ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থ বরাদ্দ হলেও চালু হচ্ছে না শস্যবীমা

প্রকাশিত: ০৩:৫২, ৬ জুন ২০১৫

অর্থ বরাদ্দ হলেও চালু হচ্ছে না শস্যবীমা

রহিম শেখ ॥ বেশ কয়েক বছর ধরে বাজেটে শস্যবীমা চালুর জন্য অর্থ বরাদ্দ রাখা হলেও চালু হচ্ছে না শস্যবীমা। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী ও বীমা খাতের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) কয়েক দফা আলোচনায় বসেও ফলপ্রসূ কোন সমাধান হয়নি। সাধারণ বীমা কর্পোরেশন জানিয়েছে, শস্যবীমা চালু করতে হলে আগে আবহাওয়া পূর্বাভাস প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করতে হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিশেষ করে অতিবৃষ্টি, বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস, শিলাবৃষ্টি, খরা, লোনা পানির অনুপ্রবেশ ও লবণাক্ত, ভূমিকম্প, ঘূর্ণিঝড় ও সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস, কালবৈশাখী, উষ্ণতা বৃদ্ধি, উষ্ণ ও শৈত্যপ্রবাহ, নদী ভাঙ্গনের কারণেই অনেক কৃষি সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। ফলে ব্যাহত হয় দেশের কৃষি উৎপাদন। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় কৃষকরা। সর্বস্ব হারিয়ে কৃষকদের অনেকেই কৃষিতে বিনিয়োগে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। এ সমস্যা মোকাবেলা করতে ১৯৭৭ সালে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা থানায় দেশের প্রথম শস্যবীমা চালু করা হয়। পরবর্তী ৪ বছরে এ বীমার আওতা সম্প্রসারণ করা হয় দেশের ৫৬টি থানায়। তখন প্রায় ২৫ হাজার একর ফসলের ওপর ২০ হাজারেরও বেশি কৃষক শস্যবীমার আওতায় ছিল। কিন্তু ১৯৯৫ সালে শস্যবীমা বন্ধ করে দেয়া হয়। এর কারণ দেখানো হয় বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোর লোকসান। কিন্তু বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর কৃষকদের শস্যমূল্য সহায়তা করতে শস্যবীমার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু সরকার এখন তা থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে। ফলে গত ৫ বছর ধরেই প্রতিটি অর্থবছরের বাজেটে শস্যবীমার জন্য বরাদ্দ থাকলেও তা থেকে কোন টাকাই খরচ হচ্ছে না। শস্যবীমা চালুর বিষয়ে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সদস্য জুবের আহমেদ খান জানান, ১৯৯৫ সালে বন্ধের পর থেকে বিভিন্ন কারণে শস্যবীমা চালু করা সম্ভব হয়নি। এর জন্য আরও সময় দরকার। অর্থ মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তবে ফলপ্রসূ কিছু হয়নি। এবারের বাজেটের দিকে তাকিয়ে আছেন তারা। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, শস্যবীমাকে দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত মোকাবেলার কর্মপরিকল্পনা ও নীতির মূলধারায় স্থান দিতে হবে। দুর্যোগ মোকাবেলায় ত্রাণভিত্তিক ব্যবস্থার চেয়ে এ বীমা ব্যবস্থা প্রবর্তন অনেক বেশি কার্যকর ও দীর্ঘমেয়াদে লাভজনক। সূত্র জানায়, ২০১০-১১ অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে ভর্তুকি বাবদ ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হলেও কোন অর্থ ব্যয় হয়নি। পরের অর্থবছরে ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হলেও তাও ব্যয় হয়নি। এরপর ২০১৪ সালে পরীক্ষামূলকভাবে দেশের তিনটি জেলায় শস্যবীমা পাইলট প্রকল্প হিসেবে চালু করা হয়। এজন্য জাপানের দারিদ্র্যবিমোচন তহবিল থেকে ২০ লাখ মার্কিন ডলার দেয়া হবে। এ নিয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এ তহবিলের ব্যবস্থাপক এবং কারিগরি সহায়তা দেবে। কিন্তু সেটার বাস্তবায়নও থমকে গেছে। এদিকে বিশ্ব খাদ্য সংস্থার (ফাও) আগাম পূর্বাভাসে জানিয়েছে, আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে প্রতি বছর গড়ে কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ১ শতাংশ হারে হবে। যদিও এই ক্ষতি পুরোটাই পড়বে কৃষকের ঘাড়ে। কিন্তু দেশে দুর্যোগের প্রবণতা বাড়লেও শস্য খাতে বীমাব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। ফলে কৃষক ক্ষতির শিকার হলেও ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কোন ব্যবস্থা থাকছে না। সূত্রটি জানায়, মূলত এখনও সরকার দেশে শস্যবীমা চালুর করার সুনির্দিষ্ট কোন প্রকল্প যেমন হাতে নেয়নি, তেমনি এজন্য সরকারী অনুমোদন প্রক্রিয়াও শেষ করেনি। এমনকি এখনও কোন প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়নি। বরং কৃষক ও কৃষির স্বার্থে সরকারের শস্যবীমা উদ্যোগ এখনও কাগজ-কলমেই সীমাবদ্ধ। ফলে কৃষকরা যেমন সরকারের এ ব্যাপারে অবগত নয়, তেমনি সরকারও কৃষকদের জানাতে কোন ধরনের প্রচার চালায়নি। শস্যবীমা নিয়ে সরকারের এমন অবস্থাকে সংশ্লিষ্টরা সরকারের সদিচ্ছার অভাবকেই দায়ী করছে। কারণ এ চালুর বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আগ্রহ থাকলেও কৃষি মন্ত্রণালয় তাতে কোন সহযোগিতা করছে না। ফলে এ খাতে বরাদ্দের টাকাও খরচ করা সম্ভব হচ্ছে না।
×