ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ॥ বুঝে পাওয়া এবং বুঝিয়ে দেয়ার নতুন পথচলা

প্রকাশিত: ০৪:২০, ৯ জুন ২০১৫

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ॥ বুঝে পাওয়া এবং বুঝিয়ে দেয়ার নতুন পথচলা

ভারতের বিগত নির্বাচনকে বেশিরভাগ পত্রপত্রিকা বর্ণনা করেছিল, “মোদি-ঝড়” বলে। সরকার গঠনের পর গত এক বছরে নরেন্দ্র মোদি একের পর এক দেশ সফর করে চলেছেন। একে সকলেই বলছেন, “সাটল ডিপলোমেসি।” কি কারণে মোদি পৃথিবী চষে বেড়াচ্ছেন তা নিয়ে রয়েছে নানা বিশ্লেষণ। কেউ বলছেন, নরেন্দ্র মোদির হাতে লেগে থাকা গুজরাত দাঙ্গার রক্তাক্ত ইতিহাসকে মুছে ফেলতে তিনি ব্যক্তিগত ইমেজ মেরামতের লক্ষ্যেই পৃথিবীর পথে নেমেছেন। কেউ বলতে চাইছেন, ভারত যে ক্রমশ অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠছে তা পৃথিবীকে জানান দিতেই এ সমারোহ। তবে যাঁরা কূটনীতি বোঝেন এবং বিজ্ঞ, তাঁরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাঁদের মতে, নরেন্দ্র মোদি এই এক বছর নিজের দেশের দিকে নজর না দিয়ে বিভিন্ন দেশ দেখে বেড়াচ্ছেন। বোঝার চেষ্টা করছেন ভারতের এই অর্থনৈতিক সাফল্যকে কি করে আরও শক্তিশালী করা যায়, যাতে আগামী বছরগুলোতে তিনি এসব সফরের অভিজ্ঞতা ভারতে কাজে লাগাতে পারেন। দ্বিতীয়ত, সফরকৃত দেশগুলোর সঙ্গে অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও প্রযুক্তিগত যে যোগাযোগ তিনি তৈরি করছেন তা আগামী দিনের ভারত নির্মাণে বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে মঙ্গোলিয়ার কথা। এই দেশটিকে আন্তর্জাতিকভাবে উন্নয়ন ও অগ্রগতির মডেল হিসেবে দেখা হচ্ছে। অফুরন্ত প্রাকৃতিক সম্পদ আর পর্যাপ্ত ভূ-খ- দেশটিকে বাণিজ্যিক দৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে পৃথিবীর কাছে। এত দেশ থাকতে কেন নরেন্দ্র মোদি মঙ্গোলিয়ায় ছুটে গেলেন সে প্রশ্ন কেউ তুললে তার সেই প্রশ্নবোধক চেহারা বিস্ময়ে হা হয়ে যাবে এটা জেনে যে, নরেন্দ্র মোদি মঙ্গোলিয়ার সঙ্গে কোন্্ কোন্্ বিষয়ে কতগুলো চুক্তি করেছেন। এ বিষয়ে বিশদ না বলে এটুকুই বলা যেতে পারে যে, এর ফলে মঙ্গোলিয়ার চেয়ে ভারতের লাভ যে অনেক বেশি হবে তাতে কোনই সন্দেহ নেই। কিন্তু তাই বলে কি মঙ্গোলিয়ায় রব উঠেছে যে, ভারত মঙ্গোলিয়াকে দখল করে ফেলেছে? নাহ্্, এ পর্যন্ত কোন বিশ্লেষণেই এমন কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। সে যা হোক, ভারতের এই আলোচিত প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর তার এই সাটল ডিপলোমেসির আওতায় পড়ে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যেতে পারে। বিশেষ করে বাংলাদেশের ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক গুরুত্ব নিয়ে নরেন্দ্র মোদি তার দুই দিনের সফরকালে দেয়া বিভিন্ন বক্তব্যে যে কথাগুলো বলেছেন সেগুলো বিশ্লেষণ করে অন্তত আমার একথা মনে হয়নি যে, নরেন্দ্র মোদি গত এক বছর ধরে যেসব দেশ সফর করেছেন সেগুলোর সঙ্গে আরেকটি দেশের নাম যুক্ত করাই এই সফরের উদ্দেশ্য। বরং তার কথা থেকে এটুকু বোঝা গেছে যে, বাংলাদেশ নিয়ে তার সরকারের রয়েছে অত্যন্ত দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা এবং তিনি সেগুলো বাস্তবায়নেও যথেষ্ট আগ্রহী। তার চাইতেও বেশি যে বিষয়টি নরেন্দ্র মোদির বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে তা হলো, তিনি বাংলাদেশকে কোনভাবেই খাটো করে দেখেননি। বরং ভারত ও বাংলাদেশ নামের দু’টি স্বাধীন দেশের একটি “কমন প্ল্যাটফরমে” দাঁড়িয়ে দু’দেশের স্বার্থ সম্পর্কিত আলোচনার বিষয়টির ওপর জোর দিয়েছেন। বিগত সপ্তাহে নরেন্দ্র মোদির সফর নিয়ে যে কথাটি আমি লিখেছিলাম যে, দেশের আয়তন ক্ষুদ্র কিংবা বৃহৎ সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে দু’পক্ষ নিজেদের স্বার্থ সম্পর্কে কতটা সচেতন এবং তা খোলামেলাভাবে প্রকাশ করা যাচ্ছে কি না? ভারতের “বিগ ব্রাদার এ্যাটিটুড” বা দাদাগিরি নিয়ে আমাদের মধ্যে যথেষ্ট ক্ষোভ রয়েছে। বিশেষ করে বড় প্রতিবেশী হিসেবে ভারতের পক্ষ থেকে অনেক সময়ই এই দাদাগিরি প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। বাংলাদেশের স্বার্থরক্ষার ক্ষেত্রে এই দাদাগিরিই বিশেষ বাধার জন্ম দিয়েছে। অপরদিকে, একথাও যদি একটু দায়িত্ব নিয়েই বলা যায় যে, এদেশের স্বার্থ বুঝে নেয়ার মতো মনোবল, গবেষণালব্ধ জ্ঞান এবং নেগোসিয়েশনের ক্ষমতা বাংলাদেশের ব্যুরোক্রেসি বা রাজনৈতিক নেতৃত্বের কতটুকু রয়েছে, তাহলেও কি খুব বেশি অত্যুক্তি হবে? নদীর পানি কতটুকু পাওয়া গেল ভারতের কাছ থেকে সেটাই যে একমাত্র ইস্যু নয় দু’দেশের মধ্যেকার সম্পর্কের ক্ষেত্রে এবং সেই নদীর পানিও যে কেবল কিউসেক মেপে প্রাপ্য নির্ধারিত হয় না, একথা নতুন করে বিশ্লেষণের কিছু নেই। বাংলাদেশ ও ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এ দেশে হয় চরম বিরোধিতা কিংবা আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করতে গিয়ে ভারতের বিরোধিতা করা কিংবা ধর্মের ভিত্তিতে ভারতকে আলাদা (আদারিং) করে রাখা- সাধারণত এরকমটাই লক্ষ্য করা যায়। এমনকি যারা ভারতের ঝানু ও দক্ষ সরকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দর কষাকষি করেন তাদের অনেক সময়ই না বুঝে কিংবা অতিরিক্ত বুঝে সবকিছু গুবলেট করতেও দেখা গেছে। ফলে দেনা-পাওনার হিসেবে কেবলমাত্র ভারতের দাদাগিরি দেখলেই হবে না, আমাদের নিজেদের দুর্বলতাগুলোও একটু কষ্ট করে খতিয়ে দেখার দাবি রাখে। তাই নরেন্দ্র মোদি যখন তাঁর বক্তব্য ও আচরণে একথা স্পষ্ট করেন যে, দু’টি দেশ স্বাভাবিক নিয়মেই নিজেদের স্বার্থ নিয়ে দেনদরবার করবে এবং এখানে কেউ ছোট-বড় কিংবা শক্তি বেশি-কম নয়, তখন একটুখানি আশাবাদী তো হতেই হয়। পাখি, বাতাস আর পানিকে যে আটকে রাখা যায় না, নাটকোচিত (খানিকটা বলিউডের বুড়ো নায়ক অমিতাভ বচ্চনকে নকল করেও কি নয়?) ভাবে যখন নরেন্দ্র