ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থায়ন ও বাস্তবায়নের ওপরই বাজেটের সাফল্য নির্ভর করে

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৭ জুন ২০১৫

অর্থায়ন ও বাস্তবায়নের ওপরই বাজেটের সাফল্য নির্ভর করে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ প্রস্তাবিত বাজেটকে ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব আখ্যা দিয়ে ব্যবসায়ীদের শীর্ষক সংগঠন এফবিসিসিআই বলছে, অর্থায়ন ও বাস্তবায়নের ওপরই নির্ভর করছে বাজেটের সাফল্য। এ জন্য বেসরকারী খাতের ঋণ প্রাপ্তির চ্যালেঞ্জ দক্ষতার সঙ্গে মোকাবেলা করতে হবে। কেননা, ব্যাংক ঋণের ওপর সরকারের নির্ভরতা বাড়লে বেসরকারী খাতের ঋণপ্রাপ্তিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। শনিবার রাজধানীর মতিঝিলে ফেডারেশন ভবনে অনুষ্ঠিত বাজেট পরবর্তী সাংবাদিক সম্মেলনে সংগঠনের নবনির্বাচিত সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমাদ মূল বক্তব্য তুলে ধরেন। এ সময় এফবিসিসিআইয়ের বেশিরভাগ দাবি বাজেটে প্রতিফলিত হওয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি রফতানিতে উৎসে কর আগের হারে রাখাসহ কয়েকটি বিষয়ে নজর দেয়ার আহ্বান জানান তিনি। মাতলুব আহমাদ বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি বাজেট ৮৬ হাজার ৬৫৭ কোটি। যা জিডিপির ৫ শতাংশ। এ ঘাটতি মেটাতে ৫৬ হাজার ৫২৩ কোটি অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সংগ্রহ করা হবে। এর মধ্যে ব্যাংক ঋণ থেকে ৩৮ হাজার কোটি ৫২৩ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হবে। এতে বেসরকারী খাতে ঋণ প্রাপ্তিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আবার বাজেট ঘাটতির অর্থসংস্থান যথাযথভাবে না হলে উন্নয়ন কার্যক্রম ব্যাহত হবে। সরকারকে এ দক্ষতার সঙ্গে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। এফবিসিসিআইএর সভাপতি বলেন, জিডিপি প্রবৃদ্ধির হারকে ৭ শতাংশের ওপরে নিতে হলে বিনিয়োগ বাড়াতেই হবে। জিডিপিতে বেশি অবদান বেসরকারী খাতের। সে জন্য বেসরকারী খাতকে উৎসাহিত করতে অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমাতে হবে। সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে না আনলে শিল্পায়ন সম্ভব নয়। বাজেটে ব্যবসায়ীদের বেশিরভাগ দাবি মেনে নেয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই প্রথমবারের মতো বেশিরভাগ প্রস্তাব মেনে নিয়েছে। আমরা যা চেয়েছি মোটামুটি বাজেট পেপারে তা এসেছে। এ জন্য এবারের বাজেট নিয়ে তেমন হৈ চৈ নেই। অর্থাৎ সরকার এফবিসিসিআইকে গুরুত্ব দিয়েছে। অর্থবছরের শুরু থেকেই বাজেট তদারকি জোরদার করার দাবি জানিয়ে সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়, অর্থায়ন ও ব্যয় সঠিকভাবে করতে না পারায় প্রতি বছরই বাজেট সংশোধন করতে হয়। এতে আর্থিক অব্যবস্থাপনার সৃষ্টি হতে পারে। এ জন্য বছরের শুরু থেকেই তদারকি জোরদার করা জরুরী। চলতি অর্থবছর রাজস্বের বড় লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যবসায়ের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ ও ব্যবসাবান্ধব রাজস্ব