ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নাশকতার বিচার কবে?

প্রকাশিত: ০৪:০২, ৬ জুন ২০১৫

নাশকতার বিচার কবে?

বিএনপি-জামায়াত জোটের টানা ৯২ দিনের ‘ হরতাল-অবরোধ’-এর নামে নাশকতার ঘটনায় দায়ের করা মামলাগুলোর বিচারে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হচ্ছে না। বিদ্যমান আইনেই এসবের বিচার করা হবে। এক দিকে এ সংক্রান্ত অধিকাংশ মামলারই তদন্ত কাজ শেষ হয়নি। এখনও কোন একটি মামলার বিচার কাজ শুরু করা যায়নি। অনেক আসামি প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কারও কারও বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকলেও এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে। মামলাগুলো নেয়া হয়েছে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে। এখন বলা হচ্ছে, নাশকতার মামলাগুলো যে সব অপরাধের জন্য দায়ের করা হয়েছে সে সব অপরাধ সুনির্দিষ্ট আইনে সন্নিবেশিত রয়েছে। হরতাল, অবরোধ ও বিভিন্ন প্রকার নাশকতার নামে দেশের নিরীহ জনগণ ও তাদের জানমাল যারা ক্ষতি করেছে, সেসব সন্ত্রাসীকে বিদ্যমান সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় এনে শাস্তির বিধান রয়েছে। এ আইনের ধারাঅনুযায়ী জানুয়ারি-মার্চ সময়ে সংঘটিত নাশকতাসহ অন্যান্য অপরাধের জন্য প্রায় সারাদেশেই মামলা হয়েছে। আইনানুযায়ী নাশকতার জন্য অর্থের যোগানদাতাদেরও বিচারের আওতায় রাখা হয়েছে। মামলাগুলো জামিন অযোগ্য এবং বিধি অনুযায়ী ৬০ দিনের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করার কথা। এ ক্ষেত্রে অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ-। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির পূর্বাপর সহিংসতা ও নাশকতার ঘটনায় করা প্রায় ১০০ মামলা গত ফেব্রুয়ারিতে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নেয়া হয়। এসব মামলায় সহস্রাধিক সন্ত্রাসীর নাম রয়েছে। ২০১৫ সালের ৯২ দিনে সংঘাত নাশকতার অধিকাংশ মামলা একই আইনের আওতায়। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায়কে কেন্দ্র করে সহিংসতা, অন্যান্য সহিংসতা, জননিরাপত্তা বিঘœ করা, পেট্রোলবোমা তৈরি ইত্যাদি ঘটনায় বিভিন্ন জেলায় মামলাগুলো হয়েছে। চলতি বছর জানুয়ারি-মার্চ পর্যন্ত দেশজুড়ে পেট্রোলবোমা মেরে মানুুষ হত্যা, যানবাহন পোড়ানো, সম্পদহানিসহ সহিংসতা, নাশকতা, চোরাগোপ্তা হামলা চালানো হয়। এ সময় জনজীবন হয়ে পড়ে বিপর্যস্ত। দেশকে অরাজকতার দিকে ঠেলে দেয়ার চেষ্টা চলে। তারা কয়েকটি অঞ্চলকে সশস্ত্র দখলে রাখে। যোগাযোগ ব্যবস্থা হয়ে পড়ে বিপর্যস্ত। এবার শব-ইÑবরাতেও চান্দিনায় যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোলবোমা মেরে যাত্রীদের দগ্ধ করেছে সন্ত্রাসীরা। এরা এখনও সক্রিয়। এই সন্ত্রাসকে নির্মূল করা যায়নি। দ্রুত বিচারে সাজা হলে এদের তৎপরতা বন্ধ হতে পারে। দেশবাসী চায় পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ হত্যার ঘটনার বিচার দ্রুত হোক। যখন দেশজুড়ে নাশকতা চলছিল সেই সময় ১৮ ফেব্রুয়ারি আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, চলমান অবরোধ-হরতালে নাশকতাকারীদের বিচারে সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হবে। এর আগে হাইকোর্ট ‘হরতাল ও অবরোধের নামে নৈরাজ্য রোধে’ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারকে নির্দেশ দেন। ঐ সময় মন্ত্রী আরও উল্লেখ করেছিলেন, অপরাধগুলো যখন ক্রমাগত হচ্ছে তখন ‘এন্টি টেরোরিজম’ স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল গঠনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তবে সন্ত্রাসবিরোধী আইন অনুযায়ী ও ট্রাইব্যুনাল গঠনের পূর্ব পর্যন্ত প্রচলিত আইনে দায়রা জজ বা অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতে এ ধরনের অপরাধীদের বিচার হবে। আইন কমিশনের চেয়ারম্যানও বলেছেন, বিদ্যমান সন্ত্রাসবিরোধী আইনে বিচার করা সম্ভব। সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অব্যবহৃত ধারাটি ব্যবহার করে মামলা চালানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। কিন্তু ৬০ দিনের মধ্যে বিচার শেষ করার বিধান পালন করাটাও জরুরী।
×