ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

শেখ হাসিনা-নরেন্দ্র মোদির যৌথ সংবাদ সম্মেলন

দু’দেশের সম্পর্কের গভীরতা নতুন মাত্রা পেয়েছে

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৭ জুন ২০১৫

দু’দেশের সম্পর্কের গভীরতা নতুন মাত্রা পেয়েছে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আগামীতে দুদেশের মধ্যে বিদ্যমান দিপক্ষীয় সম্পর্ক নতুন সম্ভাবনার যুগে ও অধিকতর উচ্চতায় নেয়ার ঘোষণা দিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুদেশের সীমান্ত সুরক্ষা এবং সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে দুদেশের সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির ব্যাপারে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকারও ঘোষণা দেন তাঁরা। দু’জনই অভিন্ন কণ্ঠে জানালেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক বর্তমানে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে গেছে। এ সফরে তিস্তা চুক্তি না হলেও এ ব্যাপারে ভারত সরকারের আন্তরিকতার কথা জানিয়ে নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্বস্ত করে বলেন, খুব শীঘ্রই দুদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা ও ফেনী নদীর পানি বণ্টন সমস্যারও সুন্দর সমাধান করতে পারব। বাংলাদেশ সফরকে একটি বিশেষ ও গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত বলেও উল্লেখ করে বাংলাদেশের উন্নয়নে ২০০ কোটি ডলার অনুদানেরও ঘোষণা দেন মোদি। আর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পাদিত চুক্তির কথা উল্লেখ করে বলেন, সহযোগিতার এই বিস্তৃত ক্ষেত্র আমাদের সম্পর্কের গভীরতার ব্যাপ্তি এবং পরিপক্বতার নিদর্শন। ক্রমবর্ধমান পারস্পরিক বিশ্বাস ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও বিস্তৃত করার অঙ্গীকারের প্রতিফলন। প্রতিবেশী দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী শনিবার বিকেল থেকে একটানা বাস সার্ভিস উদ্বোধন, দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ও অনেকগুলো দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরের পর সন্ধ্যায় এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলে তাঁরা এসব অঙ্গীকার করেন। এসব অঙ্গীকারে দুদেশের প্রধানমন্ত্রীর একান্ত বৈঠকের আলাপচারিতা ও সিদ্ধান্তের কথা উঠে এসেছে বেশ স্পষ্টভাবেই। এদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ঐতিহাসিক স্থলসীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষর উপলক্ষে শনিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিবেশ ছিল রীতিমত আনন্দঘন, সর্বত্রই ছিল খুশির বাতাবরণ। অনুষ্ঠান উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় শাপলা হলকে সাজানো হয়েছিল অপরূপ সাজে। দুদেশের ঐতিহাসিক বন্ধুত্বের নিদর্শন টানানো হয়েছিল সর্বত্রই। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আসার আগেই অনুষ্ঠানস্থলে আসেন পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। যথারীতি ছোট বোনের মতোই বুকে জড়িয়ে ধরে তাঁর সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিকেল পৌনে চারটায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তেজগাঁওস্থ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এসে পৌঁছলে সেখানে তাঁকে অভ্যর্থনা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপরই শুরু হয় আনুষ্ঠানিকতা। কিছুক্ষণ পরেই ঢাকা-আগরতলা-কলকাতা এবং ঢাকা-শিলং-গৌহাটি রুটে বাস সার্ভিসের উদ্বোধন করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় মঞ্চে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীও। এরপর এই তিন নেতা ফ্লাগ উড়িয়ে বাস সার্ভিসের উদ্বোধন করেন। এরপরই আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। অনুষ্ঠানস্থলে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। এরপর তাঁদের উপস্থিতিতে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব ড. এস জয় শংকর এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক ভারত-বাংলাদেশ স্থলসীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এ সময় গোটা মিলনায়তনে করতালিতে প্রকম্পিত হয়ে উঠে। এরপর ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর বিভিন্ন খাতে ১৯টি চুক্তি