ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঋণদাতাদের প্রস্তাব বাস্তবসম্মত নয় ॥ সিপরাস

ফুরিয়ে এসেছে গ্রীস রক্ষার সময়

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ৭ জুন ২০১৫

ফুরিয়ে এসেছে গ্রীস রক্ষার সময়

গ্রীসকে দেউলিয়াত্বের দ্বারপ্রান্ত থেকে উদ্ধার করার এবং ইউরোজোন থেকে দেশটির বিদায় ঠেকানোর সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী আলেক্সিস সিপরাস জি-৭ নেতাদের উদ্দেশে ওই সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন। এতে নিশ্চিতভাবেই বোঝা যায় যে, জি-৭ নেতাদের শীর্ষ বৈঠকে গ্রীসের দুর্দশা এক জরুরী বিষয়ে পরিণত হবে। গ্রীক নেতা তার দেশের ওপর অমর্যাদাকর শর্ত আরোপ না করতেও আন্তর্জাতিক ঋণদাতাদের প্রতি আহ্বান জানান। যখন গ্রীস জরুরী প্রয়োজনীয় বেইলআউট তহবিল (দেউলিয়াত্ব থেকে রক্ষা পাওয়ার অর্থ সহায়তা) চাচ্ছে, তখন তিনি ওইসব মন্তব্য করলেন। ওই শীর্ষ বৈঠক জার্মানির ব্যাডেরিয়ায় রবিবার শুরু হবে। খবর বিবিসি ও গার্ডিয়ানের। সিপরাস বলেন, আলোচনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে রয়েছে, কিন্তু ঋণদাতাদের প্রস্তাবগুলো ‘বাস্তবসম্মত’ নয়। তিনি শুক্রবার পার্লামেন্টে এক বিবৃতি দিচ্ছিলেন। গ্রীসের জন্য বেইলআউট তহবিল বাবদ ৭২০ কোটি ইউরো (৫২০ কোটি পাউন্ড) ছাড় করার এক চুক্তি স্বাক্ষরের সর্বশেষ সম্ভাব্য ক্ষণ হিসেবে এখন জুন মাসের শেষ ভাগকেই বিবেচনা করা হচ্ছে। গ্রীসের সরকারী কাজকর্ম চালু রাখতে এ অর্থ অত্যাবশ্যক বলে মনে করা হয়। এ পরিস্থিতিতে ওই বিবৃতিতে সিপরাস তার মন্দাকবলিত দেশের ওপর উদ্ভট সব দাবি চাপিয়ে দেয়ার দায়ে ঋণদাতাদের অভিযুক্ত করেন। তিনি গ্রীকদের অপমানিত না করতে তাদের প্রতি আহ্বান জানান। এর আগে গ্রীস আইএমএফকে ৩০ কোটি ইউরো (২ কোটি ১৬ লাখ পাউন্ড) ঋণ পরিশোধ বিলম্বিত করার ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়। সিপরাস দর কষাকষি নিয়ে তার অবস্থানের প্রতি সমর্থন দিতে এবং দেশের ঋণদাতাদের সর্বশেষ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করতে গ্রীসের সরকার বিরোধী দলগুলো এবং তার নিজস্ব সিরিজ পার্টির এমপিদের প্রতি আহ্বান জানান। সিপরাস গ্রীক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ঋণ মওকুফেরও আহ্বান জানান। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, গ্রীসের ৩২ হাজার কোটি ইউরোর ঋণের কিছু অংশ অবলোপনের বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে। তিনি সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সম্মত হওয়া পদক্ষেপগুলো থেকে সরে যাওয়া এবং তাদের সর্বশেষ প্রস্তাবে কৃচ্ছ্রনীতির অবসান ঘটানোর প্রয়োজনীয়তা দেখতে পেতে ব্যর্থ হওয়ার দায়ে গ্রীসের ঋণদাতাদের অভিযুক্ত করেন। সিপরাস বলেন যে, ইউরোপ চলতি সপ্তাহে যেসব প্রস্তাব দিয়েছে, তাতে তিনি হতাশ হয়েছেন। এসব প্রস্তাবের মূলকথা হলো : গ্রীসকে সরকারী ব্যয় আরও কমাতে হবে এবং আরও সংস্কার সাধন করতে হবে। এর বিনিময়ে দেশটি এর সরকারী কাজকর্ম চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ পাবে। উত্তেজনাপূর্ণ পার্লামেন্ট অধিবেশনে সিপরাস ব্রাসেলস বৈঠকে বুধবার গভীর রাতে পেশ করা প্রস্তাবগুলোর নিন্দা করেন। ফাঁস হওয়া এক খসড়ায় দেখা যায়, এসব প্রস্তাবে পেনশন হ্রাস, ভ্যাট বৃদ্ধি, এবং গ্রীসের মূল বেইলআউট চুক্তিতে আরোপিত বিতর্কিত শ্রম বাজার সংস্কার রদ করার পরিকল্পনা বাতিল করতে এথেন্সের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। কিন্তু এর বদলে প্রধানমন্ত্রী পার্লামেন্টে বলেন যে, তার নিজস্ব পাল্টা প্রস্তাব গৃহীত হওয়া উচিত। এতে কর্মীদের বেতন ও সুবিধাদি রক্ষা করতে চাওয়া হয়। ইউরোপীয় রাজধানীগুলো সিপরাসের প্রস্তাবে সম্মত হবে না। আলোচকদের হাতে খুব বেশি সময়ও নেই। যদি চলতি মাসের শেষনাগাদ কোন চুক্তি না হয়, তা হলে গ্রীসকে তার বেইলআউট বাবদ অর্থ দেয়া হবে না। সিপরাস ঋণদাতাদের সঙ্গে কোন চুক্তিতে পৌঁছবেন কিনা, শীঘ্রই তাঁকে সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এতে ব্যর্থ হলে গ্রীস ঋণখেলাপী হয়ে পড়তে পারে এবং দেশটির ইউরোজোন ত্যাগের সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। গ্রীক সরকারের এখন অবশ্যই ৩০ জুনে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলকে আইএমএফ মোট ১৫০ কোটি ইউরো পরিশোধ করতে হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং আইএমএফের সঙ্গে গ্রীসের বেইলআউট চুক্তি করার সময়সীমা সেদিনই শেষ হবে। তবে চলতি মাসে গ্রীসের আসলে বিলের আকারে মোট ৬৭০ কোটি ইউরো পরিশোধ করা প্রয়োজন। অবশিষ্ট ৫২০ কোটি ইউরো স্বল্পমেয়াদী ট্রেজারি বিলের আকারে শোধ করতে হবে।
×