ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘আট বছরে এই প্রথম স্বর্ণপদক হাতছাড়া’

প্রকাশিত: ০৪:৪৭, ৭ জুন ২০১৫

‘আট বছরে এই প্রথম স্বর্ণপদক হাতছাড়া’

রুমেল খান ॥ কথায় আছে, ‘মুকুট পরার চেয়ে তা রক্ষা করা কঠিন।’ কথায় আছে, দীর্ঘদিনের শীর্ষাসন থেকে স্থানচ্যুত হওয়ার যে সুতীব্র বেদনা, তা মর্মে মর্মে হৃদয়াঙ্গম করেছেন একজন। তার নাম আরমিন আশা। তার আশা পর্যবসিত হয়েছে হতাশায়। বাংলাদেশ শূটিং স্পোর্টস ফেডারেশন আয়োজিত ‘বেক্সিমকো জাতীয় শূটিং প্রতিযোগিতা’য় শুক্রবার চারটি ইভেন্টে পদক লড়াইয়ের নিষ্পত্তি হয়। গুলশানে অবস্থিত জাতীয় শূটিং কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত ১০ মিটার এয়ার পিস্তলে (মহিলা) আর্মি শূটিং এ্যাসোসিয়েশনের সিনথিয়া নাজনীন টুম্পা ১৮৯.৬ পয়েন্ট পেয়ে স্বর্ণ, নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাবের আরমিন আশা ১৮৯.১ পয়েন্ট পেয়ে রৌপ্য ও ঢাকা রাইফেল ক্লাবের অন্তরা ইসলাম ১৬৪.০ পয়েন্ট পেয়ে তাম্রপদক লাভ করেন। যিনি দ্বিতীয় হন, সেই আরমিন এই ইভেন্টে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে গত সাত আসরেই জিতেছিলেন স্বর্ণপদক। এবারই তার স্বর্ণ হাতছাড়া হলো। শনিবার প্রতিযোগিতার শেষদিনে গুলশান শূটিং কমপ্লেক্সে গেলে দেখা হয় ‘পিস্তলকন্যা’ আরমিনের সঙ্গে। কেন স্বর্ণপদক জিততে পারলেন না, তখনকার অনুভূতি কেমন ছিল? এই প্রশ্নের জবাবে আরমিন বলেন, ‘১০ মিটার এয়ার পিস্তলে এবার স্বর্ণ জিততে পারিনি। তবে রৌপ্যপদক পেয়েছি। এমন রেজাল্টের পর প্রথমে খুব খারাপ লেগেছিল। তবে সতীর্থদের যুক্তিপূর্ণ কথা শুনে সেই খারাপ ভাবটা কেটে যায়। পরে নিজেকে বোঝাই এই বলে, এ ইভেন্টে আমার স্কোর খারাপ হওয়ার পেছনে আরেকটা কারণও ছিল। সেটা হলো, ক্যারিয়ারে এবারই প্রথম আমি আরেকটি ইভেন্টে অংশ নিয়েছি (২৫ মিটার স্পোর্টস পিস্তল)। বৃহস্পতিবার ওই ইভেন্টে অংশ নিয়ে আমি চরমভাবে ব্যর্থ হই। শুক্রবার ১০ মিটার এয়ার পিস্তল ইভেন্টে বাজে রেজাল্ট করার জন্য আগের দিনের বাজে রেজাল্ট অনেক প্রভাব ফেলে। শুধু তাই নয়, ২৫ মিটারের ইভেন্ট শুরুর তিন-চার দিন আগে অনুশীলন করে এবং প্রতিযোগিতার দিন খেলে আমার হাত ভীষণ ব্যথা হয়ে যায়। মাত্র একদিন পরই কোন বিশ্রাম না নিয়েই ১০ মিটার ইভেন্ট খেলতে গিয়ে ঠিকমতো খেলতে পারেনি হাতের যন্ত্রণায়। ২৫ মিটারে ট্রিগার ছিল ১০০০ গ্রাম, আর ১০ মিটারে ৫০০ গ্রাম, ১০ মিটার খেলতে গিয়ে তাই অনেক প্রেসার নিতে হয়েছে। তাই এমন ফল হয়েছে। তবে আমি সবাইকে বলেছি, আগামীতে ২৫ ও ১০ মিটার পিস্তলÑ এই দুই ইভেন্টেই আমার গোল্ড থাকবেই। এট আমার চ্যালেঞ্জ।’ আরমিনের নতুন ইভেন্ট ২৫ মিটার পিস্তল ইভেন্টে এবার যারা পদক পেয়েছেন (আর্মি শুটিং এ্যাসোসিয়েশনের সিনথিয়া নাজনীন টুম্পা ৫২৩ পয়েন্ট পেয়ে স্বর্ণ, ঢাকা রাইফেল ক্লাবের অন্তরা ইসলাম ৫১৫ পয়েন্ট পেয়ে রৌপ্য ও কুষ্টিয়া রাইফেল ক্লাবের আরদিনা ফেরদৌস আঁখি ৫০৮ পয়েন্ট পেয়ে তাম্র্রপদক) তাদের স্কোরকে বেশি নয় বলেই মনে হয়েছে নারায়ণগঞ্জের মেয়ে আরমিনেরÑ ‘ওরা যে স্কোর করেছে সেটা অনেক কম, তা আমি সামনের বছর অনুশীলন করলেই করতে পারব বলে দৃঢ় আশাবাদী।’ ১০ মিটার এয়ার পিস্তল ইভেন্টে অপ্রতিদ্বন্দ্বী বলা হয় আরমিনকে। ‘নয় বছরের শূটিং ক্যারিয়ারে এই ইভেন্টে আমি টানা সাত বছর (২০০৮-২০১৪) জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। নিজের রেকর্ড নিজেই ভেঙ্গেছি পাঁচবার। ইচ্ছে ছিল এবারও রেকর্ড ভাঙ্গব। কিন্তু হলাম দ্বিতীয়। আমি তো ভয়ই পেয়েছিলাম, হয়ত কোন মেডেলই পাব না। কিন্তু অভিজ্ঞতার জোরে এবং সৃষ্টিকর্তার কৃপায় সিলভার পাই। হয়ত সামনের বছর ঠিকই রেকর্ড ভাঙ্গতে পারব। অন্যরা এতদিন কেন আমার রেকর্ড ভাঙ্গতে পারেনি সেটা তাদের ব্যর্থতা।’ এতদিনের ক্যারিয়ারে এখন কেন ২৫ মিটার পিস্তলে এলেন? ‘১০ মিটারে তো একটা ভাল অবস্থানে চলে এসেছি। সবাই আমাকে বলে আমি নাকি টেন মিটারের কুইন! তাই মনে হয়েছে নতুন আরেকটা ইভেন্ট খেলা যাক। তাছাড়া আগেও দেখেছি সিনিয়রদের অনেকেই ২/৩টা ইভেন্ট খেলেন। তাই আমিও ট্রাই করেছি। আমি খুব খুশি যে নতুন ইভেন্টটা শুরু করতে পেরেছি।’ আগামী নবেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় এয়ারগান চ্যাম্পিয়নশিপ। সেখানে ২৫ মিটার স্পোর্টস পিস্তল ইভেন্ট থাকছে না। তবে থাকছে ১০ মিটার এয়ার পিস্তল ইভেন্ট। এ প্রসঙ্গে ১৯৮৭ সালের ২২ জুলাই জন্ম নেয়া নারায়ণগঞ্জ নিবাসী আরমিনের ভাষ্য- ‘কথা দিচ্ছি, এবার ব্যর্থ হলেও পরেরবার ভক্তদের আর হতাশ করব না!’ এখন দেখার বিষয়, এবারের ব্যর্থতা এবং পুঞ্জীভূত হতাশা দূর করে আগামী নবেম্বরে আবারও কাক্সিক্ষত সাফল্য কুড়িয়ে নিতে পারেন কিনা ১০ মিটার পিস্তল ইভেন্টের রানী ও ‘পিস্তলকন্যা’ আরমিন আশা।
×