ও এমওইউতে স্বাক্ষর অনুষ্ঠান এবং সাতটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন শেষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যৌথ বিবৃতি দিতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। পুরো অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সরকারের মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, ড. গওহর রিজভী, ড. মশিউর রহমান, ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, ইকবাল সোবহান চৌধুরী, মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, মুজিবুল হক, আসাদুজ্জামান নূর, শামসুর রহমান শরিফ ডিলু, শাজাহান খান, প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, আসাদুজ্জামান খান কামাল, ভারতের হাইকমিশনার পঙ্কজ শরনসহ দুদেশের সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ। যৌথ বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যা বলেন ॥ ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর আলোচনাকে অত্যন্ত ফলপ্রসূ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যৌথ সংবাদ বিবৃতিতে বলেন, আমাদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে দুদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও নতুন সম্ভাবনার যুগে ও অধিকতর উচ্চতায় নিয়ে যাবে। তিনি বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এ সফল আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন আশা ও গতির সঞ্চার করেছে। আমাদের সম্পর্ককে আরও সৃদৃঢ় করার যে অঙ্গীকার আমরা করেছি, তা সফরের শেষে ‘যৌথ ঘোষণা’য় তা প্রকাশ পাবে। আমাদের এই যৌথ ঘোষণার অঙ্গীকারগুলোকে এখন বাস্তবে রূপদান করাই গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে আমি এ ক্ষেত্রে সার্বিক সহযোগিতা ও সমর্থনের বিষয়ে নিশ্চয়তা প্রদান করছি। আন্তঃযোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং আমি উভয়েই এ বিষয়ে সম্মত হয়েছি যে, আন্তঃযোগাযোগ শুধু এই দেশেরই নয়, এই অঞ্চলের উন্নয়নের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। উপকূলীয় নৌ-চুক্তি উপকূলীয় নৌ চলাচল চুক্তি, বাণিজ্য চুক্তির নবায়ন, অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন প্রটোকল স্বাক্ষর এবং এর সঙ্গে নতুন বাস সার্ভিস উদ্বোধন এ অঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ প্রতিষ্ঠার প্রতি আমাদের অঙ্গীকারের দৃষ্টান্ত। আন্তঃযোগাযোগের মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলের জনগণের জন্য বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা সম্ভব উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চুক্তিগুলোতে যে নতুন বিষয়সমূহ সন্নিবেশিত হয়েছে তার মাধ্যমে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও ব্যবসার প্রসারে নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরি হবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর এবং নানা চুক্তি ও সমঝোতার মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আজ আমাদের মাঝে পেয়ে আমরা সত্যিই আনন্দিত ও গর্বিত। এ এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। আমরা যৌথভাবে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে নতুন সম্ভাবনার যুগে ও অধিকতর উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছি। স্থলসীমান্ত চুক্তির অনুসমর্থনের দলিল বিনিময়ের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর মাধ্যমে ৬৮ বছরের মানবিক সমস্যার সমাধান হওয়ায় আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করছি। স্থলসীমান্ত চুক্তির জন্য বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর ঐতিহাসিক ভূমিকা এবং ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জীর অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী এই চুক্তির প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানানোর জন্য ভারতের জনগণ এবং ভারতের সকল রাজনৈতিক দলকেও ধন্যবাদ জানান। মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অপরিসীম অবদানের কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বিশ্বাস করি, সম্মিলিতভাবে আমরা এই অঞ্চলের জনগণের জন্য অধিকতর শান্তি, প্রগতি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পারি, যা ছিল বঙ্গবন্ধুর আজন্মলালিত স্বপ্ন। তিনি বলেন, ভারত আমাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী দেশ এবং একইসঙ্গে আমরা পরস্পরের উন্নয়ন সহযোগী। এ নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার খুবই ফলপ্রসূ দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হয়েছে। আমাদের আলোচনা ছিল গঠনমূলক। আমরা পরস্পরের উদ্বেগ এবং অগ্রাধিকার বিষয়গুলো সম্পর্কে অবগত। