেন এসবই সাময়িক একশন, তারপর যে কে সেই। কথায় বলে থোড় বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোড়। গত সপ্তাহে এমন কা-ই ঘটল গুলিস্তানে। একে ইঁদুর বেড়াল খেলা বললেও ভুল হবে না। সোমবার ঢাকার গুলিস্তান থেকে ফুলবাড়িয়া এলাকা পর্যন্ত ফুটপাথে হকার উচ্ছেদ অভিযান হবে এমন আগাম ঘোষণা দিয়ে রাখা হয়েছিল। হকার উচ্ছেদ অভিযান তথা ফুটপাথ উদ্ধার তৎপরতার জন্য আগত সিটি করপোরেশনের লোকজনকে বিন্দুমাত্র খাটুনি করতে হয়নি। তারা আসার আগেই স্থান খালি করে চলে যান হকাররা। আবার অভিযান পরিচালনাকারীরা বিদায় নেয়ার পরে যথারীতি তারা ফিরে আসেন স্ব স্ব অবস্থানে। অন্যদিনের মতো জমজমাট বিকিকিনিও শুরু হয়ে যায়। একই নাটকের পুনরাবৃত্তি যেন। এর আগে ঠিক একই কায়দায় বিভিন্ন সময়ে হকার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়েছে। অল্প সময়ের জন্য সরে গেছেন হকাররা। পরে আবার ফিরে এসেছেন। ফলে কয়েক ঘণ্টার জন্য ফুটপাথ ভারমুক্ত হয়েছে। সোমবারও সেই একই ব্যাপার প্রত্যক্ষ করা গেছে। কয়েক ঘণ্টার জন্য ফুটপাথ সুনসান হয়ে গেছে। শুধু ফুটপাথ তো নয়, রাজপথের কিছুটা অংশও ফাঁকা হয়ে যায়। ফলে রাস্তাও কিছুটা চওড়া হয়। তার ওপর ফুটপাথের ক্রেতা-বিক্রেতাদের অনুপস্থিতির কারণে ভিড়বাট্টাও লোপ পায়। অবধারিতভাবে যানজটেরও উন্নতি হয়েছিল। দুই সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল এবার ফুটপাথ হতে স্থায়ীভাবে হকার উচ্ছেদ করা হবে। একবার তুলে দেবার পর হকাররা পথচারীদের হাঁটবার নির্দিষ্ট স্থান ফুটপাথে আর বসতে পারবে না। কিন্তু সে প্রচেষ্টা শুরুতেই ভেস্তে গেছে। যাকে বলে বিসমিল্লাতেই গলদ। সরেজমিন ঘুরে এসে খবরের কাগজের রিপোর্টার পাঠকদের জানিয়েছেন বায়তুল মোকাররম এলাকা, গুলিস্তান থেকে ফুলবাড়িয়া পর্যন্ত এলাকায় প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা চাঁদা ওঠে। এই বিপুল অর্থ কারা পান? পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ প্রভাবশালী দলের নেতা, স্থানীয় মার্কেটগুলোর ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্থানীয় মস্তানদের পকেটে যায় বলে অভিযোগ করা হয়ে থাকে। সত্যি নাকি! পাঠক, আপনার আবাসস্থল এবং কর্মস্থলের কাছের ফুটপাথের চেহারাটা একবার ভাবুন। মিলিয়ে নিতে পারেন আমার অভিজ্ঞতার সঙ্গে। উত্তরার এগারো নম্বর সেক্টরে বাসা থেকে বেরিয়ে প্রধান সড়কে উঠে যে ফুটপাথ পাই তাকে বিচিত্র দোকানপাটের বারান্দা বলেই মনে হয়। গলির মোড়ে এসেই যে ফুটপাথ দর্শন করি সেখানে মোটর ওয়ার্কশপ আর ডেকোরেটরের সহাবস্থান। দোকান ভালভাবে দৃশ্যমান হয় না, ফুটপাথটাই দোকান-আকর্ষণী বিজ্ঞাপন যেন। সেখানে আড়াআড়ি করে রাখা থাকে এক গ-া হোন্ডা এবং মোটর মেরামতের নানা সরঞ্জাম। আর উল্টোদিকের ফুটপাথ পুরোটাই দখলে চলে গেছে ডেভেলপারদের; নির্মাণসামগ্রীর সমাহার সেখানে। একটু সামনে গেলে দেখা যায় ফুটপাথটাই হয়ে উঠেছে স্থানীয় কাঁচাবাজারের ‘শোভন সম্প্রসারণ’। পুরো ব্যাপারটাই বেদখল এবং তা উচ্ছেদযোগ্য। অথচ এখান