মোদির বক্তব্যে একথা উঠে আসে, তখন বুঝতে অসুবিধে হয় না যে, নরেন্দ্র মোদি কেবল নিতেই আসেননি, তিনি দিতেও এসেছেন, তা সেটা বাধ্য হয়েই হোক আর নিয়ম মেনেই হোক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনে বক্তৃতায় মোদি যখন বাংলাদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে জাতিসংঘের সমালোচনা করে বলেন, সময় বদলেছে এবং জাতিসংঘের ৭০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এই সংস্থাকেও বদলাতে হবে এবং স্পষ্টতই পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে, কোন আগ্রাসনের ইতিহাস না থাকা সত্ত্বেও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের না-থাকা নিয়ে খেদ করেন, তখন একজন বিশ্লেষক হিসেবে একথা বুঝতে একটুকু অসুবিধে হয় না যে, নরেন্দ্র মোদি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের অন্তর্ভুক্তিতে বাংলাদেশকে সর্বতোভাবে পাশে চাইছেন। মোদি একথাও স্পষ্ট বুঝিয়ে দেন যে, দু’দেশের মধ্যকার সম্পর্ক নির্ধারণে তৃতীয় কোন শক্তির আদৌ কোন প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন নেই আন্তর্জাতিক কোন সংগঠনেরও। দু’দেশ মিলেই এর সমাধানের ওপর জোর দেন। তাঁর বক্তব্যে আমরা টের পাই যে, তিনি ধরতে পেরেছেন এদেশের মানুষের মনে ভারত-বিরোধিতার চেয়ে ভারতের কাছ থেকে ন্যায্য প্রাপ্য না পাওয়ার ক্ষোভটাই বেশি। আর তাই তিনি আশা না হারানোর ওপর জোরারোপ করে বলেন, আমরা কেবল পাশাপাশি দেশ নই, আমরা সঙ্গে সঙ্গে চলতে চাই, থাকতে চাই। তিনি তরুণ প্রজন্মের জয়গান করেন এটা বুঝেই যে, এদেশে ৬৫% মানুষ একাত্তর পরবর্তী প্রজন্ম। তাদের কাছে ভারত একাত্তরে এদেশের স্বাধীনতার জন্য কী বা কতটুকু করেছে, তা কেবলই ইতিহাস। সে ইতিহাসের গুরুত্ব রয়েছে ঠিকই, কিন্তু তা দিয়ে অপ্রাপ্তির তীব্র ক্ষোভকে দমানো যাবে না। বরং এ প্রশ্নই উগ্র হয়ে উঠবে যে, তাহলে কি সৃষ্টিতে সহায়তা দিয়েছিলে শোষণ করবে বলে? আমার মনে হয়, এই চরম সত্যকে ধরতে পারাই নরেন্দ্র মোদির এবারের ঢাকা সফরের সবচেয়ে বড় অর্জন। বিভিন্ন চুক্তি আর অনুচুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে তিনি কি পেয়েছেন বা বাংলাদেশ কি দিয়েছে বা পেয়েছে তার চেয়েও এই উপলব্ধি দু’দেশের আগামী দিনের মোদি-কথিত একত্রে পথ চলার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় নিয়ামক হয়ে উঠবে। এর বাইরে নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করতে গেলে প্রাথমিকভাবে একথাটিই স্বীকার করতে হয় যে, এই সফরের প্রয়োজন ছিল। এবং সেটা দু’দেশের জন্যই। মোদি তাঁর বক্তব্যে যখন একথা বলেন যে, কোন দেশই একা চলতে পারে না, তাকে পার্শ¦বর্তী দেশের সহযোগিতা নিয়েই চলতে হয়, তখন অনেকের চোখের সামনেই ভেসে ওঠে উপমহাদেশের মানচিত্র, যেখানে আমরা লক্ষ্য করি যে, বাংলাদেশ কেবল ভারতের প্রতিবেশীই নয়, বাংলাদেশ আসলে ভারতের ভেতরকার (এ শব্দে যেন আমার অতি স্পর্শকাতর