ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অধ্যাপক হাসান আবদুল কাইয়ূম

প্রসঙ্গ ইসলাম ॥ ইসলামের আলোকে তকদীর ও তদবীর

প্রকাশিত: ০৪:৪৬, ৫ জুন ২০১৫

প্রসঙ্গ ইসলাম ॥ ইসলামের আলোকে তকদীর ও তদবীর

তকদীরে বিশ্বাস করা ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। সাধারণত তকদীর বলতে আমরা বুঝি নিয়তি, অদৃষ্ট, বিধিলিপি, ভাগ্যের লিখন, কপাল, বরাত, কিসমত ইত্যাদি। কথায় আছে, ভাগ্যের লিখন কে খ-াতে পারে? ইংরেজীতেও একটি কথা আছে, হোয়াট ইজ লটেড ক্যান নট বি ব্লটেড। তকদীর শব্দের শব্দমূল হচ্ছে কদর। কদর বা কাদ্্রুন শব্দের অর্থ হচ্ছে পরিমাণ নির্ধারণ, পরিমাপ, পরিমিতি, মূল্যায়ন, নির্দিষ্ট সীমা, মূল্য নিরূপন, অদৃষ্ট, নিয়তি, ভাগ্য ইত্যাদি। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে : আল্লাযী লাহু মুল্্কুস্্ সামাওয়াতি ওয়াল্্ র্আদি ওয়ালাম্্ ইয়াত্তাখিয্্ ওয়ালাদাও ওয়ালাম্্ ইয়াকুল্্ লাহু শরীকুন্্ ফীল্্ মুল্কি ওয়া খালাকা কুল্লা শায়ইন্্ ফাকাদ্্ দারাহু তাকদীরা- যিনি আকাশম-লী ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্বের অধিকারী; তিনি কোন সন্তান গ্রহণ করেননি; সার্বভৌমত্বের তাঁর কোন শরীক নেই। তিনি তাবত্্ কিছু সৃষ্টি করেছেন এবং প্রত্যেককে পরিমিত করেছেন যথাযথ অনুপাতে (সূরা ফুরকান : আয়াত ২)। সাব্বিহিস্্ মা রব্বিকাল আ’লাল্লাযী খালাকা ফাসাওওয়া ওয়াল্লাযী কাদ্্দারা ফাহাদা- তুমি তোমার মহান রবের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর, যিনি সৃষ্টি করেন ও সুঠাম করেন এবং যিনি পরিমিত বিকাশ সাধন করেন ও পথনির্দেশ করেন (সূরা আ’লা : আয়াত ১-৩)। এসব আয়াতেকারীমা থেকে এটা সুষ্পষ্ট হয়ে যায় যে, সৃষ্টি জগতের মহান স্রষ্টা আল্লাহ্্ জাল্লা শানুহু তাবত্্ কিছুর প্রত্যেকটিকে এক নির্ধারিত পরিমাপে সৃষ্টি করেছেন এবং যে পরিকল্পনাধীনে ও যে উদ্দেশ্যে যা সৃষ্টি করেছেন তার মধ্যে সেই অনুযায়ী স্বভাবগুণ ও বৈশিষ্ট্যও দান করেছেন এবং নির্দিষ্ট সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আল্লাহ্্ জাল্লা শানুহু ইরশাদ করেন : ইন্না কুল্লা শায়ইন খালাক্্ নাহু বিকাদারিÑ নিশ্চয়ই আমি প্রত্যেক কিছু সৃষ্টি করেছি নির্ধারিত পরিমাপে (কাদার) (সূরা কামার : আয়াত ৪৯)। আর সূর্য পরিক্রম করে তার নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে, এটা পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞের নিয়ন্ত্রণ (তকদীর) এবং চন্দ্রের জন্য আমি নির্দিষ্ট করেছি (কাদ্্দারনা) বিভিন্ন মন্যিল (চন্দ্রকলার হ্রাস-বৃদ্ধি দ্বারা নিরূপিত ও সীমাবদ্ধকাল তথা তিথি)। অবশেষে তা শুস্ক বাঁকা পুরনো খেজুর ডালের আকার ধারণ করে। সূর্যের পক্ষে সম্ভব নয় চাঁদের নাগাল পাওয়া এবং রাতের পক্ষে সম্ভব নয় দিনকে অতিক্রম করা এবং প্রত্যেক নিজ নিজ কক্ষপথে সন্তরণ করে (সূরা ইয়াসীন : আয়াত ৩৮-৪০)। আল্লাহ্ জাল্লা শানুহুর নির্ধারিত নিয়মেই খাদ্যশস্যাদি, ফলমূল এবং অন্যান্য জিনিস উৎপন্ন হয়Ñ এটাও তকদীরের অন্তর্গত। এ ছাড়াও পৃথিবীতে যে বৃষ্টিপাত হয় এবং রাত আসে দিন যায়, দিন আসে রাত যায়Ñ এ সবই আল্লাহ্্র নির্দিষ্ট নিয়মেই হয়। