ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিএনপি চেয়ারপার্সনের নালিশ-দেশে গণতন্ত্র নেই

মোদির সঙ্গে রওশন এরশাদ ও খালেদা জিয়ার সাক্ষাত

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ৮ জুন ২০১৫

মোদির সঙ্গে রওশন এরশাদ ও খালেদা জিয়ার সাক্ষাত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। রবিবার বিকেলে সোনারগাঁও হোটেলে গিয়ে তারা মোদির সঙ্গে সাক্ষাত করেন। সাক্ষাতকালে দেশে গণতন্ত্র নেই বলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে নালিশ করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে তিনি ভারতের সহযোগিতা চেয়েছেন। এছাড়া বিরোধী দলের ওপর সরকার চরম অত্যাচার নির্যাতন করছে বলেও জানান তিনি। সাক্ষাত শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও গণতন্ত্রের অনুপস্থিতি নিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার আলোচনা হয়েছে। সাক্ষাতকালে অত্যন্ত আন্তরিক পরিবেশে সুন্দর আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ সাক্ষাত আমাদের জন্য ইতিবাচক। আমরা দেশের গণতন্ত্র অনুপস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেছি। এক প্রশ্নের জবাবে মঈন খান বলেন, মোদির সঙ্গে সাক্ষাতে তাঁরা দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্কের প্রতিটি বিষয় তুলে ধরেছেন। তবে সবচেয়ে গুরুত্ব পেয়েছে দেশের গণতন্ত্রের অনুপস্থিতির বিষয়টি। তিনি বলেন, দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন গণতন্ত্র ও জবাবদিহিতা। মোদি তাঁদের কথার পরিপ্রেক্ষিতে কিছু বলেছেন কি না জানতে চাইলে মঈন খান বলেন, এ প্রশ্নের জবাব তাঁরাই দেবেন। মঈন খান বলেন, আমরা ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি সরকার আসবে, সরকার যাবে, কিন্তু দেশের মানুষ দেশেই থাকবে। একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আস্থার ওপর প্রতিষ্ঠিত করতে হলে দুই দেশের মানুষের মধ্যে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। তিনি বলেন, মোদির সঙ্গে খালেদা জিয়ার কথা হয়েছে দেশের উন্নয়ন নিয়ে। বিশেষ করে দেশের শিশু ও যুবকদের নিয়ে। সর্বোপরি কথা হয়েছে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে। আমরা বলেছি এখন নরেন্দ্র মোদি দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নের প্রতি যেভাবে জোর দিয়েছেন তা বাস্তবায়ন করতে হবে। উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের ভিত্তি শক্তিশালী করতে হবে। এক প্রশ্নের জবাবে মঈন খান বলেন, যারা বলেন উন্নয়ন আগে গণতন্ত্র পরে তাদের কথা বাস্তব সম্মত নয়। দেশে গণতন্ত্র, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা, মানবাধিকার এবং প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরপেক্ষ না থাকে তাহলে উন্নয়ন কোন কাজে আসবে না। তাই দেশে গণতন্ত্র এবং সবার জন্য সমান সুযোগ থাকতে হবে। এ বিষয়গুলো নিয়ে আমরা মোদির সঙ্গে কথা বলেছি। বিকেল ৪টা ৫ মিনিট থেকে শুরু করে প্রায় ৪০ মিনিটব্যাপী চলে নরেন্দ্র মোদি ও খালেদা জিয়ার সাক্ষাত অনুষ্ঠান। এর মধ্যে প্রায় ১০ মিনিট মোদি-খালেদার একান্ত আলাপচারিতা হয়। সাক্ষাতকালে খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, ড. আব্দুল মইন খান, নজরুল ইসলাম খান, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান ও সাবিহউদ্দিন আহমেদ। এর আগে বিকেল পৌনে ৩টায় গুলশানের বাসা থেকে রওনা দিয়ে পৌনে ৪টায় সোনারগাঁও হোটেলে পৌঁছেন খালেদা জিয়া। নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাত শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে রওশন এরশাদ বলেন, তিস্তা চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশকে আরও ধৈর্য ধরতে হবে বলে জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি আরও বলেছেন, দুই দেশ ঐক্যবদ্ধ ও আন্তরিকভাবে চেষ্টা চলাতে পারলে পর্যায়ক্রমে সব সমস্যার সমাধান হবে। তিস্তাসহ অভিন্ন ৫৪টি নদীর সমস্যা সমাধান হবে ধীরে ধীরে। এজন্য আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে। দুই দেশের সম্পর্কের উন্নয়ন হলে আমাদের দেশও এগিয়ে যাবে। এক প্রশ্নের জবাবে রওশন এরশাদ বলেন, ৬৮ বছরের ছিটমহল সমস্যা সমাধান ও সীমান্ত চুক্তি করায় আমরা ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছি। নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে অত্যন্ত আন্তরিকতাপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। আশা করছি স্থল সীমানা চুক্তি হয়েছে তাই তিস্তা চুক্তিও হবে। তিস্তা নিয়ে মোদি বলেছেন, এটা রাজ্য সরকারগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ধীরে ধীরে সমাধান করা হবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মোদির সঙ্গে অনেক কথা হয়েছে। তবে রাজনীতি নিয়ে কোন আলোচনা হয়নি। বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে হোটেল সোনারগাঁওয়ের সুরমা হলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে রওশন এরশাদের সাক্ষাত শুরু হয়। তা চলে প্রায় ২৫ মিনিট। সাক্ষাতকালে নরেন্দ্র মোদিকে স্বর্ণের কোটপিন পরিয়ে দেন রওশন এরশাদ। এ সময় রওশন এরশাদের সঙ্গে ছিলেন জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় চীফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ, ফখরুল ইমাম ও সেলিম উদ্দিন। রওশন এরশাদের পর নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাত করেন জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। মোদিকে ধুতি তার মাকে জামদানি শাড়ি দিয়েছেন খালেদা ॥ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধুতি ও তাঁর মায়ের জন্য জামদানি শাড়ি উপহার দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। রবিবার বিকেলে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় দূতাবাসে খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে এ উপহারসমূহ পৌঁছে দেয়া হয়েছে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে।
×