থেকে মাত্র দু’ শ’ গজ দূরেই উত্তরা থানা (পশ্চিম)। আসা যাক আমার কর্মস্থলের সামনের ফুটপাথে। জায়গাটার নাম নিউ ইস্কাটন, যদিও ‘বাংলা মোটর বৃহত্তর’ বললেও মানিয়ে যেতো। এককালে পাকিস্তান মোটর নামে একটিমাত্র দোকান ছিল এখানে মোটর মেকানিক্সের। এখন পুব থেকে পশ্চিমÑ মগবাজার মোড় থেকে বাংলা মোটর মোড় পর্যন্ত পুরোটাই প্রাধান্য বিস্তার করেছে মোটর মেরামতকারী ও মোটরের খুচরো যন্ত্রাংশ বিক্রয়কারী অজস্র প্রতিষ্ঠান। বোঝাই যাচ্ছে শুধু ফুটপাথ নয়, রাস্তার অনেকখানিই তারা নিজেদের দোকানের অংশ করে তুলেছে। মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এখানে বছর বছর ধরে চলেছে ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ। কিছুদিন হলো জনকণ্ঠ অফিসের ঠিক সামনে সিমেন্টের বড় বড় বর্গাকার ব্লক স্থাপন করা হয়েছে রাস্তার ওপরে। সে কারণে রাস্তা কিছুটা সঙ্কীর্ণ হয়ে গেছে। তবে কর্তৃপক্ষ এখান দিয়ে নিয়মিত চলাচলকারী ৬ নম্বর বাসের হিসাবটা মাথায় রেখেই ব্লক বসিয়েছে। মুশকিল হয়েছে মোটর পার্টস কিনতে আসা কোন কোন গাড়ির দৈর্ঘ্য ফুটপাথের প্রস্থের তুলনায় বড় হওয়ায়। সেদিন দেখলাম রীতিমতো হল্লা শুরু হয়ে গেছে। ডানে সিমেন্টের বর্গাকার ব্লক, বামে তিন তিনখানা দামী প্রাইভেটকারÑ এর মাঝখানের সরু রাস্তা দিয়ে নিজেকে গলিয়ে দিতে পারছে না ৬ নম্বর বাস। অন্তত একটি প্রাইভেট কার কমপক্ষে এক ফুট সরালে তার পেছনটা আর বাসের বাম্পারে ধাক্কা লাগার আশঙ্কা থাকে না। একদিকে বাসের ড্রাইভার-হেলপার যাত্রী আর অন্যদিকে মোটর পার্টসের শোরুমের কর্মচারীবৃন্দÑ দু’পক্ষের ভেতর উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় চলছে। বাসের পেছনে আটকে পড়া অটোরিক্সা, মিনিবাস, প্রাইভেট কারÑ সবগুলোর চালক অস্থির হয়ে হর্ন বাজাতে শুরু করে দিয়েছে। সে এক এলাহিকা-। অদূরেই ছিলেন ট্রাফিক পুলিশ। তিনি পারলে উল্টোদিকে দৌড়ান, তা না হলে পাতালে সিঁধোন। এসব ঝুটঝামেলা থেকে গা বাঁচানোর শিক্ষা তার ভালই রয়েছে। দিনেদুপুরে চলছে ছিনতাই বাসের জানালা দিয়ে মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়ার বিষয়টি নিয়ে একবার লিখেছি। প্রতিদিনই এমনটা ঘটছে ঢাকায়। একটি পত্রিকায় লেখা হয়েছেÑ রাজধানীর ফার্মগেট থেকে সোনারগাঁও মোড় পর্যন্ত ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য ভয়াবহ আকার ধারণ করেছেÑ কথাটা মিথ্যে নয়। প্রায় প্রতিদিন পথচারী থেকে শুরু করে সবজি ব্যবসায়ী কেউ তাদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। সেদিন দিনেদুপুরে ওয়াসা ভবনের কাছে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন একটি জাতীয় দৈনিকের একজন মফস্বল সংবাদদাতা। ছিনতাইকারীরা অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে নিয়ে যায় টাকা ও একটি মোবাইল ফোন। ওয়াসা ভবনের পশ্চিম পাশে গেটে এক যুবক ইচ্ছে করে তার পায়ে পা লাগিয়ে দেয়। তিনি সরি বলতেই আরও দুই যুবক এসে সেখানে জড়ো হয়। এক পর্যায়ে তারা বলতে থাকে ‘সরি ভদ্র লোকের ভাষা’। এসব