ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মৌসুমী বায়ু প্রবেশ করেছে টেকনাফ উপকূলে

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ৭ জুন ২০১৫

মৌসুমী বায়ু প্রবেশ করেছে টেকনাফ উপকূলে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মিয়ানমারে কয়েক সপ্তাহ অবস্থান করার পর শনিবার দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু (বর্ষা) বাংলাদেশের টেকনাফ উপকূল পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে। আগামী তিন দিনে এটি চট্টগ্রাম উপকূল পর্যন্ত অগ্রসর হতে পারে। তবে মৌসুমী বায়ু উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে দুর্বল হয়ে পড়েছে। দেশে জুন মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। শনিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেলেও দাবদাহ ও মানুষের দুর্ভোগের মাত্রা কমেনি। দেশের সর্বত্র অনুভূত হয় তীব্র গরম। বৃষ্টির দেখা নেই দেশের কোথাও। মাঝে মাঝে বয়ে যাওয়া ঠা-া বাতাসেই প্রশান্তি পাওয়ার চেষ্টা করছে মানুষ। রাজধানী ও সারাদেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য নেই। কাঠফাটা রোদ ও তীব্র গরমে নাজেহাল দেশবাসী এখন বৃষ্টির অপেক্ষায়। তাপপ্রবাহ, আর্দ্রতার দাপট ও বৃষ্টিশূন্যতাই গরমের তীব্রতা বৃদ্ধির পেছনে ভূমিকা রাখছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। জুনে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হবে দুটি মৌসুমী নিম্নচাপ। নদীর প্রবাহ স্বাভাবিক থাকবে। তবে মাসের শেষার্ধে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলের কারণে আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। এবার দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর (বর্ষা) আগমন ও গতি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন খোদ আবহাওয়াবিদরা। এক সপ্তাহ আগে বাংলাদেশ ও ভারতীয় আবহাওয়াবিদরা বলেছিলেন, এবার নির্ধারিত সময়ের আগেই বর্ষার আগমন ঘটবে। কিন্তু তা বাস্তবে রূপ নেয়নি। শুক্রবার ভারতের কেরলে ঢুকেছে বর্ষা। রাতেই তা ছড়িয়ে গেছে দক্ষিণ ভারতের একাংশে। পশ্চিমবঙ্গের চিত্র আলাদা। বৃষ্টি নেই, বিরাজ করছে তীব্র গরম। একই অবস্থা বাংলাদেশেরও। নাকাল করা গরম থেকে রেহাই পেতে টানা বর্ষাই একমাত্র ভরসা। কিন্তু সেই বর্ষা কবে বাংলাদেশে আসবে, তার হিসাব করতে গিয়েই বিপাকে পড়েছেন আবহাওয়াবিদরা। তবে কয়েক সপ্তাহ ধরে মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনে অবস্থান করার পর বাংলাদেশের টেকনাফ পর্যন্ত দক্ষিণ- পশ্চিম মৌসুমী বায়ু অগ্রসর হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিস। টেকনাফে প্রবেশ করার পরও স্বস্তি পাচ্ছেন না আবহাওয়াবিদরা। এবার আশঙ্কা জন্মেছে মৌসুমী বায়ুর বিস্তার হওয়ার গতি নিয়ে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে আগমন না ঘটলে বাংলাদেশের মৌসুমী বায়ুও গতি পাবে না। কোথাও থমকে যেতে পারে। বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিস ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে, জুনে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টি হবে। এই অবস্থার সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের আলিপুর আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তাদের কথার বেশ মিল রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বর্ষা কবে আসবে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। তবে তার যে দেরি হবে, সেটা নিশ্চিত। আবহাওয়াবিদদের একাংশ বলছেন, কিছুদিন ধরে প্রশান্ত মহাসাগরের জলের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি রয়েছে। সমুদ্রবিজ্ঞান একেই বলে ‘এল নিনো’। এল নিনো পরিস্থিতি বর্ষার ওপর খারাপ প্রভাব ফেলে। দুর্বল করে দেয় মৌসুমী বায়ুকে। এবার সেই পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় বর্ষার আগমন ছন্দটাই নষ্ট হয়ে গেছে। তবে ভারতের আবহওয়া অফিস জানায়, কেরল দিয়ে মূল ভারতীয় ভূখ-ে ঢুকে পড়েছে বর্ষা। পরে সংলগ্ন তামিলনাড়ু এবং কর্ণাটকের একাংশেও ছড়িয়ে পড়েছে। দু’সপ্তাহ মিয়ানমারে আটকে থাকার পরে উত্তর-পূর্ব ভারতের দিকেও সরে এসেছে মৌসুমী বায়ু। আবহাওয়া বিজ্ঞানীদের পূর্বাভাস, মিয়ানমার হয়ে দিন দুয়েকের মধ্যে উত্তর-পূর্বে ঢুকে পড়তে পারে বর্ষা। সেদিক থেকে বর্ষণ আশা করতে পারে উত্তরবঙ্গও। তবে বিজ্ঞানীদের একাংশ বলছেন, এবার মৌসুমী বায়ু খুব জোরালো নয়। তাই উত্তর-পূর্ব ভারতে ঢোকার পরের দিনই বর্ষা উত্তরবঙ্গে ঢুকবে, নাকি ফের থমকে যাবে, তা নিশ্চিত নয়। এদিকে, রাজধানীর আকাশেও স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত নেই। দিনের অধিকাংশ সময় পড়ছে তীব্র রোদ। গরমে অতীষ্ঠ নগরবাসী। ঘন ঘন লোডশেডিং বাড়িয়ে দিচ্ছে দুর্ভোগের মাত্রা। ব্যাহত হচ্ছে নগরবাসীর স্বাভাবিক কাজকর্ম। প্রখর রোদ উপেক্ষা করেই চলতে হয় পথচারীকে। এত অস্বাভাবিক গরমে পরিবহনগুলোর ভেতরের তপ্ত পরিবেশে অস্থির হয়ে ওঠে যাত্রীরা। দাবদাহে জর্জরিত মানুষের কাছে বেড়ে যায় ঠা-া পানীয়ের চাহিদা। ঢাকার গত কয়েকদিনের তাপমাত্রা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস থেকে ৩৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে থাকছে। আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৮ থেকে ২৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড হচ্ছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, তাপমাত্রা যদি বেশি থাকে, সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য কমে আসে, তাহলে গরমের তীব্রতা বেশি অনুভূত হবে। বর্তমানে ঢাকায় এমন অবস্থাই বিরাজ করছে। ঢাকার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য হ্রাস পেয়ে ৬ থেকে ৭ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে থাকছে। শুধু তাই নয়, রাজধানীসহ শহুরে এলাকার জন্য সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যদি ৩৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ২৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস থাকে তা হলে অনেকটাই দুর্বিষহ অবস্থা সৃষ্টি করে। বর্তমানে রাজধানীবাসীকেও এমন বিরূপ আবহাওয়া ও ইট-পাথরের প্রতিকূল অবস্থায় পড়ে চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।
×