আদায় প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়। বাজেটে কৃষি ও শিল্প ও জ্বালানি খাতের কিছু পণ্য ও কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক ও কর ছাড় দেয়ায় এফবিসিসিআইর পক্ষ থেকে সন্তোষ জানানো হয়। একই সঙ্গে গার্মেন্টসসহ সব ধরনের রফতানি পণ্যের রফতানির উৎসে কর বাড়ানোর বিরোধিতা করা হয়। গার্মেন্টস খাত এবার সরকারকে ফেরত দেয়ার সময় এসেছে- অর্থমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আরও ২-৩টা বছর সময় দিন। অবশ্যই ফেরত দেবে। সব রফতানি খাতকে এ সুযোগ দিন। তাতে দেশের জন্য ভাল হবে। অবশ্য বাজেট বস্ত্র খাতবান্ধব নয়- বিজিএমইএর এমন মন্তব্যের প্রসঙ্গে মাতলুব আহমাদ বলেন, বাজেট বস্ত্র খাতবান্ধব নয়- এ বক্তব্য অগ্রহণযোগ। বরং তারা বলতে পারতেন বাজেট রফতানি খাতবান্ধব নয়। তবে প্রস্তাবিত বাজেটে করদাতাদের ওপর বাড়তি করের চাপ পড়বে না বলে মনে করেন এফবিসিসিআই সভাপতি। তিনি বলেন, করের আওতা বাড়ানো উচিত। অন্তত ১ কোটি মানুষ কর দেয়া উচিত। অথচ মাত্র কয়েক লাখ লোক কর দেন। পকেটে টাকা আছে কিন্তু ট্যাক্স দিচ্ছি না। এটি লজ্জাজনক। সরকার স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছে যাদের টাকা আছে তারা যাতে কর দেন। বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির বাজেট পর্যালোচনা প্রসঙ্গে মাতলুব আহমাদ বলেন, সিপিডি ব্যবসা করে না। আমরা ব্যবসা করি। আমরা বুঝি কোথায় ব্যথা লাগে, কোথায় লাগে না। সরকারের কাছ থেকে বিদ্যুতের নিশ্চয়তা পেয়েছি। এটা পেলে স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে ব্যবসা করতে পারব। এ সময় জেলায় জেলায় কিডনি ও ক্যান্সার হাসপাতাল করতে সরকারকে শুল্ক ও কর ছাড় দেয়ার দাবি জানান তিনি। জেলায় জেলায় কিডনি, ক্যান্সার হাসপাতাল করার জন্য করমুক্ত রাখা, শিক্ষা খাতে ১০ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার, সুপারশপের ভ্যাট ৪ শতাংশ থেকে আগের মতো ২ শতাংশ রাখা, সকল রফতানির ওপর উৎসে কর একই করার আহ্বান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি। মাতলুব আহমাদ বাজেটে দেশীয় শিল্পকে সহযোগিতায় করায় সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, শিল্পের কাঁচামালের ক্ষেত্রে অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহার, ট্রেজারি বন্ড ও বিলের ওপর থেকে ৫ শতাংশের শুল্ক প্রত্যাহার পরিবর্তে ১ শতাংশ করা দরকার। সাংবাদিক সম্মেলনে এফবিসিসিআইর উর্ধতন সহ-সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, সরকার ব্যাংক খাত থেকে বড় ঋণের লক্ষ্য নিয়েছে। অন্যদিকে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নতুন বেতন বাস্তবায়ন হচ্ছে জুলাই থেকে। এ অবস্থায় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা চ্যালেঞ্জ হবে। ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে গড়তে মোবাইল ফোন গ্রাহকদের ওপর বাড়তি কর আরোপ না করারও আহ্বান জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে এফবিসিসিআই পরিচালক দীলিপ কুমার আগরওয়াল, হাবিবুল্লাহ ডন, গাজী গোলাম আসরিয়া, বজলুর রহমান, আমীন হেলালী, মোহাম্মদ মাসুদ, শেখ ফজলে ফাহিম উপস্থিত ছিলেন।
×