ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিদ্যুত উৎপাদনের মূল জ্বালানি কয়লা

প্রকাশিত: ০৬:০১, ৫ জুন ২০১৫

বিদ্যুত উৎপাদনের মূল জ্বালানি কয়লা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আমদানিনির্ভর কয়লাকেই বিদ্যুত উৎপাদনের প্রধান জ্বালানি হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার। ঘোষিত বাজেটে আট হাজার ৭১১ মেগাওয়াট কয়লাচালিত বিদ্যুত কেন্দ্রের চুক্তির কথা উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছেন, ২০১৫ সালের পর কয়লাকে বিদ্যুত উৎপাদনের মূল জ্বালানি হিসেবে বিবেচনা করছে সরকার। যদিও বাজেটে দেশীয় কয়লা তোলার বিষয়ে বরাবরের মতো কোন পদক্ষেপের সুস্পষ্ট ঘোষণা আসেনি। ঘোষিত বাজেটে বিদ্যুত, জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ খাতে ১৮ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। উন্মুক্ত-ভূগর্ভস্থ বিতর্কে দেশীয় কয়লার ব্যাপক ব্যবহার থেকে বিরত রয়েছে সরকার। কিন্তু দেশে জ্বালানি সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করছে। বলা হচ্ছে, দেশে উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের নিট মজুদের পরিমাণ ১৪ দশমিক ছয় ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ)। দেশের প্রধান জ্বালানির মজুদ দ্রুত শেষ হয়ে আসায় সরকার একটি সঙ্কোচনশীল ব্যবহারনীতি নিচ্ছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, উৎপাদনশীল খাতের বাইরে দৈনন্দিন রান্নার কাজে গ্যাস সংযোগ প্রদানের প্রথা থেকে বেরিয়ে আসতে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। দেশে গ্যাসের সঙ্কট সমাধানে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করার কথা বাজেটে উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেন গ্যাস অনুসন্ধান, উৎকলন, আমদানি, বিতরণ ব্যবহারে একটি সমন্বিত দীর্ঘমেয়াদী মহাপরিকল্পনা গ্রহণ খুব জরুরী। কয়লা প্রধান জ্বালানি বিবেচনা প্রসঙ্গে বাজেটে বলা হয়, বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানির রামপাল-এক হাজার ৩০০ মেগাওয়াট, মাতারবাড়িতে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) সঙ্গে ঋণচুক্তি স্বাক্ষর। এছাড়া চীন, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া এবং সিঙ্গাপুরের আর্থিক সহায়তায় এক হাজার ২০০ মেগাওয়াটের ৪টি বিদ্যুত কেন্দ্র; যার মোট উৎপাদন ক্ষমতা চার হাজার ৮০০ মেগাওয়াট, পটুয়াখালির পায়রায় এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট এবং সরকারী- বেসরকারী মিলিয়ে আরও এক হাজার ৪১১ মেগাওয়াট কয়লাবিদ্যুত কেন্দ্রের চুক্তি করা হয়েছে। এর ভিত্তিতে কয়লাকে বিদ্যুত উৎপাদনের প্রধান জ্বালানি বিবেচনা করা হচ্ছে। যদিও এখন পর্যন্ত কোন্ উৎস থেকে কয়লা আমদানি করা হবে তা-ই ঠিক করতে পারেনি সরকার। তবে দেশে গ্যাস সঙ্কটের কারণে বিকল্প জ্বালানিতে গমন ছাড়া সরকারের কোন উপায় নেই। কয়লা ছাড়াও সরকার পারমাণবিক উৎস থকে ২০২২ সালের মধ্যে দুই হাজার এবং ২০৩০ সালের মধ্যে চার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এছাড়া সরকার প্রতিবেশী বিভিন্ন দেশ থেকে অন্তত আরও ছয় হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানির পরিকল্পনা করছে। এসব প্রকল্পের কাজ চলবে ২০৩০ পর্যন্ত। তবে ভারত থেকে আরও ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আসবে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে। আর ২০১৭ সালের মধ্যে আরও ৫০০ মেগাওয়াট দেশটির বেসরকারী খাত থেকে আমদানি করা হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিশেষ উন্নয়নের মধ্য দিয়ে ২০২০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎস থেকে দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। এছাড়া এখন ৫০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুত উৎপাদনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হচ্ছে। উৎপাদন পরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গে সঞ্চালন-বিতরণ ব্যবস্থায়ও জোর দেয়ার বিষয়টি বাজেটে উল্লেখ করা হয়েছে। বাজেট বক্তৃতায় বলা হয়েছে, উৎপাদিত বিদ্যুত সকলের কাছে পৌঁছে দিতে ১০ হাজার কিলোমিটার নতুন সঞ্চালন লাইন এবং এক লাখ ৫০ হাজার কিলোমিটার নতুন বিতরণ লাইন নির্মাণ করা হবে। দেশে জ্বালানি উৎপাদন বৃদ্ধি করতে গভীর এবং অগভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান করার কথা বলা হয়েছে। কয়লার বিষয়ে আগে থেকে উৎপাদনরত বড়পুকুরিয়া খনির উত্তোলন বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। দেশের অন্য খনিগুলোর অনুসন্ধান বা উত্তোলন বিষয়ে বাজেটে কিছু বলা হয়নি। জ্বালানি সঙ্কটের সমাধানের জন্য ২০১৭ সাল নাগাদ দেশে এলএনজি আমদানি শুরু হবে বলে বক্তৃতায় জানান অর্থমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুতের সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিত করতে আগামী তিন বছরের মধ্যে পর্যায়ক্রমে সকল গ্রাহককে প্রিপেইড মিটার দেয়া হবে। ইতোমধ্যে বিতরণ কোম্পানিগুলো এ কাজ শুরু করেছে। উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশে জ্বালানি সাশ্রয়ের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে ২০১৬, ২০২১ এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ১০, ১৫ এবং ২০ শতাংশ জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আনা হবে। এছাড়া শিল্প কারখানায় জ্বালানি ব্যবহার নিরীক্ষা এবং জ্বালানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া জনগণকে সাশ্রয়ী ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতে বিদ্যুত সাশ্রয়ী যন্ত্রাংশ ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা হবে।
×