পাঠক ভেবে বসবেন না যে, আমি বাংলাদেশকে ভারতের অংশ বলেছি। ওটা ম্যাডাম জিয়ার নিজস্ব এখতিয়ার, উনি চাইলেই বাংলাদেশকে ভারতের অংশ করে ফেলতে পারেন আবার ইচ্ছে করলেই সেই ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্য ঘণ্টা দেড়েক অপেক্ষা করতে পারেন কাওরান বাজারের সবজিমন্ডিতে) একটি দেশ। তাই বাংলাদেশে ভারত-বিরোধিতা কিংবা উগ্রবাদ বা সন্ত্রাস মাথাচাড়া দিয়ে উঠলে সবার আগে ভারতেরই পেট খারাপ হবে। সেই পেট খারাপ এতটাই ভয়াবহ যে, উপমহাদেশের মানচিত্র অবধি বদলের সম্ভাবনা রয়েছে এবং বিখ্যাত সব সমাজ বদলের চিন্তাবিদরা সেই মানচিত্রকে সমর্থন পর্যন্ত দেয়ার কথা বলেছেন অনেক আগেই। ভারত-ভাঙার কারণে অমৃতভক্ষণের আনন্দলাভকারীদের সারি দীর্ঘ, একথা নরেন্দ্র মোদি জানেন না সেটা পাগলেও বিশ্বাস করবে না। আর তাইতো তিনি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার জিরো টলারেন্স নীতির ঢালাও প্রশংসা করেন ভরা সভায়। এছাড়া তার উপায়ও নেই। কারণ এদেশে ওঠা সূর্য যেমন ভারতে সকাল আনে, তেমনই এ দেশে সৃষ্টি হওয়া ঘোর অমানিশা ভারতের ললাটেও গ্রহণ লাগাতে পারে। সুতরাং নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরে বাংলাদেশ যদি এই সত্যটিও তার সামনে স্পষ্ট করতে সক্ষম হয়ে থাকে তাহলে সামনের দিনগুলো নিয়ে আশাবাদী হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এ লেখা যখন লিখছি তখন সামাজিক গণমাধ্যম এবং অনলাইন পত্রিকাগুলোয় নরেন্দ্র মোদির সফর নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। এই প্রথম অবশ্য দেখতে পাচ্ছি না যে, কেউ বলছেন, মোদি বাংলাদেশকে লুট করে নিয়ে চলে গেছেন। বরং বেশিরভাগই মোদির বাগ্মিতায় মুগ্ধতা প্রকাশ করেছেন এবং বাংলাদেশের প্রাপ্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। এদের মুগ্ধতাও সত্য, প্রাপ্য বিষয়ক প্রশ্নটিও সত্য। তবে সব সত্যের বড় সত্য যে, প্রতিবেশী বদলানো যায় না, যাবে না। অতএব, তাদের সঙ্গেই আমাদের বসবাস করতে হবে এবং এই বসবাস করতে গিয়ে বিবাদ-বিসম্বাদ না করে ন্যায্য পাওনা আদায়ের ক্ষেত্রে সমান দৃঢ়তা নিয়ে দরকষাকষির সুযোগ যেন থাকে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে একথাও মানতে হবে যে, উপমহাদেশে ভারতকে শক্তিশালী হতে চাইলে বাংলাদেশকে তার প্রয়োজন রয়েছে। আর বাংলাদেশের মোদির ভাষায় “বিকাশ” নিশ্চিত করতে হলেও ভারতকে পাশে পাওয়া প্রয়োজন আমাদের। সেটা বেগম জিয়া কথিত ফেনী থেকে বাংলাদেশের অংশ ভারতকে দিয়ে দিয়েও নয়, আবার নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য কাওরান বাজারে দাঁড়িয়ে থেকে কাঙালিপনা করেও নয়। বরং এক উচ্চতায় দাঁড়িয়ে প্রাপ্য বুঝে নেয়া ও বুঝিয়ে দেয়ার মাধ্যমেই কেবল সম্ভব। আশা করি, নরেন্দ্র মোদি ঢাকা সফরে এই বুঝে নেয়া ও বুঝিয়ে দেয়ার বিষয়টি বুঝেছেন। এখন অপেক্ষার পালা, আবারও। ৬ জুন, সোমবার ॥ ২০১৫ সংঁফধ.নযধঃঃর@মসধরষ.পড়স
×