ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

গার্মেন্টস শিল্পের উৎসে কর বৃদ্ধির প্রস্তাব

প্রকাশিত: ০৬:০২, ৫ জুন ২০১৫

গার্মেন্টস শিল্পের উৎসে কর বৃদ্ধির প্রস্তাব

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে তৈরি পোশাক শিল্পের উৎসে কর প্রায় আড়াইগুণ বাড়িয়ে ১ শতাংশ করা হচ্ছে, যা চূড়ান্ত কর হিসেবে বিবেচিত হবে। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে তৈরি পোশাক পণ্যের রফতানি মূল্যের ওপর আরোপিত বর্তমান দশমিক ৩০ শতাংশ উৎস কর থেকে বৃদ্ধির এ প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। অন্য সব রফতানি পণ্যের ক্ষেত্রেও রফতানি মূল্যের ওপর উৎসে করহার দশমিক ৬০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে একই করহারকে চূড়ান্ত কর হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছে। বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী জানান, বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় গত অর্থবছরে তৈরি পোশাক ও অন্য সব রফতানি পণ্যের ওপর করহার যথাক্রমে রফতানি মূল্যের দশমিক ৩০ শতাংশ ও দশমিক ৬০ শতাংশে নামানো হয়। মুহিত বলেন, আমাদের কাপড় এবং পোশাক শিল্প নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা উপভোগ করে। এছাড়া আরও রফতানি দ্রব্যও এই সুযোগ পায়। এই সুযোগটি শুধু এক বছরের জন্য দেয়া হয়েছিল। তাই এবারে এই সুযোগ প্রত্যাহার করে তৈরি পোশাক, টেরি টাওয়েল, কার্টন ও এক্সেসরিজ, পাট ও পাটজাত পণ্য, হিমায়িত মাছসহ সকল রফতানি পণ্যের রফতানি মূল্যের ওপর ১ শতাংশ হারে উৎসে কর কর্তনের প্রস্তাব করছি এবং একইসঙ্গে উক্ত কর সকল ক্ষেত্রে করদাতার চূড়ান্ত করদায় হিসেবে গণ্য করার প্রস্তাব করছি। পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন পুনর্নির্ধারণ ও ২০১৩ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে গত বছর তৈরি পোশাক রফতানি মূল্যের উৎসে করহার দশমিক ৮০ শতাংশ থেকে কমিয়ে দশমিক ৩০ শতাংশ করা হয়। এই করহার কমানোর ফলে বছরে সরকারের রাজস্ব আয় ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা কম হবে বলে সেসময় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড জানায়। তবে দশমিক ৩০ শতাংশ উৎসে করকে চূড়ান্ত কর হিসেবে গণ্য করে মোট পাঁচ বছরে জন্য এই সুবিধা বহাল রাখার দাবি জানিয়ে আসছে তৈরি পোশাক রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাৎক্ষণিক বাজেট প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ এক্সপোর্টারস এ্যাসোসিয়েশনের (ইএবি) সভাপতি ও তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী জাগো জনকণ্ঠকে বলেন, বর্তমানে তৈরি পোশাক খাত বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে। সব ধরনের খরচ বেড়েছে। ইউটিলিটি বিল বেড়েছে আগের তুলনায় ৪০ শতাংশ। বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমলেও দেশের বাজারে তা কমেনি, ঋণের সুদহারও বেশি। বেড়েছে শ্রমিকের বেতন-ভাতা, সব মিলিয়ে আমরা কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে আমাদের রফতানি প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে মাত্র ২ শতাংশে। যেখানে আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলোর রফতানি প্রবৃদ্ধি ১৫ থেকে ২০ শতাংশ। এমন অবস্থায় পোশাক খাতে আগের চেয়ে ব্যয় বেড়েছে কিন্তু ভাল দাম মিলছে না। উল্টো ক্রেতারা পোশাকের দাম কমানোর চাপ দিচ্ছেন। এখন পোশাক খাতের আরেকটি চ্যালেঞ্জ দামের সক্ষমতা। এ ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা করে আন্তর্জাতিক বাজারে এগিয়ে যেতে হবে। এমন অবস্থায় সরকার পোশাক রফতানিতে উৎসে কর বাড়ায় তাহলে রফতানি প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন এ ব্যবসায়ী। তৈরি পোশাক খাত দেশের অর্থনীতির মেরুদ- উল্লেখ করে সালাম মুর্শেদী বলেন, এ খাতের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সার্বিক বিবেচনায় উৎসে করসহ সব ধরনের প্রণোদনা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। আমরা অর্থমন্ত্রীর কাছে আমাদের প্রস্তাব দিয়েছি। তিনি আমাদের সঙ্গে একমত হয়েছেন। আমরা আশা করছি অর্থমন্ত্রী তৈরি পোশাক শিল্পের কল্যাণে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা বহাল রাখবেন। এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ সহ-সভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম বলেন, গত তিন মাস রাজনৈতিক অস্থিরতায় আমাদের কাজ ছিল না। প্রবৃদ্ধি কমে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে তৈরি পোশাক খাত এখন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এ অবস্থায় উৎসে কর বাড়ানো আর রফতানিতে নগদ সহায়তা কমালে বিপদে পড়বে পোশাক মালিকরা। বিশেষ করে ছোট ছোট ফ্যাক্টরিগুলো বেশি সমস্যায় পড়বে। আর যে সব প্রতিষ্ঠান এখন ক্ষতির মধ্যে রয়েছে তা অনেক বন্ধ হয়ে যাবে। তৈরি পোশাক শিল্পের এই চ্যালেঞ্জিং সময়ে এ খাতের সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ আন্তর্জাতিক বাজারে টিকিয়ে রাখতে কর না বাড়িয়ে সব ধরনের প্রণোদনা অব্যাহত রাখার অনুরোধ জানান শহিদুল্লাহ আজিম।
×