ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পুকুর নালা শুকিয়ে গেছে

বাগেরহাটে তীব্র পানি সঙ্কট

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ৬ জুন ২০১৫

বাগেরহাটে তীব্র পানি সঙ্কট

বাবুল সরদার, বাগেরহাট ॥ বাড়ির অদূরে খাল ও বাড়ির মধ্যে পুকুর থাকার পরেও গৃহবধূ ফিরোজা বেগম চলতি দাবদাহের মধ্যে গত তিন দিনে মাত্র একবার গোসল করেছেন। বাঁধ দেয়ার কারণে খালে পানি নেই, যৎসামান্য যা আছে তা তীব্র লবণাক্ত। আর পুকুর ২০-২২ দিন আগেই শুকিয়ে গেছে। একটু দূরে একটা টিউবওয়েল আছে, যা থেকে অনেক কষ্টে পানি তুলতে হয়। তাও নোনাস্বাদের, স্থানীয়দের চাহিদার তুলনায় যা একেবারেই অপ্রতুল। বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার বাইনতলা ইউনিয়নের বারুইপাড়া গ্রামে ফিরোজা বেগমের বাড়ি। তাঁর দুই ছেলেমেয়ে। ইমরান ও রাবেয়া। মা-মেয়ের দশা একই রকম হলেও ছেলে ইমরান প্রতিদিন তিন কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে এক পুকুরে গোসল করতে যায়। ফিরোজা বেগম জানান, ‘বাবা, আমাগো কষ্টের কথা শুনে কী হবে, তিন দিন গোসল করতি পারি না, খরায় সব শুকোয়ে যাচ্ছে, কোন জায়গায় পানি নেই, লবণ যম্মের বাড়া বাড়িছে (খুব বেশি), ঘেরের মাছ সব মইরে যাচ্ছে, পানি ব্যাগরে (অভাবে) আমরা মইরে যাব...।’ প্রায় একই কথা জানালেন এ গ্রামের অধিকাংশ মানুষ। শুধু বারুইপাড়া গ্রাম নয়, দুর্ভোগের এ চিত্র গোটা রামপাল উপজেলার মানুষের। রামপাল উপজেলা চেয়ারম্যান আবু সাঈদের ভাষায়, ‘সব লবণ হয়ে গেছে, পানির খুব অভাব, পুকুর-নালাও শুকোয়ে গেছে, ...গরমে ঘেরের মাছও সব মরে যাচ্ছে..., রোগ-পীড়ে বাড়তিছে।’ রামপালের মতো শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ, মংলা উপজেলার একই দশা। বাগেরহাটের অধিকাংশ এলাকার মানুষ বিশুদ্ধ পানীয়জলের অভাবে কষ্টের মধ্যে রয়েছেন। প্রচ- দাবদাহের মধ্যে পানির সঙ্কটে তারা ছটফট করছেন। কোথাও কোথাও গোসল ও রান্নার পানিও নেই। মানুষ বাধ্য হচ্ছে যাচ্ছেতাই পানি ব্যবহার করতে। এ অবস্থায় পানিবাহিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। গত এক মাসে জেলার বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এক হাজারের অধিক মানুষ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে, যাদের অধিকাংশই শিশু ও বৃদ্ধ। উপকূলীয় এ অঞ্চলে পানি সঙ্কট নিরসনের জন্য ২০০৭ সালের প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় সিড়রপরবর্তী সরকারী, বেসরকারী উদ্যোগে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য সহস্রাধিক গভীর নলকূপ, রেইনওয়াটার হারবেস্ট্রিং ও পিএসএফ নির্মাণ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। আবার কাজের মান নিম্ন হওয়ায়, পানি শুকিয়ে যাওয়ায় বা পানির স্তর নেমে যাওয়ায় এগুলোর অন্তত ৪০ ভাগ ইতোমধ্যে অকেজো হয়ে পড়েছে। উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল সূত্র জানায়, শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণে কোন কোন এলাকায় পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যাচ্ছে না। আবার কোথাও পানি পাওয়া গেলেও অতিরিক্ত লবণাক্ততার কারণে নতুন করে টিউবওয়েল স্থাপন করা যাচ্ছে না। শরণখোলা উপজেলার পূর্বখাদা গ্রামের স্কুলছাত্রীআসমা আক্তার সুমি (১৪) বলে, তার বাড়ির কাছাকাছি বিশুদ্ধ পানি না থাকায় প্রতিদিন এক-দেড় কিলোমিটার দূর থেকে পানি সংগ্রহ করতে হয়। শরণখোলা ও রামপালের অধিকাংশ ইউপি চেয়ারম্যান জানান, প্রতিটি ইউনিয়নে পিএসএফগুলো সংস্কার ও গভীর করে পুকুর খনন খুবই জরুরী। নতুবা এ সঙ্কট আরও তীব্রতর হবে বলে তারা আশঙ্কা করেন।
×