বলতে বলতে আরও ৫ যুবক তার চারপাশে ঘিরে দাঁড়ায়। এরপর ছিনতাকারীরা বলতে থাকে, ঠিক আছে ৫শ’ দেন ফেনসিডিল খাবার জন্য। এরপর যুবকদের মধ্যে দু’জন শার্ট উঁচু করে আগ্নেয়াস্ত্র দেখায় এবং পকেট থেকে টাকা ও মোবাইল ফোন তুলে নেয়। ফার্মগেট থেকে সোনারগাঁও হোটেল মোড় পর্যন্ত রাস্তার কোন না কোন অংশে প্রায়ই যানজট লেগে থাকে। এ সুযোগটা বেশি কাজে লাগায় ছিনতাইকারীরা। মোবাইল ফোনে কথা বলার সময় পেছন থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়াটা নিত্যনৈমিত্তিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেদিন এক নাছোড়বান্দা বাসযাত্রীকে দেখলাম। সঙ্গে কিছু মালপত্র ছিল লোকটির। সেসবের দিকে ফিরেও তাকালেন না। মোবাইল ছিনতাই হওয়া মাত্রই বাস থেকে নেমে দৌড়ে পিছু নিলেন ছিনতাইকারীর। এভাবে কি ধরা যাবে! বরং নিজেই বিপদগ্রস্ত হতে পারেন আরও। একটা গল্প মনে এলো, এমনটা সত্যিও তো হতে পারে। ছিনতাইকারীকে ধরে ফেললেন কোন লোক। কিন্তু সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারীরা ঘিরে ফেলল তাকে। তারা এমন অবস্থা সৃষ্টি করল যে আশপাশের মানুষ ও পথচারীর কাছে মনে হলে ছিনতাইয়ের শিকার ব্যক্তিটিই আসল ছিনতাইকারী, আর তাকে ধরেছে ওই লোকগুলো। তারা এখন গণপিটুনির পাঁয়তারা করছে...। পঞ্চকবির গানের আসরে সপ্তাহে একটি পুস্তক থেকে অন্তত দু’পাতা পড়ে দেখেন, দু’খানা গান শোনেন অথবা একটা পুরো মুভি দেখেন কিংবা কোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যানÑ এমন শিক্ষিত ব্যক্তির সংখ্যা কি খুব বেশি হবে ঢাকায়? যানজটে আটকে থাকা, জীবিকা ও সংসারের জন্য সময় দেয়াÑ সব মিলিয়ে ঢাকার মানুষের ব্যস্ততা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে বেশির ভাগের পক্ষে গান শোনা, বই পড়া, সিনেমা দেখা রীতিমতো বিলাসিতার পর্যায়ে চলে গেছে। এসবে সময় দেয়ার মতো সময় কোথায়? মনও কি আছে? অথচ মন সুস্থ সজীব সবল রাখার জন্য এসবের প্রয়োজন অস্বীকার করা যাবে না। দিনানুদৈনিক নানা দাসত্ব থেকে মুক্তির জন্য এবং জীবনকে অর্থময় করে তুলবার জন্য এসব যে অত্যন্ত আবশ্যক সে কথাটিও আমাদের মনে থাকে না। যা হোক গত সপ্তাহে এমন একটি গানের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম যেটার আয়োজক ও অংশগ্রহণকারীরা গানের ভেতর জীবনের মানে খুঁজে পান ও জীবনকে শতরূপে অবলোকন করতে চান। গীতশতদল সংগঠনটির প্রত্যেকেই নারী, এমনকি তবলাবাদকও নারী। সাত বছর আগে প্রতিষ্ঠিত এ সংগঠনটির নামকরণ করেছিলেন সুলতানা শাহরিয়া পিউ, এর পরিচালক হলেন বাঁশরী দত্ত। দুজনেই মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। সংগঠনের প্রত্যেকেই নিয়মিত চর্চা করেন তা গান শুনেই বোঝা যায়। কয়েকজনের নাম করতে পারিÑ রীতা মজুমদার, অপর্ণা খান, শিল্পী বালা। পঞ্চকবি রবীন্দ্রনাথ, দ্বিজেন্দ্রলাল, অতুলপ্রসাদ, রজনীকান্ত ও নজরুলের গানের এই আসরে দেশপ্রেম, মানবপ্রেমের বহু ছটায় ¯œাত হয়ে মনে হলো ঢাকার গত সপ্তাহটা সত্যি সার্থক। ০৮ জুন ২০১৫ সধৎঁভৎধরযধহ৭১@মসধরষ.পড়স
×