ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘ট্রেবল জয়’- অপ্রতিরোধ্য বার্সিলোনা আবারও ইউরোপসেরা

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ৮ জুন ২০১৫

‘ট্রেবল জয়’- অপ্রতিরোধ্য বার্সিলোনা আবারও ইউরোপসেরা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আবারও ইউরোপ সেরার মুকুট পরেছে বার্সিলোনা। শনিবার রাতে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনালে কাতালানরা ৩-১ গোলে পরাজিত করে ইতালিয়ান চ্যাম্পিয়ন জুভেন্টাসকে। জার্মানির বার্লিনের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ২০১৪-১৫ মৌসুমের চূড়ান্ত মহারণে বার্সার হয়ে গোল করেন মিডফিল্ডার ইভান রাকিটিচ, উরুগুইয়ান তারকা লুইস সুয়ারেজ ও ব্রাজিলিয়ান অধিনায়ক নেইমার। জুভদের হয়ে একটি গোল পরিশোধ করেন স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড আলভারো মোরাতা। এটি বার্সার পঞ্চম চ্যাম্পিয়ন্স লীগের শিরোপা জয়। ফাইনালের আগেই নিশ্চিত ছিল যে দল জয়ী হবে তারাই ঐতিহাসিক ট্রেবল জয়ের কৃতিত্ব দেখাবে। অবশ্য ইউরোপ সেরার এই লড়াইয়ে ফেবারিট ছিল বার্সাই। শেষ পর্যন্ত ফেবারিটদেরই জয় হয়েছে। অনেকটা একতরফা ফাইনালে মৌসুমে তিন শিরোপা জয়ের কৃতিত্ব দেখিয়েছেন মেসি, নেইমার ও সুয়ারেজরা। এটি ১১৫ বছরের মধ্যে বার্সার দ্বিতীয়বার ট্রেবল জয়। অর্থাৎ ইউরোপের প্রথম দল হিসেবে দ্বিতীয়বার ঐতিহাসিক ট্রেবল জয়ের কৃতিত্ব দেখিয়েছে স্প্যানিশ চ্যাম্পিয়নরা। ট্রেবল জয়ের সুযোগ হাতছাড়া হওয়া জুভেন্টাস পুড়ছে বেদনায়। চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ইতিহাসে একমাত্র দল হিসেবে সর্বোচ্চ ছয় ফাইনালে হারের জ্বালায় জ্বলতে হয়েছে ইতালিয়ান পরাশক্তিদের। এর আগে ২০০৮-০৯ মৌসুমে পেপ গার্ডিওলার অধীনে প্রথমবার ট্রেবল জিতেছিল বার্সিলোনা। সেবার দলটির সাফল্য ছিল রীতিমতো অবিশ্বাস্য। ওই বছরে শুধু তিন শিরোপায় নয়, বার্সা জিতেছিল রেকর্ড ছয় শিরোপা। এক বছরে ছয় শিরোপা! বিস্ময়কর সেই সাফল্যের পথে আরেকবার হাঁটার সুযোগ এবারও খোলা কাতালানদের সামনে। স্প্যানিশ লা লিগা, কোপা ডেল’রের পর উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগের শিরোপা জয়। এই বছরে আরও তিন আসরে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ থাকছে লুইস এনরিকের দলের। কেননা বাকি আছে ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ, উয়েফা সুপার কাপ ও স্প্যানিশ সুপার কাপ। এই তিনটির শিরোপা জিততে পারলে ঐতিহাসিক রেকর্ডই গড়বে বার্সিলোনা। আর এই অর্জনের পথেই দল হাঁটবে বলে বিশ্বাস কোচ লুইস এনরিকের। ম্যাচ শেষে তিনি বলেন, গত দশ বছরের মধ্যে বার্সিলোনাই ইউরোপের সেরা দল। এই দলটির বছরের বাকি তিন শিরোপা জয়েরও সামর্থ্য আছে। এবারসহ পঞ্চমবারের মতো ইউরোপের সর্বোচ্চ শিরোপা জয় করেছে বার্সা। তবে গত এক দশকে এটি বার্সিলোনার চতুর্থ চ্যাম্পিয়ন্স লীগের শিরোপা। এর আগে ২০০৬, ২০০৯ ও ২০১১ সালে ইউরোপ সেরা হয় কাতালানরা। ২০০৯ সালে প্রথমবারের মতো বার্সার ট্রেবল জয়ের আগে এই কৃতিত্ব অর্জন দেখায় সেল্টিক, আয়াক্স, পিএসভি আইন্দহোভেন, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, ইন্টার মিলান ও বেয়ার্ন মিউনিখ। এবার জিতে সবাইকে ছাড়িয়ে গেল বার্সা। এখন তারা প্রথম দল হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো ট্রেবল জযের কৃতিত্বের মালিক। এত বড় অর্জনের পাশাপাশি বার্সিলোনার সেরা খেলোয়াড় লিওনেল মেসিও এক অনন্য কৃতিত্ব অর্জন করেছেন। ডাচ্ তারকা ক্লারেন্স সিড্রফের পাশাপাশি দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে চারবার চ্যাম্পিয়ন্স লীগ দলের সদস্য এখন মেসি। তবে তিন চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনালে তার কাছ থেকে প্রথম গোল পায়নি বার্সা। শিরোপা নিশ্চিত হওয়ার পর পরই হাজার হাজার বার্সা সমর্থক বার্সিলোনার রাস্তায় নেমে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে থাকেন। ম্যাচ চলাকালীন যেখানে পিন পতন নীরবতা ছিল সেখানে শিরোপা জয়ের পর পুরো চিত্রই পাল্টে যায়। প্রিয় দলের নীল-লাল রঙের জার্সি গায়ে তারা আনন্দ-উল্লাস করতে থাকেন। কাতালান রাজধানীর বিখ্যাত পার্টি স্ট্রিট লাস রামব্লাসে নেমে এসে সবাই একসেঙ্গ চিৎকার করে বলতে থাকেন ‘চ্যাম্পিয়ন, চ্যাম্পিয়ন! বার্লিনের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে ম্যাচের শুরু থেকেই জুভেন্টাসের ওপর চড়াও হয়ে খেলতে থাকে বার্সিলোনা। ফল পেতেও বিলম্ব হয়নি। চতুর্থ মিনিটেই এগিয়ে যায় এনরিকের দল। লেফট উইং দিয়ে বার্সিলোনা অধিনায়ক আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার বাড়ানো দারুণ এক পাস থেকে ইভান রাকিটিচ জুভেন্টাস অধিনায়ক ও গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি বুফনকে পরাস্ত করেন। বিররিত পর ৫৫ মিনিটে রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক স্ট্রাইকার আলভারো মোরাতা জুভেন্টাসের পক্ষে সমতা ফেরান। দারুণ শটে গোল করেন তিনি। এর আগে সেমিফাইনালে মোরাতার গোলেই বিদায় নিয়েছিল রিয়াল। ম্যাচের ৬৮ মিনিটে লুইস সুয়ারেজের গোলে আবারও এগিয়ে যায় বার্সা। এই গোলের পরই মূলত মেসিদের জয় নিশ্চিত হয়ে যায়। বাকি সময়ে জুভেন্টাস তেমন গোলের ভাল সুযোগ পায়নি। উল্টো আরও গোল হজম করতে পারত তারা। ম্যাচের অন্তিম মুহূর্তে আর শেষরক্ষা হয়নি ইতালিয়ান চ্যাম্পিয়নদের। শেষ মিনিটে (৯৭ মিনিট) দারুণ প্লেসিং শটে বার্সার হয়ে তিন নম্বর গোল করেন নেইমার। পাল্টা আক্রমণে নিজেদের অর্ধ থেকে বল নিয়ে এগিয়ে যান ব্রাজিলিয়ান অধিনায়ক। এরপর পাস দেন পেড্রোকে। ফিরতি পাসে বল পেয়ে কোনাকুনি শটে লক্ষ্যভেদ করেন নেইমার। এই গোলের পরপরই ম্যাচ শেষ হয়ে যায়। আর উল্লাসে মেতে ওঠেন বার্সিলোনার ফুটবলাররা।
×