ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

শিল্পকলায় তির্যক নাট্যমেলা, চার নাট্যজনকে সম্মাননা

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ৭ জুন ২০১৫

শিল্পকলায় তির্যক নাট্যমেলা, চার নাট্যজনকে সম্মাননা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চট্টগ্রামের নাট্যদল তির্যক। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে ১৯৭৪ সালে পথচলা শুরু করে দলটি। সময়ের ধাবমানতায় তির্যক অতিক্রম করেছে প্রতিষ্ঠার চার দশক। আর দলের ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে নেয়া হয় বছরব্যাপী কর্মসূচী। সেই ধারাবাহিকতায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে শুরু হয় দুই দিনব্যাপী তির্যক নাট্যমেলা। শনিবার সমাপনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শেষ হলো বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালা। নাটকের পাশাপাশি নানা আয়োজনে মুখরিত সমাপনী সন্ধ্যায় চার নাট্যজনকে প্রদান করা হয় সম্মাননা। তাঁরা হলেন রামেন্দু মজুমদার, আতাউর রহমান, মামুনুর রশীদ ও নাসির উদ্দিন ইউসুফ। তাঁদের হাতে সম্মাননা তুলে দেন অধ্যাপক ড. অনুপম সেন। অনুপম সেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। সঞ্চালনা করেন তির্যকের দল প্রধান আহমেদ ইকবাল হায়দার। সভাপতির বক্তব্যে অনুপম সেন বলেন, ষাটের দশকের শুরুতে যেসব স্বপ্ন নিয়ে আন্দোলন শুরু হয়েছিল তার অনেকেই স্তিমিত হয়ে গেলেও একটি ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব পায় সেটা হলো নাট্যচর্চা। আর এই নাট্যচর্চার সঙ্গে যারা শুরু থেকে আজ অবধি কাজ করে যাচ্ছেন তাঁরা হলেন আজকের সম্মাননাপ্রাপ্তরা। এর আগে বিকেলে নাট্যশালার বাইরে আঙিনায় চট্টগ্রামের লোকগান পরিবেশন করে দলের শিল্পীরা। সেই লোকজ সুরে মেতে ওঠে শ্রোতারা। পরিবেশিত হয় ‘বাছা ঘুম যারে তুই’, ‘মনু মিয়ার দ্যাশেরে বিয়ার বাদ্যবালা বাজেরে’ ও বিখ্যাত গান ‘লুসাই পাহাড়ত্তুন নামিয়েরে যারগই কর্ণফুলী’সহ অনেক গান। লোকগানের পরিবেশনা শেষে নাট্যশালায় প্রদান করা হয় সম্মাননা। সব শেষে মঞ্চস্থ হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত তির্যকের নাটক রক্তকরব। প্রযোজনাটির নির্দেশনা দিয়েছেন আহমেদ ইকবাল হায়দার। পুঁজিবাদী সমাজের অন্তঃসারশূন্যতার বার্তা প্রকাশিত হয় নাটকের গল্পে। শৃঙ্খলিত মানুষের গুহার ভেতরেই চলাচল করে। বন্দীত্তমার আর্তনাদে সময় যেন-বা থামকে দাঁড়ায়। অতৎপর একদিন রক্ত জরে পড়া দেহের কালশিটে দাগে মর্মের বেড়িগুলো গারদের সীমানা ভেঙে চূর্ণ হয়ে যায়। রাজার রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে মুক্তির মন্ত্রণা শোনায় নন্দিনী। তাই বাধা ও বন্ধন টুঁটে অবশেষে কল্যাণ বেরিয়ে আসে পথে-প্রান্তরে। পৌষের নবান্ন একে ডাক দিয়ে যায়। পরাভূত হয় সর্বশক্তির অশুভ রাজন। প্রযোজনায় নন্দিনী চরিত্রে অভিনয় করেছেন শায়লা শারমিন। এছাড়া অন্যান্য চরিত্রে রূপ দিেেছন অমিত চক্রবর্তী, রিপন বড়ুয়া, সুজিত চক্রবর্তী, জুয়েল চাকমা প্রমুখ। লেখিকা সংঘ সাহিত্য পদক ও গুণীজন সংবর্ধনা ॥ শনিবার সকাল দশটা। বাইরে যখন প্রখর রোদ তখন জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে বিরাজ করছিল ভিন্নরকম পরিবেশ। নারী লেখকদের আনাগোনায় মুখরিত হয়ে ওঠে মিলনায়তন। চারপাশ থেকে উচ্চারিত হচ্ছিল সাহিত্যবিষয়ক নানা ভাবনা কিংবা কথা। আর এমন দৃশ্যের উপলক্ষ্য ছিল বাংলাদেশ লেখিকা সংঘের ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। সাহিত্য পদক, গুণীজন সংবর্ধনা ও আলোচনা দিয়ে সাজানো হয় অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. ফারজানা ইসলাম, বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক ও শিক্ষাবিদ ড. নিয়াজ জামান। সভাপতিত্ব করেন লেখিকা সংঘের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দিলারা মেস্বাহ। বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক লিপি মনোয়ার। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ভাষাসংগ্রামী ও লেখক আহমদ রফিক। অনুষ্ঠানে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত করা হয় লেখিকা সংঘের সাবেক সভাপতি প্রয়াত নয়ন রহমানকে। কবি তাইবুন নাহার রশীদ স্বর্ণপদক প্রদান করা হয় কবি জাহানারা আরজুকে। তাঁর পরিচিত পাঠ করে কথাশিল্পী জুবাইদা গুলশান আরা। বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ সাহিত্য পদক পেয়েছেন কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, জামিল আখতার বীনু ও সুফিয়া রহমানকে। সাহিত্য সংবর্ধনা প্রদান করা কবি মমতাজ জাহান করিমকে। এছাড়াও তরুণ লেখক সৃষ্টির প্রকল্প মেধাবী মুখ প্রবন্ধ প্রতিযোগিতার প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিজয়ী প্রতিযোগীকে পুরস্কার প্রদান করা হয়। প্রধান অতিথির বক্তব্যে আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ঐতিহ্যবাহী এই সংগঠনটি দীর্ঘদিন ধরে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ভূমিকা রাখছে নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে। আর এই সাহিত্য পদক প্রদানের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত করছে নারী লেখকদের। এর মাধ্যমে সম্মানিত হচ্ছেন সৃষ্টিশীল লেখিকারা। আর এই সংঘের মাধ্যমে শুধু নারীর কল্যাণ নয়, এগিয়ে নিয়ে যেতে মানবিক বোধের সমাজকে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শামসুজ্জামান খান বলেন, অনেক সমস্যাসংকুল পথ অতিক্রম করে এগিয়ে চলেছে এই সংগঠনটি। ১৯৭৩ সালে যাত্রা শুরু করা নারী লেখিকীদের এই সংঘ উদাহরণ হিসেবে আজও অটুট রয়েছে। কারণ, অনেক সংগঠন গড়ে উঠলেও শেষ পর্যন্ত আর টিকে থাকে না। সংস্কৃতির জাগরণ হিসেবে এই সাহিত্য সংগঠনটি এতদিন ধরে চলছে।
×