ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

গ্যাটে ইনস্টিটিউটে মুক্তধারার শিল্প প্রদর্শনী ‘ইথার’

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ৮ জুন ২০১৫

গ্যাটে ইনস্টিটিউটে মুক্তধারার শিল্প প্রদর্শনী ‘ইথার’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ধানম-ির গ্যাটে ইনস্টিটিউটে শুরু হলো ইন্টার-এ্যাক্টিভ আর্টনির্ভর মুক্তধারার শিল্প প্রদর্শনী ‘ইথার’। গ্যাটে ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের পৃষ্ঠপোষকতায় কাকতালীয় স্টুডিও ও গ্লিফের আয়োজনে প্রযুক্তি ও শিল্পের সম্মিলিত এ প্রদর্শনী শুরু হয় রবিবার। প্রযুক্তি, চিত্রকর্ম ও সাহিত্যের সমন্বয়ের এই ‘ইথার’ শীর্ষক প্রদর্শনীতে শিল্পানুরাগী দর্শকবৃন্দ এককভাবে উপভোগ করতে পারবেন এবং আলাদাভাবে পরিচিত হতে পারবেন প্রদর্শনীর শিল্পকর্মের সঙ্গে। প্রদর্শনীতে গেলেই দর্শনার্থীরা আরও উপভোগ করতে পারবেন কল্পকাহিনীনির্ভর প্রযুক্তির এই শিল্পকর্মের গল্পের সঙ্গে, যা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ছবি সংবলিত গোলকধাঁধার অনুরূপে। ১৬ ফুট দীর্ঘ ও ৭ ফুট উচ্চতার তৈরি করা পুরো কাঠামোতে কাব্যিক আকারে তুলে ধরা হয়েছে এই কল্পকাহিনীটি। কাকতালীয় স্টুডিওর কলাকুশলীবৃন্দের বিজ্ঞাননির্ভর চিন্তা আর গ্লিফের লেখক ও চিত্রশিল্পীদের সৃজনশীল চিন্তার বহির্প্রকাশ এই ‘ইথার’। এতে স্টুডিওর কলাকুশলীবৃন্দের বিজ্ঞাননির্ভর চিন্তা, শব্দ ও চিত্রের সমন্বয়ে তৈরি ইন্টারেক্টিভ আর্ট প্রকাশ পেয়েছে। যেখানে ব্যবহার করা হয়েছে মাইক্রোসফট এক্সবক্সের কাইনেক্ট ডিভাইস। এছাড়াও কাকতালীয় স্টুডিওর কলাকুশলী কাজ করেছেন প্রজেক্টর দিয়ে। ‘প্রজেকশন ম্যাপিং’-এর ওপর যা এই প্রদর্শনীর অন্যতম মাধ্যম। লেখক ও চিত্রশিল্পীদের সৃজনশীলতায় এই প্রদর্শনীতে উঠে এসেছে মৌলিক কল্পকাহিনী। উঠে এসেছে ‘ইথার’ কাহিনীর বিবর্তনও। পুরো প্রদর্শনীতে ব্যবহার করা হয়েছে গ্লিফের নিজস্ব ধারণায় নির্মিত গল্প ও ক্যানভাসে প্রকাশ পেয়েছে এর চিত্রকর্ম। প্রদর্শনীটি চলবে ১১ জুন পর্যন্ত। প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। ‘একুশ শতকে নজরুলের সাম্য চেতনা’ ॥ একুশ শতকে নজরুল প্রতিপাদ্যে শুক্রবার থেকে শুরু হয় জাতীয় নজরুল সম্মেলন। নজরুল ইনস্টিটিউট আয়োজিত সম্মেলনটি যেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নতুনভাবে জানার প্রচেষ্টা। জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে চার দিনের সম্মেলনে নানা আয়োজনের ভেতর দিয়ে উঠে আসে কবির অনেক অজানা অধ্যায়। রবিবার সম্মেলনের তৃতীয় দিনের অধিবেশনেও ছিল নজরুলকে নতুনভাবে চেনা-জানার সেই প্রবহমানতা। এদিন বিকেলে পঠিত ‘একুশ শতকে নজরুলের সাম্য চেতনা’ শীর্ষক প্রবন্ধ ও আলোচনায় ছিল সেই ধারাবাহিকতা। এছাড়া সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় ছিল নজরুলের গানের সুর, কবিতার ছন্দ এবং নৃত্যের উপস্থাপনা। সকাল থেকে রাত অবধি নাচ-গান-কথা ও কবিতায় উদ্দীপ্ত হলো নজরুল সম্মেলন। একুশ শতকে নজরুলের সাম্য চেতনা শিরোনামের প্রবন্ধটি উপস্থাপন করেন পশ্চিমবঙ্গের লেখক ও গবেষক ড. মিরাতুন নাহার। আর এ বিষয়ক আলোচনায় অংশ নেন কথাশিল্পী অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও ড. সৌমিত্র শেখর। অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ইকরাম আহমেদ। প্রবন্ধ পাঠের আগে বাংলাদেশের নিজের ভালবাসার প্রকাশ ঘটিয়ে মিরাতুন নাহার বলেন, আমি জন্মেছিলাম স্বাধীন ভারতবর্ষে। তাই দেখা হয়নি পরাধীন ভারতবর্ষ। ধর্মের ভিত্তিতে রাষ্ট্র বিভক্ত না হলে আমি হয়ত এদেশের অধিবাসী হতাম। এরপর প্রবন্ধে তিনি নজরুলের কথাসাহিত্যে অনালোচিত থাকা সাম্যের বিষয়টি উপস্থাপন করেন। নজরুলের বাঁধনহারা ও মৃত্যুক্ষুধা উপন্যাসের মাহবুবা ও মেজ বউ চরিত্রের উদ্ধৃতির মাধ্যমে লৈঙ্গিক বৈষম্যের বিষয়টি তুলে ধরেন। বলেন, নজরুলের কথাসাহিত্যে প্রতিফলিত সাম্যের চেতনা কখনই তেমনভাবে আলোচিত হয়নি। মূলত প্রকৃতিসৃষ্ট পার্থক্যের পথ ধরে তৈরি হয় বিভাজন। আর সেই বিভাজন থেকেই সূচনা হয় বৈষম্যের। সাম্য হারিয়ে নারী-পুরুষের ভেতর সৃষ্টি হয় বৈষম্য। একইভাবে ধনী-গরিব কিংবা জাত-পাতের সূত্র ধরে চেপে বসে সাম্যের শত্রু বৈষম্য। আর তখনই মানুষ পরিণত হয় অমানুষে। সভাপতির বক্তব্যে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, নজরুল সাহিত্যের উপেক্ষিত বিষয়টি উঠে এসেছে এই প্রবন্ধে। আর তাঁর সাহিত্যজীবনের সূচনাও হয়েছিল কথাসাহিত্যের মাধ্যমে। একইভাবে নজরুলের গান-কবিতায়ও সহজাতভাবে উঠে এসেছে সাম্যের বাণী। সাম্যের বিরুদ্ধে বিরাজমান বৈষম্যকে ভেঙ্গেছেন তিনি সাহিত্যের আশ্রয়ে। এমনকি সমাজ ও রাষ্ট্রে সাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য প্রত্যক্ষ রাজনীতি করেছেন। কারাভোগ করেছেন। লড়েছেন পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থার বিরুদ্ধে। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী আরও বলেন, বাঙালীর ঐক্য চেয়েছিলেন নজরুল। মানুষ ও প্রকৃতিকে তিনি এক করে দেখেছেন। বৈষম্যকে কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের প্রধান শত্রু হিসেবে বিবেচনা করেছেন। আলোচনার মাঝে নজরুলকে নিয়ে ড. মিরাতুন নাহার সম্পাদিত দোলন চাঁপা শিরোনামের সাময়িকীর মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এ সময় আলোচকদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। বৈকালিক আলোচনা শেষে সন্ধ্যায় শুরু হয় নৃত্য-গীত-কবিতায় সাজানো সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী শিল্পীদের সম্মেলক সঙ্গীত দিয়ে এ পর্বের সূচনা হয়। অনেক কণ্ঠ এক সুরে গেয়ে যায় জয় হোক, জয় হোক, শান্তির জয় হোক, সাম্যের জয় হোক, সত্যের জয় হোক। গান শেষে শুরু হয় সৃষ্টি কালচারাল সেন্টারের নৃত্য পরিবেশনা। অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে গানের সুরে মুদ্রা ও অভিব্যক্তির সম্মেলক নাচ করে আনিসুল ইসলাম হীরু ও তাঁর দল। এছাড়া এদিন ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ৪০ শিল্পী অংশ নেন সঙ্গীত পরিবেশনায়। একক কণ্ঠে গান শোনান ফাতেমাতুজ জোহরা, সুমন চৌধুরী, ইয়াসমিন মুশতারী, উত্তম কুমার, বাবুল সাহা, সেতু দেবনাথ, ইশতিয়াক আহমেদ রাহাত প্রমুখ। কবিতার দোলায়িত ছন্দে আবৃত্তি পরিবেশন করেন ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় ও ডালিয়া আহমেদ। এছাড়া সম্মেলনের তৃতীয় দিন সকালে অনুষ্ঠিত হয় শুদ্ধ বাণী ও সুরে নজরুলসঙ্গীত ও স্বরলিপি প্রশিক্ষণ। ঢাকা ও ঢাকার বাইরের শতাধিক শিল্পীকে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেন সালাউদ্দীন আহমেদ। আর এ পর্বের পরিচালনা করেন ইনস্টিটিউটের সঙ্গীত প্রশিক্ষক মোঃ শহীদুল ইসলাম খান।
×