ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আঞ্চলিক যোগাযোগ রফতানি বাণিজ্য সম্প্রসারণ বিনিয়োগ বৃদ্ধি

ভারতের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে তিন বিষয়ে গুরুত্ব

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৮ জুন ২০১৫

ভারতের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে তিন বিষয়ে গুরুত্ব

এম শাহজাহান ॥ তিন বিষয় সামনে রেখে বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছে সরকার। এগুলো হচ্ছে-আঞ্চলিক যোগাযোগ, রফতানি বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি। আঞ্চলিক যোগাযোগ বা কানেকটিভিটির আওতায় ভারতের ভূখ- ব্যবহার করে ভুটান ও নেপালে পণ্য সরবরাহ করতে পারবে বাংলাদেশ। একইভাবে ভারত বাংলাদেশের ভূখ- ও বন্দর ব্যবহারের সুযোগ নিয়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য পাঠাতে পারবে। এজন্য বাংলাদেশকে নির্দিষ্ট হারে মাশুল প্রদান করবে ভারত। বাণিজ্য চুক্তির আওতায় ভারতে রফতানি বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হবে। ভারতের সঙ্গে বড় অঙ্কের যে বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে তা দূর হবে রফতানি বাণিজ্যের মাধ্যমে। এছাড়া জ্বালানি ও সেবাসহ বিভিন্ন খাতে ভারতের বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা। প্রস্তাবিত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে এই বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণে ১০টি বর্ডার হাট চালু করতে যাচ্ছে সরকার। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ-মেঘালয় সীমান্তে ৩টি বর্ডার হাট চালু করা হয়েছে। বাংলাদেশ-ত্রিপুরা সীমান্তে আরও তিনটি হাট স্থাপনের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়া আরও চারটি বর্ডার হাট স্থাপনে দুই দেশের পক্ষ থেকে সম্মতি দেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রস্তাবিত বাজেট সংসদে পাস হওয়ার পর আগামী বছরের মধ্যে ভারতের সঙ্গে ১০টি বর্ডার হাট চালু হবে। এসব হাট চালু হলে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও বাড়বে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। শুধু তাই নয়, বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ঘোষণা করেছেনÑ বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের উপস্থিতি ও তৎপরতা দৃশ্যমান করার লক্ষ্যে সরকার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় কূটনৈতিক সাফল্য হলো ভারতীয় সংসদে স্থলসীমান্ত বিল অনুমোদন। এর ফলে ছিটমহলবাসীর দীর্ঘদিনের সমস্যার সমাধান হতে যাচ্ছে। ছিটমহলবাসীরা সম্পৃক্ত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল ধারায়। এর ফলে দেশের উন্নয়ন কর্মকা-ের পরিধি ছিটমহল পর্যন্ত সম্প্রসারিত হবে। এবারের বাজেটে তাই তাদের এলাকার উন্নয়নের কথা বিবেচনায় নিয়ে সরকার ২০০ কোটি টাকার অতিরিক্ত বরাদ্দ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তিনি বলেন, রফতানি দ্রব্য বৈচিত্র্যকরণে তৈরি পোশাক খাতের পাশাপাশি সম্ভাবনাময় অন্যান্য শিল্প ও সেবা খাতে প্রণোদনা প্রদানের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে চীন ও ভারতের শক্তিশালী অবস্থান এবং আমাদের ভৌগোলিক নৈকট্য বিবেচনায় নিয়ে এসব দেশের সঙ্গে আঞ্চলিক যোগাযোগ, রফতানি বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রচেষ্টা জোরদার করা হবে। সূত্র মতে, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের উদ্যোগে বাংলাদেশ, ভুটান, নেপাল এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ ও বাণিজ্য সম্প্রসারণে একটি প্রকল্প আন্তঃদেশীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্র প্রসারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়া প্রতিবেশী অন্যান্য রাষ্ট্রের সঙ্গে আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার করার লক্ষ্যে সার্ক, বিমসটেক, ডি-৮, ওআইসি, ন্যাম প্রভৃতি ফোরামের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন, জাতিসংঘ এবং অন্যান্য ফোরামে কার্যকর অংশগ্রহণ ও গঠনমূলক অবদানের মাধ্যমে দেশকে একটি প্রতিশ্রুতিশীল রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে সরকার। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ৫৪টি নদ-নদীর পানি বণ্টন এবং ব্যবস্থাপনার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও রফতানি বহুমুখীকরণের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। সার্ক এগ্রিমেন্ট অন ট্রেড ইন সার্ভিসেসের আওতায় সেবা খাত উন্মুক্ত করার লক্ষ্যে সদস্য দেশসমূহের সিডিউল অব কমিটমেন্টস চূড়ান্ত করা হয়েছে। চুক্তিটি বাস্তবায়িত হলে সেবা খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে এবং এ খাতে দেশের বিনিয়োগ অনেক বাড়বে। এছাড়া ওআইসিভুক্ত দেশসমূহের সমন্বয়ে গঠিত টিপিএস-ওআইসি’র আওতায় বাংলাদেশ সম্প্রতি ৪৭৬টি পণ্যের অফার লিস্ট প্রেরণ করেছে। চুক্তিটি বাস্তবায়িত হলে এলডিসি দেশ হিসেবে শিথিল রুলস্ অব অরিজিনের সুবিধা কাজে লাগিয়ে অন্যান্য সদস্য দেশে রফতানি বাড়াতে সক্ষম হবে। জানা গেছে, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতিতে বেশ কিছু অন্তরায় রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- শুল্ক ও অশুল্কজনিত সমস্যা, কিছু পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারছে না বাংলাদেশ। এছাড়া স্থলবন্দরগুলোর অবকাঠামো উন্নয়ন না হওয়া, কাস্টমস হাউসগুলোর আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থার সঙ্কট, ভিসা প্রাপ্তির জটিলতা না কাটা, ব্যবসায়ীদের জন্য মাল্টিপল ভিসা প্রদান বন্ধ থাকা, সীমান্ত হাটগুলো পুরোমাত্রায় চালু না হওয়া, বিএসটিআই ও বিআরটিএ’র ল্যাবরেটরি টেস্টের স্বীকৃতি না দেয়া এবং ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপীর অব্যাহত দরপতনে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ কমেছে না। তবে এসব বাধাগুলো দূর করতে পারলে দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি ৪১৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের অনুকূলে নয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর এবং বাণিজ্য চুক্তি নবায়নের আওতায় এই বাণিজ্য ঘাটতি দ্রুত কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
×