ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রাথমিক পর্যায়ে এক হাজার ৬ ইউনিয়ন নেটওয়ার্কে যুক্ত হচ্ছে

ফের ফাইবার অপটিক্যাল কেবল নেটওয়ার্কের কাজ শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ৭ জুন ২০১৫

ফের ফাইবার অপটিক্যাল কেবল নেটওয়ার্কের কাজ শুরু

ফিরোজ মান্না ॥ দীর্ঘ চার বছর ঝুলে থাকার পর সারাদেশের ইউনিয়ন পরিষদগুলোকে (ইউপি) ফাইবার অপটিক্যাল কেবল নেটওয়ার্কের আওতায় আনার কাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্পটির প্রাথমিক পর্যায়ে জেলা ও থানা শহরের উপকণ্ঠের এক হাজার ৬ ইউনিয়ন পরিষদ এই নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। প্রকল্পটি কয়েক ধাপে বাস্তবায়ন হবে। বিটিসিএলের নিজস্ব অর্থে (৭১৯ কোটি ৬ লাখ ৯৪ হাজার টাকা) প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ চলছে। ২০১০ সালে বিটিসিএল প্রকল্পটি হাতে নেয়। কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে। নানা জটিলতায় প্রকল্পটি এত দিন বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। এ বছরের শুরুর দিকে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ শুরু করা হয়েছে। ইতোমধ্যে কিছু ইউনিয়নে কানেক্টিভিটি তৈরি করা হয়েছে। সূত্র মতে, ৭শ’ কোটির বেশি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে গ্রাম পর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তি সুবিধা সম্প্রসারিত হবে। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) কাজটি বাস্তবায়ন করছে। প্রথম পর্যায়ে দেশের প্রতিটি জেলার ১৫ ইউনিয়ন পরিষদকে অপটিক্যাল ফাইবার কেবল নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হচ্ছে। প্রতিটি বিভাগে ১১০ বেশি ইউনিয়ন এই প্রকল্পের আওতাভুক্ত থাকবে। দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে প্রযুক্তি সম্প্র্রসারণে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) অপটিক্যাল ফাইবার কেবল নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। আধুনিক, শক্তিশালী ও উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ইন্টারনেট, তথ্যপ্রযুক্তিগত অবকাঠামোর মাধ্যমে জনগণের কাছে এ সুবিধা সহজলভ্য এবং নিরবচ্ছিন্ন করার উদ্যোগ নেয়া হয়। এ জন্য উপজেলা পর্যায়ে একটি করে কার্যালয় স্থাপন করে তদারকির ব্যবস্থা করা হবে। এক হাজার ইউনিয়ন পরিষদে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ‘অপটিক্যাল ফাইবার সেল’ গঠন করা হবে। এসব সেল থেকে ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোকে অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হবে। প্রতিটি ইউনিয়নে ২শ’ লাইনের এক্সচেঞ্জ বসানো কথা রয়েছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের এক উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা বলেন, অপটিক্যাল ফাইবার কেবল নেটওয়ার্ক উন্নয়নে যে নতুন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে তা অত্যন্ত যুগোপযোগী। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলার এক শ’ ইউনিয়ন পরিষদে নেটওয়ার্ক উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে। এর বাইরে আরও এক হাজার ইউনিয়ন পরিষদ অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্কে যুক্ত করতে কাজ চলছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বল্প খরচে মানসম্পন্ন ও কার্যকর আইসিটি সেবা পৌঁছে দিতে ইন্টারনেট সুবিধা দেয়ার জন্য সরকার এই প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রাথমিকভাবে দেশের এক হাজার ইউনিয়ন পরিষদ এই সুযোগ পাবে। কথা ছিল ২০১৩ সালের মধ্যে দেশের প্রতিটি গ্র্রামীণ জনপদে ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক সুবিধা নিশ্চিত হবে। কিন্তু নানা কারণে তা করা সম্ভব হয়নি। এ বছর কাজটি শেষ করা হবে। বিটিসিএল বলছে, গ্রামীণ জনগণের কাছে তথ্যপ্রযুক্তিকে সহজলভ্য করার মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা এবং সরকারের ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নে এ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। ২০২১ সালের আগেই প্রকল্পের সুবিধা গ্রামের মানুষ পাবেন। দেশের সব ইউনিয়নে নেটওয়ার্ক স্থাপন করা সম্ভব নাও হলে বেশিরভাগ ইউনিয়ন এই সুবিধার মধ্যে চলে আসবে। মানসম্মত তথ্যপ্রযুক্তি সেবা নিশ্চিত করতে অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সার্ভিস চালু করা হবে। ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক ব্যয় বহুল। এ জন্য সরকার দেশব্যাপী অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। দেশের আর্থ-সামাজিক কারণে গ্রামীণ জনগণ ঘরে বসে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন না। আর এ অবস্থার উত্তরণে ফাইবার অপটিক স্থাপনের পর ইউনিয়ন পরিষদ তথ্য কেন্দ্রগুলো এই সেবার পরিচালনা কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। প্রতিটি এলাকার নিকটস্থ বিদ্যালয়গুলোতেও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের সংযোগ দেয়া হবে। তথ্যসেবা গ্রামাঞ্চলে কৃষি, ব্যবসা ও গ্রামভিত্তিক শিল্প খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও আত্ম-কর্মসংস্থানের সুযোগ নিশ্চিত করবে। সূত্র জানিয়েছে, দেশের অনেক ইউনিয়নে এখনও প্রথম প্রজন্মের টেলিফোন ব্যবস্থা চালু রয়েছে। এতে তরুণ প্রজন্ম ইউনিয়নে বসে ইন্টারনেট সুবিধা ভোগ করতে পারছে না। ফলে শহরের সঙ্গে গ্রামের তরুণ-তরুণীদের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে একটি বড় পার্থক্য তৈরি হচ্ছে। গ্রামীণ জনপদ তথ্যপ্রযুক্তি থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে। সমতা আনতে না পারলে গ্রামের অনেক মেধাবী তরুণ-তরুণীদের সুযোগ বঞ্চিত করা হবে। দেশের সাতটি বিভাগীয় শহরের এক হাজার ছয়টি ইউনিয়ন পরিষদে ১১ হাজার ৬০ কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার কেবল স্থাপন করা, গ্রাম পর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তিগত আধুনিক সেবা পৌঁছে দেয়াই এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য।
×