ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

৩৭৬ কিমি পানির পাইপ লাইন পুনর্বাসন ও সম্প্রসারণ কাজ চলছে

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ৬ জুন ২০১৫

৩৭৬ কিমি পানির পাইপ লাইন পুনর্বাসন ও সম্প্রসারণ কাজ চলছে

ফিরোজ মান্না ॥ ঢাকা ওয়াসার জোন-৬ অঞ্চলে ৩৭৬ কিলোমিটার পানির পাইপ লাইন পুনর্বাসন ও সস্প্রসারণের কাজ শুরু হয়েছে। পানির গুণগত মান নিশ্চিতকরণে পর্যায়ক্রমে মহানগরীর সব এলাকায় পানির পাইপ লাইনের সম্প্রসারণ ও পুনর্বাসন কাজ করা হবে। কাজটি শেষ করতে সাড়ে তিন বছর সময় লাগবে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) আর্থিক সহযোগিতায় ঢাকা ওয়াসা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে নগরীর পানি অনেকটাই নিরাপদ হবে। ওয়াসা সূত্র জানায়, নগরীতে দৈনিক পানির চাহিদা পুরোপুরি পূরণের সক্ষমতা অর্জনের পর ঢাকা ওয়াসা এবার সরবরাহকৃত পানির গুণগত মান নিশ্চিতকরণে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ঢাকা ওয়াসার ‘পরিবেশবান্ধব টেকসই পানি সরবরাহ প্রকল্পের’ (ডিইএসডব্লিউএসপি) আওতায় বর্তমানে ছয়টি প্যাকেজের অধীনে ৬৪টি ডিএমএর (ডিস্ট্রিক্ট মিটারিং এরিয়া) মাধ্যমে রাজধানীর দুই হাজার কিলোমিটার পানির পাইপ লাইন পুনর্বাসন ও সম্প্রসারণের কাজ চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি এপ্রিল থেকে ঢাকা ওয়াসার মড্স জোন-৬-এর আওতায় (ফকিরাপুল, মালিবাগ, মগবাজার, মৌচাক, রামপুরা ও সংলগ্ন এলাকা) প্রায় ৩৭৬ কিলোমিটার পানির লাইন পুনর্বাসন ও সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়েছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) আর্থিক সহায়তায় সাড়ে তিন বছর সময়সীমার মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। প্রকল্পটি শেষ হলে নতুন পাইপ লাইনের মাধ্যমে পানির গুণগত মান নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। ঢাকা ওয়াসার সিস্টেম লসও অনেকাংশে কমে যাবে। এই নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ঢাকা ওয়াসার সঙ্গে আরএফএল প্লাস্টিক লিমিটেড (আরপিএল) ও চায়না রেলওয়ে ফার্স্ট গ্রুপ লিমিটেডকে (সিআরএফজি) প্রকল্পের ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। গত মাসে ঢাকা ওয়াসার সঙ্গে উভয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান, আরএফএল প্লাস্টিক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহসান খান চৌধুরী, সিআরএফজির পরিচালক লিউ যাদংসহ ঢাকা ওয়াসার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালকবৃন্দও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান বলেন, কয়েক বছরে ঢাকা ওয়াসা তার কার্যক্রম ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। ঢাকা ওয়াসা ক্রমেই একটি টেকসই, পরিবেশ-বান্ধব ও গণমুখী পানি সরবরাহ ব্যবস্থাপনার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। বর্তমান সরকারের আমলে ঢাকা ওয়াসার সক্ষমতা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে রাজধানীতে পানির কোন সঙ্কট নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন। ঢাকা ওয়াসা এখন পানির গুণগত মান নিশ্চিতকরণে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে পুরনো পাইপ লাইন বদলে নতুন লাইন স্থাপন ও সস্প্রসারণের কাজ হাতে নিয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ঢাকা ওয়াসাই প্রথম ডিএমএ পদ্ধতিতে পানির লাইন স্থাপনের উদ্যোগ নেয় এবং এ কাজে সফল হয়। ভবিষ্যতে উন্নত বিভিন্ন দেশের মতো পানযোগ্য ট্যাপ ওয়াটার সরবরাহের পরিকল্পনা ঢাকা ওয়াসার রয়েছে বলে তিনি জানান। এদিকে ওয়াসা সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে ওয়াসা প্রতিদিন ২৪২ কোটি লিটার পানি উৎপাদন করছে। ঢাকাবাসীর দৈনিক পানির চাহিদা ২২৫Ñ২৩০ কোটি লিটার। পরিবেশবান্ধব পানি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে গত তিন বছরে ঢাকা ওয়াসা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখিয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। তিন বছর আগে উৎপাদিত মোট পানির ৮৭ শতাংশ আসত ভূগর্ভস্থ উৎস থেকে। এখন তা কমিয়ে ৭৮ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। ভূ-উপরিস্থ উৎস থেকে এখন চাহিদার ২২ শতাংশ পানির যোগান পাওয়া যাচ্ছে। এখন আর কেউ বলতে পারবে না যে পানির সঙ্কট আছে। তবে হ্যাঁ, এলাকাভেদে কিছু সমস্যা তো হতেই পারে। যদি কোন এলাকা উঁচু হয় সেই এলাকায় পানি সরবরাহ স্বাভাবিক হবে না। আবার কোন এলাকায় পুরনো পাম্পে ‘ফিল্টার জাম’ হয়ে আছে। পুরনো পাম্পগুলো নিয়মিত সংস্কারের কাজ করা হয়। এই সময়ে কিছু সমস্যা হতে পারে। ওইসব এলাকার অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ওয়াসার কর্মীদের প্রস্তুত রাখা আছে। ঢাকা ওয়াটার সাপ্লাই এ্যান্ড স্যানিটেশন প্রকল্পের আওতায় ঢাকা শহর বৃষ্টি বা বন্যার পানি নিষ্কাশনে পাম্প স্থাপন, ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন, খাল পুনরুদ্ধার ও এক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত নিম্নআয়ের মানুষের পুনর্বাসন এবং ঢাকা ওয়াসার প্রাতিষ্ঠানিক মান উন্নয়নসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করার কথা ছিল। ৩৬০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ঢাকা মহানগরে ওয়াসার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা রয়েছে ২৯০ কিলোমিটার এলাকায়। এই ড্রেনেজ লাইন ঘণ্টায় ১০ মিলিমিটার বৃষ্টি ধারণ করতে পারে। এর মধ্যে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের পানি নিষ্কাশনের লাইন রয়েছে মাত্র ১৬০ কিলোমিটার এলাকায়। ঢাকা ওয়াসার ভূগর্ভস্থ পানির নর্দমা লাইন ও ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ডিসিসি ভূউপরিস্থ (সারফেস ড্রেন) প্রায় আড়াই হাজার কিলোমিটার। এর মধ্যে তিন ভাগের এক ভাগের বেশি ড্রেন নানা কারণে ব্যবহারের অনুপযোগী। ওয়াসার ড্রেনগুলোর চিত্রও এখন বেহাল। এই ড্রেনগুলো অচিরেই সংস্কার ও নতুন করে করার জন্য প্রকল্প হাতে নেয়া হবে।
×