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সব বিষয় নিয়েই আমাদের মধ্যে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যমান বাণিজ্য বৈষম্যের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দুদেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য ঘাটতির বিষয়টি ভারতের প্রধানমন্ত্রী উপলব্ধি করেছেন এবং এ বিষয়ে তাঁর সরকারের সার্বিক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। দুদেশের মধ্যে বাণিজ্য সমতা আনার জন্য বাংলাদেশে ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য মংলা এবং ভেড়ামারায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আমরা সম্মত হয়েছি। আমরা আশা করছি, এর ফলে বাংলাদেশে ভারতীয় বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে। সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির বিষয়ে ভারত ও বাংলাদেশ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সীমান্ত শান্তিপূর্ণ রাখা এবং এ বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা বজায় রাখার বিষয়ে আমরা আমাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছি। সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির বিষয়ে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমরা উভয় দেশের ৫৪টি অভিন্ন নদীর ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে আলোচনা করেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুদেশের জনগণের মধ্যে নিবিড় যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা আমাদের অন্যতম অগ্রাধিকার। এটি দুদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সবচেয়ে শক্তিশালী বন্ধন। আমরা গৌহাটিতে বাংলাদেশ মিশন এবং খুলনা ও সিলেটে ভারতীয় মিশন খোলার ব্যাপারে সম্মত হয়েছি। এটা আমাদের ক্রমবর্ধমান পারস্পরিক বিশ্বাস ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও বিস্তৃত করার অঙ্গীকারের প্রতিফলন। এ সকল পদক্ষেপ আমাদের সম্পর্ককে আরও বিস্তৃত ও গণমুখী করবে। তাই নরেন্দ্র মোদির সফর আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন আশা ও গতির সঞ্চার করেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যা বলেন ॥ বাংলাদেশ সফরকে জীবনের একটি বিশেষ ও গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে আখ্যায়িত করেন সফররত ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যৌথ বিবৃতিতে বলেন, বাংলাদেশে সফরে এসে আমরা সম্মানিত বোধ করছি। আমরা স্থলসীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করেছি, শীঘ্রই তিস্তা ও ফেনীর নদীর পানি বণ্টন সমস্যারও সুন্দর সমাধান হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দুদেশের পানি প্রবাহ উভয়দেশের জনগণের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। এই পানির ওপর কৃষি, পরিবেশ, প্রতিবেশ এবং জীবিকা নির্ভরশীল। এ সব কিছুই আমার বিবেচনায় রয়েছে। তাই স্থলসীমান্ত চুক্তির মতোই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সমর্থন নিয়েই তিস্তা ও ফেনীর পানি বণ্টন সমস্যার সমাধান অচিরেই করা হবে। স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নে দুদেশের সীমান্তে নিরাপত্তা বেড়েছে উল্লেখ করে নরেন্দ্র মোদি বলেন, ভারতের জনগণ অতীতেও বাংলাদেশের পাশে ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের উন্নয়ন একই সূত্রে গাঁথা। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কও অত্যন্ত নিবিড়। বাংলাদেশ শুধু দুদেশের প্রতিবেশী নয়, ঐতিহ্য, ভাষা, সংস্কৃতি এবং ক্রিকেটের প্রতি ভালবাসা একই সূত্রে গাঁথা। দুই দেশের মানুষ অন্তর দিয়ে আপনজনভাবেই জানেন এবং এ কারণেই দুটি দেশ যৌথভাবে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়ার ধারণায় বিশ্বাস করে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সফলতাই এ অঞ্চলের সফলতা। অবশ্যই বাংলাদেশ তার অর্জন ও লক্ষ্যে সফল হবে। উষ্ণ আতিথেয়তা ও সম্মান জানানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতাও জানিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। বাংলাদেশে তাঁর সফরকে একটি ‘ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ উল্লেখ করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ডপর দীর্ঘদিনেও যে সমস্যা জিউয়ে ছিল, সেই স্থল সীমান্ত চুক্তি সমস্যার আমরা সমাধান করেছি। এছাড়া বাংলাদেশের সঙ্গে আরও যেসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হলো, এর মাধ্যমে দুদেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য সহজতর হবে। তিনি বলেন, স্থল চুক্তি বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধনে ভারতের সকল রাজনৈতিক দলের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত প্রমাণ করেছে ভারতের জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবেই বাংলাদেশের জনগণের পাশে আছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন অধ্যায়ের সংযোজন হয়েছে। একদিকে সড়ক যোগাযোগে আগরতলা-ঢাকা-কলকাতা এবং ঢাকা-শিলং-গৌহাটি বাস সার্ভিস চালু হয়েছে, অন্যদিকে উপকূলীয় ও অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচলের ব্যাপারেও সমঝোতা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দুদেশের যৌথ অর্থনৈতিক করিডর চালু হল, যৌথ উন্নয়নের যাত্রাও শুরু হলো। তিনি বলেন, যোগাযোগের এ উন্নয়ন শুধু বাংলাদেশ-ভারত নয়, ভারতের উত্তরপূর্ব অংশের সঙ্গে যোগাযোগ উন্নয়ন নয়- এ পদক্ষেপ দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, জাতিসংঘে শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের সাফল্যে বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হয়েছে। একই সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং নিরাপদ সমুদ্র গড়ে তুলতেও বাংলাদেশ একই ধরনের ভূমিকা রাখবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মধ্য দিয়ে একই সঙ্গে শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল এবং অধিকতর নিরাপদ সীমান্ত ব্যবস্থাপনাও নিশ্চিত হবে। তিনি বলেন, শুধু স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন নয়, গত বছর দুই দেশের আন্তর্জাতিক সীমানা নির্ধারণের ক্ষেত্রেও নিজেদের দৃঢ় অঙ্গীকার এবং ইতিবাচক সিদ্ধান্তের প্রমাণ দিয়েছে। নরেন্দ্র মোদি তাঁর বক্তৃতায় বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে বলেন, বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলাদেশের নয় এই অঞ্চলের একজন মহান নেতা ছিলেন। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে মোদি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্ত সুরক্ষার ব্যাপারে আমরা আরও পদক্ষেপ নেব। এই সফরের মধ্য দিয়ে আমরা দুই দেশের মধ্যে আস্থা বাড়ানোর সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাব বলে আশা করছি। এছাড়া মহাকাশ গবেষণায় বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর প্রত্যাশা প্রকাশ করে বাংলাদেশের বিদ্যুত খাতে সহযোগিতার হাত আরও প্রসারিত করার প্রতিশ্রুতি দেন নরেন্দ্র মোদি। এ সময় বাংলাদেশে ভারতের বিদ্যুত সহযোগিতা বর্তমান ৫শ’ মেগাওয়াট থেকে বাড়িয়ে আগামী দুই বছরের মধ্যে ১১শ’ মেগাওয়াটে উন্নীত করার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, এ সব কিছু উভয় পক্ষের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কেরই প্রতিফলন। বাংলাদেশের আইন-কানুন মেনেই রামপালে কয়লা বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। এটিই হবে বিদ্যুত উৎপাদনে নতুন মাত্রা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, তাঁর ঘোষিত ভিশন ২০২১ এবং ভিশন ২০৪১ এর বাস্তবায়ন হবে বলে আমি আশাবাদী। এ ভিশন বাস্তবায়নে বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্ন সার্থক হচ্ছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। আঞ্চলিক সহযোগিতা ও যোগাযোগ বৃদ্ধির ব্যাপারে তিনি বলেন, ভারত-বাংলাদেশ-নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতা আরও বাড়ানোর ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া হবে। এ ক্ষেত্রে নেয়ার অঙ্গীকার করেন মোদি।
×