ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পরিবেশ ও বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ৭ জুন ২০১৫

পরিবেশ ও বাংলাদেশ

পরিবেশ নিয়ে সচেতন মানুষের শঙ্কাময় উচ্চারণে কান দেয়ার কথা যাদের সবচেয়ে বেশি, সেই নদীখেকো পাহাড়খেকোরা দিব্যি কানে তুলো দিয়ে বসে আছে। ফলে আমাদের এককালের সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা বলে খ্যাত মাতৃভূমি পরিবেশ বিপর্যয়ের ঝুঁকির মধ্যেই থেকে যাচ্ছে। পরিবেশ নানাভাবে দূষিত ও বিপর্যস্ত হতে পারে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কথা জোরেশোরে বলে আমরা নিজেদের অপরিণামদর্শী ভূমিকাকে আড়াল করতে চাই। আমরা যদি একটি গাছও কাটি, কিংবা এক ঝুড়ি বর্জ্য ফেলি নদীতে, তবে পরিবেশ দূষণে আমাদের ভূমিকাকে খাটো করে দেখা যাবে কি? শব্দদূষণকে আমরা যেন তোয়াক্কাই করি না। অথচ এটি মানুষের কর্মক্ষমতা হ্রাসের অন্যতম কারণ। ঢাকা শহরে নানাভাবে চলছে বিবিধ দূষণ। বহু প্রাইভেট ক্লিনিক ও হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে নাগরিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে। এতে মারাত্মক পরিবেশ দূষণ ঘটছে। বনভূমি, নদী ও জলাশয় দখল ও দূষণ প্রতিরোধ এবং বর্জ্য পরিশোধন- এই কাজগুলো যথাযথভাবে চললে পরিবেশের অনেকটা ভারসাম্য রক্ষা পাবে। বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর গ্যাস নির্গমন আর প্রচুর পরিমাণ ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ নিষ্কাশনের ফলে দিন দিন পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সঙ্গে পরিবর্তন হচ্ছে পৃথিবীর বায়ুম-ল এবং জলবায়ুর। যার ফলস্বরূপ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন বৈশ্বিকভাবে বাংলাদেশকে একটি বিপন্ন অবস্থার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি উপকূলীয় জনগণের জীবনধারায় মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। আশার কথা, বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে সবচেয়ে বলিষ্ঠ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে বাংলাদেশ। আমাদের প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়কণ্ঠে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার জন্য বরাবর উন্নত ও শিল্পোন্নত দেশগুলোকে দায়ী করে তাদের নিজ নিজ দেশে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে এনে প্রতিশ্রুত তহবিলের অর্থ দ্রুত ছাড় দেয়ার জন্য বিশ্ব নেতাদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে আসছেন। জাতীয়ভাবে আমাদের পরিবেশ সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে সরকারের তরফ থেকে ইতিবাচক কিছু পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে। ১৯৮৯ সালে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় নামে আলাদা মন্ত্রণালয় সৃষ্টি হয়। একজন মহাপরিচালকের নেতৃত্বে অধিদফতরটির নতুন নামকরণ হয়ে পরিবেশ অধিদফতর গঠিত হয় এবং ১৯৯৫ সালে তৈরি পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের আওতায় তা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৯৯২ সালে গৃহীত জাতীয় পরিবেশ নীতি বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু হয়। জাতীয় পরিবেশ ব্যবস্থাপনা কর্মপরিকল্পনা অনুসরণে তৈরি হয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫। পানি দূষণ, শব্দ দূষণ, বায়ু দূষণে হুমকির মুখে মানব স্বাস্থ্য। তবে পরিবেশ সুরক্ষার জন্য সব কিছুর আগে সতর্ক থাকতে হবে- যাতে প্রকৃতির বিরুদ্ধে যে কোন ধরনের বৈরী কর্মকাণ্ড প্রতিহত করা সম্ভব হয়। এর পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষায় গাছ লাগাতে হবে ব্যাপক হারে। একটি সবুজ প্রকৃতি গড়ে তোলা জরুরী।
×