ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পাহাড়তলী রেল কারখানায় ৮৬ কোচ মেরামতের টার্গেট

প্রকাশিত: ০৪:৫৯, ৭ জুন ২০১৫

পাহাড়তলী রেল কারখানায় ৮৬ কোচ মেরামতের টার্গেট

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ জরাজীর্ণ অবকাঠামো ও শতবর্ষী মেশিনপত্র, প্রয়োজনীয় মালামালের সরবরাহ এবং প্রাপ্তি সমস্যার জরাজীর্ণ অবস্থার মধ্য দিয়ে চলছে চট্টগ্রামের পাহাড়তলীস্থ রেলওয়ে কারখানা। মেরামতব্য যাত্রীবাহী কোচ ও মালামাল পরিবহনে গাড়ি বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার মধ্যেও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এবং কাজের গুণগতমান বৃদ্ধির প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা হয়েছে এই কারখানায়। কারখানা পরিদর্শনে দেখা গেছে, আসন্ন ঈদকে টার্গেট করে বিভিন্ন ক্যাটাগরির ৮৬টি কোচ মেরামতের মাধ্যমে চলনক্ষম করার কাজ চলছে। পাহাড়তলী কারখানা পরিদর্শন করে দেখা গেছে, মেরামত কাজের জন্য এ কারখাানায় কয়েকটি বিভাগ রয়েছে। ক্যারেজ সপ, ওয়াগন সপ, পেইন্ট সপ, হুইল সপ, ওয়েল্ডিং সপ, স্মিথি সপ, ফাউন্ড্রি সপ, সিএইচআর সপ, জিওএইচ সপ, এসিটিএল সপ, জিইআর সপে শ্রমিক কর্মচারীরা অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে মেরামত ও উৎপাদন কাজ অব্যাহত রাখলেও প্রেষণার কোন ব্যবস্থা নেই। বর্তমান যাত্রীবাহী গাড়ির হোল্ডিং মোতাবেক কারখানায় গড়ে প্রতিদিন ৫ ইউনিট (২.৫ কোচ বা ওয়াগন) মেরামত করার টার্গেট থাকলেও আংশিক জনবল সঙ্কটের কারণে সিডিউল ঠিক রাখতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। তবুও নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী প্রতিদিন প্রায় ২ দশমিক ৪০ ইউনিট গাড়ি মেরামত করা হয়। সুযোগ-সুবিধার সীমাবদ্ধতা, লে-আউট, ওয়ার্কিং এরিয়ার স্বল্পতা, লোকবলের মাত্রাতিরিক্ত ঘাটতি ও আধুনিক যন্ত্রাংশ না থাকায় নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। চুক্তিভিত্তিক হিসেবেও অনেক গাড়ির পুনর্বাসন মেরামত হয়ে থাকে। এসব বিভাগের মাধ্যমে আসন্ন রমজানের ঈদ উপলক্ষে ৮৬টি কোচ মেরামত করে চলনক্ষম করার প্রক্রিয়া চলছে। এই ৮৬টি কোচের মধ্যে চট্টগ্রাম ডিভিশনের জন্য ১৮টি আন্তঃনগর কোচ ও ২৮টি মেইল এক্সপ্রেস ট্রেনের কোচ মেরামত করে সংযোজন করা হবে। অপরদিকে ঢাকা ডিভিশনের জন্য ১৭টি আন্তঃনগর ট্রেনের কোচ এবং ২৩টি মেইল এক্সপ্রেস ট্রেনের কোচ মেরামতের কাজ চলছে। এর মধ্যে দুটি ডিভিশনের জন্য ১১টি চায়না কোচ, ৫টি ইরানী কোচ ও ১৯টা পাহাড়তলী টাইপ কোচ রয়েছে। বাকি ৫১টি মেইল ও এক্সপ্রেস ট্রেনের কোচ মেরামতের কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। গত কয়েকদিনের মেরামত কাজ পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে ১৫টি কোচের কাজ শতভাগ শেষ করে সরবরাহ করা হয়েছে। বাকি কোচগুলোর স্টিল, বডি, পেইন্ট, সিমেন্ট ও বগির কাজ চলছে। যাত্রীবাহী কোচ ও মালবাহী ওয়াগন মেরামত কাজে এ কারখানায় মেকানিক্যাল বিভাগে ৩৪৪টি ও ইলেকট্রিক্যাল বিভাগে ৮৭টি মেশিন রয়েছে। এসব মেশিনের মধ্যে ২০ বছরের নিচে ব্যবহৃত মেশিনের পরিমাণ ১৭টি, ২০ থেকে ৩০ বছরের নিচে ব্যবহৃত মেশিনের সংখ্যা প্রায় ১০৯টি, ৩০ থেকে ৪০ বছর ধরে ব্যবহৃত মেশিনের সংখ্যা প্রায় ৪০টি, ৪০ থেকে ৫০ বছর ধরে ব্যবহৃত মেশিনের সংখ্যা প্রায় ২২৪টি, ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ব্যবহৃত মেশিনের সংখ্যা প্রায় ৪০টি তবে ১শ’ বছরেরও বেশি সময় ধরে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ কারখানায় যাত্রী ও মালবাহী গাড়ির যান্ত্রিক ও বৈদ্যুতিক মেরামতসহ বিভিন্ন কাজ ২২টি সপের (বিভাগ) মাধ্যমে করা হয়। এ ব্যাপারে পূর্বাঞ্চলীয় চীফ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হারুন-অর-রশিদ জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, খালাশী নিয়োগের পর বেশকিছু জনবল সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে। প্রতি বছরই পাহাড়তলীস্থ এ রেলওয়ে কারখানা থেকে বিপুল পরিমাণ কোচ ও ওয়াগন মেরামত হচ্ছে। আসন্ন ঈদে ৮৬টি কোচ মেরামত করে এই কারখানা থেকে পরিবহন বিভাগে সরবরাহ করা হবে। ইতোমধ্যে অনেকগুলো সরবরাহ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে পাহাড়তলীস্থ রেলওয়ে কারখানার ওয়ার্কস ম্যানেজার (ক্যারেজ) এ এফ এম মহিউদ্দিন জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক রেখেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আসন্ন ঈদ যাত্রায় এই কারখানা থেকে ৮৬টি কোচ মেরামতের পর পরিবহন বিভাগে সরবরাহ করার সিদ্ধান্ত রয়েছে। এর মধ্যে আন্তঃনগর ট্রেনের ৩৫টি ও মেইল ট্রেনের ৫১টি কোচ। শ্রমিক-কর্মচারীরা অভিযোগ করেছেন, রেল মন্ত্রণালয় গঠনের প্রায় ৫ বছরে তিন মন্ত্রীর পরিবর্তন হয়েছে ঠিকই কিন্তু আধুনিকায়ন নেই এই কারখানার। তবে আধুনিকায়ন প্রক্রিয়া মন্ত্রণালয়ে ফাইলবন্দি অবস্থায় ২ মন্ত্রী পার হয়েছেন। আধুনিকায়নের ফাইল চাপা পড়েছে মন্ত্রণালয়ের টেবিলে ৫ বছররেরও বেশি সময়। প্রশ্ন উঠেছে তৃতীয় মন্ত্রীও আধুনিকায়নের কথা বলে সরকারের ৫ বছরের মেয়াদ শেষ করে নতুন মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেছেন। রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক রেলের স্থাপনা ও কারখানা পরিদর্শনে কয়েক দফায় চট্টগ্রামে রেলের পাহাড়তলীস্থ কারখানায় গিয়েছেন। কিন্তু পরিবর্তন অদৃশ্যমান।
×