ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গণসঙ্গীতের প্রসারে গণমাধ্যমকে এগিয়ে আসতে হবে ॥ ফকির সিরাজ

প্রকাশিত: ০৪:৪৯, ৮ জুন ২০১৫

গণসঙ্গীতের প্রসারে গণমাধ্যমকে এগিয়ে আসতে হবে ॥ ফকির সিরাজ

গণসঙ্গীতশিল্পী ফকির সিরাজ। দেশের আন্দোলন সংগ্রামে গণসঙ্গীতকে হাতিয়ার করে সাধারণ মানুষকে উজ্জীবিত ও সোচ্চার করেছেন। এ সঙ্গীত নিয়ে তাঁর নিত্য পথচলা আজও অব্যাহত। তিনি বাংলাদেশ গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদের সম্পাদকম-লীর সদস্য। পরিষদের আয়োজনে ‘বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা গণসঙ্গীত উৎসব’ শুরু হচ্ছে আজ। বৃহত্তর রাজশাহীতে এ উৎসব শুরু হবে আগামী ১০ জুন। এবারের উৎসব ও গণসঙ্গীতের বর্তমান প্রেক্ষাপট নিয়ে গুণী এই শিল্পীর সঙ্গে কথা হয় । এবারের উৎসব সম্পর্কে বলুন ফকির সিরাজ: ‘ছিড়ে ফেল দৃঢ় হাতে চক্রান্তের জাল’ প্রতিপাদ্য নিয়ে রাঙ্গামাটি নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে শুরু হচ্ছে দুই দিনব্যাপী এ উৎসব। বিকেল ৫ টায় উৎসবের উদ্বোধন করবেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। প্রধান অতিথি থাকবেন চাকমা রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়, বিশেষ অতিথি আমাকে রাখা হয়েছে। উৎসবে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবন ও ঢাকার বহ্নিশিখার শিল্পীরা গণসঙ্গীত পরিবেশন করবে। রাজশাহীর ভুবন মোহন পার্ক প্রাঙ্গণে আগামী ১০ জুন বিকেল ৫টায় দুই দিনব্যাপী উৎসবের উদ্বোধন করবেন কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক। প্রধান অতিথি থাকবেন জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও ঢাকার গণসঙ্গীত দল সঙ্গীত পরিবেশন করবে। এবারের উৎসবের উদ্দেশ্য কি? ফকির সিরাজ : গণসঙ্গীত সবসময় অন্যায়ের প্রতিবাদ, অধিকার আদায়ে সোচ্চার হওয়ার কথা বলে। এবারও তা থেকে বিচ্যুত হবে না। আমাদের উদ্দেশ্য হলো অসাম্প্রদায়িক চেতনায় মানুষকে সোচ্চার করে তোলা। সেইসঙ্গে সম্প্রতি দুর্বৃত্তদের পরিকল্পনায় প্রগতিশীল মুক্তমনা মানুষের ওপর যে আঘাত আসছে, তাদের বেছে বেছে হত্যা করা হচ্ছে-এ অসুরীয় কর্মকা-ের বিরুদ্ধে জনগণকে সোচ্চার করা এবং নারীর ওপর যে নির্যাতন হচ্ছে তার প্রতিবাদও এ উৎসবে গানে ও কথায় বিশেষ ভূমিকা রাখবে। বর্তমানে বাংলাদেশে গণসঙ্গীতের অবস্থান কেমন? ফকির সিরাজ : কোন এক সময়ে গণসঙ্গীতের সোনালি দিন ছিল। এর প্রমাণ আমরা পাই ’৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে। সে সময়ে গণসঙ্গীতের ভূমিকা ছিল অগ্রে। সে সময়ের অনেক শিল্পী এখন নেই, যাঁরা আছেন তাঁদের কেউ কেউ বিভ্রান্ত হচ্ছেন বিভিন্নভাবে। সে অর্থে কিছুটা হলেও এর দীনতা যাচ্ছে এটা স্বীকার করতে হচ্ছে। ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় গণসঙ্গীত কি আগের মতো ভূমিকা রাখতে পারছে? ফকির সিরাজ : আমাদের দেশে অন্যান্য সঙ্গীতকে বেনিয়ারা বা পুঁজিপতিরা যেভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করছে, গণসঙ্গীতের ক্ষেত্রে এটা নাই। দেশের বিভিন্ন টিভি চ্যানেল বা মঞ্চে গণসঙ্গীতের কোন অনুষ্ঠান হয় না। ফলে নতুনরা গণসঙ্গীতের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। এক্ষেত্রে বলাযায় কিছুটা হলেও এ সঙ্গীত পিছিয়ে পড়েছে। এখন আগের মতো গণসঙ্গীত উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রাখতে পারছে না। গণসঙ্গীতকে নিজস্ব ধারায় এগিয়ে নিতে করণীয় কি? ফকির সিরাজ : গণসঙ্গীতের মূল আবেদন হারিয়ে যায় নি। তবে শুধুমাত্র উৎসব করেই গণসঙ্গীতকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। গণসঙ্গীতের প্রচার ও প্রসারে বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমকে এগিয়ে আসতে হবে। নতুন প্রজন্মের মধ্যে এ সঙ্গীতের তাৎপর্য তুলে ধরতে হবে। গণসঙ্গীত লেখা ও সুর করার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে। বিভিন্ন সেমিনার ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। সংগঠনের পক্ষ থেকে গণসঙ্গীত নিয়ে আগামী পরিকল্পনা কি? ফকির সিরাজ : আমরা বাংলাদেশ গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদের পক্ষ থেকে এ বছর স্বরলিপিসহ একটি গণসঙ্গীতের বই প্রকাশ করব। যেখানে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে যেসব গান মানুষকে উজ্জীবিত ও সোচ্চার করেছিল সেগুলো থাকবে। এছাড়া এ বছরই দেশের ৭টি বিভাগে গণসঙ্গীতের ওয়ার্কসপ করব। নতুন প্রজন্মের জন্য পরিষদ কি অবদান রাখতে চায়? ফকির সিরাজ : দেশের নতুন প্রজন্ম হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তারাই আগামী দিনের ভবিষ্যত। আমরা চেষ্টা করছি গণসঙ্গীতের প্রতি তাদের সচেতনতা বাড়ানোর। দেশের সুন্দর সোনালি দিনের আগমনী বার্তা বয়ে আনবে গণসঙ্গীত। আমাদের চেষ্টা থাকবে দেশের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে গণসঙ্গীত শেখানো এবং এর প্রতি আকৃষ্ট করা। -গৌতম পান্ডে
×