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে : ওয়াল্লাহু ইউকাদ্দিরুল লায়লা ওয়ান্্ নাহারÑ আল্লাহ্্ই নির্ধারিত করেন দিন ও রাতের পরিমাণ (সূরা মুয্্যাম্মিল : আয়াত ২০)। আল্লাহ্্ জাল্লা শানুহু ইরশাদ করেন : আর এই যে পৃথিবী তাকে আমি বিস্তৃত করেছি, তাতে পর্বতমালা স্থাপন করেছি এবং তাতে প্রতিটা জিনিস উদ্্গত করেছি সুপরিমিতভাবে এবং তাতে জীবিকার ব্যবস্থা করেছি তোমাদের জন্য, আর তোমরা যাদের জীবিকাদাতা নও তাদের জন্য। আমারই নিকট আছে প্রত্যেক বস্তুর ভা-ার এবং আমি তা পরিজ্ঞাত পরিমাণেই (বি কাদারিম্্ মা’লুমি) সরবরাহ করে থাকি (সূরা হিজর : আয়াত ১৯-২১)। এবং আমি আকাশ হতে বারি বর্ষণ করি পরিমিতভাবে (বিকাদ্রিন্্) অতঃপর আমি তা মাটিতে সংরক্ষণ করি, আমি তা অপসারিত করতেও সক্ষম। অতঃপর আমি তা দ্বারা তোমাদের জন্য খেজুর ও আঙ্গুরের বাগিচা সৃষ্টি করি, এতে তোমাদের জন্য আছে প্রচুর ফল, আর তা থেকে তোমরা আহার করে থাক (সূরা মু’মিনূন : আয়াত ১৮-১৯)। সূরা যুখরুফের ১১ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে : এবং যিনি (আল্লাহ্্) আকাশ হতে বারি বর্ষণ করেন পরিমিতভাবে (বিকাদ্রিন্্)। অতঃপর আমি (আল্লাহ্) তা দিয়ে সঞ্জীবিত করি নির্জীব জনপদকে। মানুষ আল্লাহ্র সেরা সৃষ্টি। আল্লাহ্ জাল্লা শানুহু তাবত্ সৃষ্টির মতো মানুষেরও তকদীর নির্ধারণ করে দিয়েছেন। কুরআন মজীদে মানুষের সৃষ্টি এবং বিকাশ সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে : তিনি (আল্লাহ্) তাকে (মানুষকে) কোন বস্তু হতে সৃষ্টি করেছেন? শুক্রবিন্দু (নুত্ফা) হতে। তিনি তাকে সৃষ্টি করেন, তারপর তার পরিমিত বিকাশ সাধন করেন (খালাকাহু ফাকদ্্দারাহু) (সূরা আবাসা : আয়াত ১৮-১৯)। কুরআন মজীদে উল্লিখিত কাদর বা তকদীর বিষয়ক আয়াতেকারীমাসমূহ পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, তকদীর হচ্ছে আল্লাহ্্ জাল্লা শানুহুর বিশ্বজনীন নিয়মনীতি যা আল্লাহ্্ জাল্লা শানুহুর বিশাল কায়েনাতের জন্য সৃষ্টি জগতের তাবত্্ কিছুর জন্য, আল্লাহ্্র সেরা সৃষ্টি মানুষের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। আল্লাহ্্র এই নিয়মনীতি ও ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ার অধীনে বিশ্বজগত পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়ে আসছে। তকদীরের সঙ্গে কাদর ও কাদা (ফারসী উচ্চারণ কাযা)- এর সংশ্লিষ্টতা নিবিড়। তকদীরের শব্দ মূল কাদরের অর্থের সঙ্গের কাদা শব্দের অর্থেরও অনেকটা মিল খুঁজে পাওয়া যায়। মূলত কাদা হচ্ছে আল্লাহ্্ জাল্লা শানুহুর সৃষ্টিজগত সংক্রান্ত বিধি ব্যবস্থা; যাকে নিয়তি, ভাগ্য, অদৃষ্ট ইত্যাদিও বলা যেতে পারে। কাদার অর্থ সিদ্ধান্ত, হুকুম, মীমাংসা বা ফলসালা ইত্যাদিও হতে পারে। কুরআন মজীদে কাদা শব্দটি বিভিন্নভাবে, বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে : আর যখন তিনি (আল্লাহ্্) কোন কিছুর করার সিদ্ধান্ত (কাদা) গ্রহণ করেন তখন সে জন্য শুধু বলেন- হও (কুন) আর তা হয়ে যায় (ফাইয়াকুন) (সূরা বাকারা : আয়াত ১১৭)। হযরত ঈসা আলায়হিস্্ সালাম বাপ ছাড়াই জন্মগ্রহণ যে করেন তা সর্বজনবিদিত এটা একটা আল্লাহ্্ জাল্লা শানুহুর কুদ্্রতের এক মহারহস্য। হযরত আদম আলায়হিস্্ সালামও বিনা মা-বাপেই সৃষ্টি হন আর তাঁর বাম পাঁজরের বাঁকা হাড় থেকে উদ্ভব ঘটানো হয় মা হাওয়া আলায়হাস্্ সালামকে। এ সবই আল্লাহ্্র বিধিব্যবস্থা। কুরআন মজীদে হযরত মরিয়ম আলায়হাস্্ সালাম কুমারী অবস্থাতেই সন্তানসম্ভবা হচ্ছেন টের পেয়ে যেসব কথা বলেছিলেন তার বিস্তর বিবরণ রয়েছে। ইরশাদ হয়েছে : সে (মরিয়ম) বলল : হে আমার রব্্ আমাকে কোন পুরুষ স্পর্শ করেনি, আমার সন্তান হবে কিভাবে? তিনি (আল্লাহ্্) বললেন : এভাবেই, আল্লাহ্্ যা ইচ্ছে সৃষ্টি করেন। তিনি যখন কিছু স্থির (কাদা) করেন তখন বলেন, হও (কুন) আর তা হয়ে যায় (ফাইয়াকুন) (সূরা আল ইমরান : আয়াত ৪৭)। কুরআন মজীদে জীবন-মরণ সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে : তিনিই (আল্লাহ্্) জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান এবং যখন তিনি কোন কিছুর সিদ্ধান্ত (কাদা) গ্রহণ করেন তখন বলেন হও (কুন) আর তা হয়ে যায় (ফাইয়াকুন) (সূরা মু’মিন : আয়াত ৬৮)। আল্লাহ্্ যা করেন ভালর জন্যই করেনÑ এই চেতনা লালন করা এবং তাঁর বিধি ব্যবস্থায় সন্তুষ্ট থাকার মধ্যেই শান্তি। কোন মঙ্গলজনক বা কল্যাণকর কিছু ঘটলে আল্লাহ্্র উদ্দেশ্যে শোকর বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে, আর অমঙ্গলজনক কিছু ঘটলে তওবা-ইস্তিগ্ফার করতে হবে এবং ধৈর্য ধারণ করতে হবে। এই সঙ্গে আল্লাহ্্ জাল্লা শানুহুর রিযামন্দী, সন্তুষ্টি ও নৈকট্য (র্কুবত) পাওয়ার ইচ্ছে প্রবল করতে হবে এবং তদবীর ও আমল (কর্ম) করে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে রিদা বিল কাদা অর্থাৎ আল্লাহ্্র বিধি ব্যবস্থা সন্তুষ্ট থাকার মধ্য দিয়ে আল্লাহ্্র সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। নৈরাশ্যের বেদনাকে মুছে ফেলে আশার আলো জ্বালাতে হবে। তকদীরের সঙ্গে তদবীরের কোন সংঘাত নেই। তদবীরের ওপর দৃঢ়বিশ্বাস রেখে কাজ করে যেতে হবে। কার্য সম্পাদনের জন্য, সুফল ও কল্যাণ লাভের জন্য উপায়-উপরকণ ইত্যাদি অবলম্বনের মধ্যেই তদবীরের মর্ম নিহিত রয়েছে। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে : লাহা মা কাসাবাত হয়া আলায়হা মাক্্তাসাবাত- সে (মানুষ) ভাল যা উপার্জন করে তা তারই এবং সে মন্দ যা উপার্জন করে সেটাও তারই (সূরা বাকারা : আয়াত ২৮৬), কুল্লু নাফ্ সিম্্ বিমা কাসাবাত রাহীনা- প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কৃতকর্মের দায়ে আবদ্ধ (সূরা মুদ্দাছ্ছির : আয়াত ৩৮)। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে : ইন্নাল্লাহা লা ইউগাইরু মা বি কাওমিন্্ হাত্তা ইউগায়ইরু মা বি আন্্ ফুসিহিম- নিশ্চয়ই আল্লাহ্্ কোন জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না যতক্ষণ না ওরা নিজ অবস্থা নিজে পরিবর্তন করে (সূরা রা’দ : আয়াত ১১)। আল্লাহ্্ জাল্লা শানুহু বিশ্বজগত সৃষ্টি করেছেন তাঁরই সৃষ্ট ফিত্রাত বা প্রকৃতি তথা স্বভাব অনুযায়ী, একেই ইংরেজীতে বলা হয় ন্যাচার। সব মানুষকে আল্লাহ্্ জাল্লা শানুহু সৃষ্টি করেছেন নিষ্পাপ এবং নিষ্কলুষ করে। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে : তুমি একনিষ্ঠভাবে নিজেকে দীনে প্রতিষ্ঠিত কর। আল্লাহ্্র ফিত্্রতের অনুসরণ কর, যে ফিত্্রতের ওপর তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ্্র ফিত্্রতের অনুসরণ কর, যে ফিত্্রতের ওপর তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ্্র সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। এটাই সরল দীন (আল্লাহ্্র দেয়া পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা- ইসলাম) (সূরা রূম : আয়াত ৩০)। প্রত্যেক নবজাতক যে ভূমিষ্ঠ হয় ফিত্্রতের ওপর এ সম্পর্কে কয়েকখানি হাদীস রয়েছে। হযরত আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহ্্ তা’আলা আন্্হু থেকে বর্ণিত আছে যে, হযরত রসূলুল্লাহ্্ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : প্রতিটি নবজাতক জন্মগ্রহণ করে ফিত্্রতের ওপর। এরপর তার পিতামাতা তাকে ইয়াহুদী, নাসারা এবং মুশ্রিক বানায় (বুখারী শরীফ, তিরমিযী শরীফ)। মূলত কাদা ওয়াল কাদর তথা তকদীর লওহে মাহ্্ফুজে লিপিবদ্ধ রয়েছে। সেখানে বিস্তারিত বিবরণ লেখা হয়েছে এবং এটার লিপিবদ্ধ হয়েছে যে, তাঁর (আল্লাহ্্র) অনুকম্পা তাঁর ক্রোধের চেয়ে অগ্রবর্তী (বুখারী শরীফ)। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে : ফাল্লাহু খায়রুন্্ হাফিজাও ওয়া হুয়া র্আ্হার্ম্ ুরাহিমীনÑ আল্লাহ্্ই রক্ষণাবেক্ষণে শ্রেষ্ঠ এবং তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু (সূরা ইউসুফ : আয়াত ৬৪)। আল্লাহ্্ জাল্লা শানুহু মানুষকে ভাল-মন্দ, আলো-অন্ধকার, শুভ-অশুভ, গোনাহ্্-সওয়াব ইত্যাদির বিচার ক্ষমতা দান করেছেন এবং অসৎ পথ থেকে ফিরে এসে সৎ পথে চলবার নির্দেশ দিয়েছেন, পথের দিশা দিয়েছেন, দিশারী দিয়েছেন। মানুষ এই আল্লাহ্্ প্রদত্ত সুযোগ ও ক্ষমতাকে অপব্যবহার করলে বিপদে পড়বে এবং আখিরাতে শাস্তিভোগ করবে, এটাই স্বাভাবিক। আল্লাহ্্ মানুষকে চিন্তা করবার, কর্ম করবার শক্তি ও স্বাধীনতা দিয়েছেন। এর অর্থ এই নয় যে, মানুষ স্বৈরাচার হয়ে যা ইচ্ছে তাই করবে, অপকর্ম করবে, ধ্বংসের পথে নিজেকে ঠেলে দেবে, অশান্তি সৃষ্টি করবে। আল্লাহ্্ জাল্লা শানুহু নির্দেশ করেছেন : লা তুফ্সিদুফিল্্ আরদ্- পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি কর না (সূরা বাকারা : আয়াত ১১)। কুরআন মজীদে আরও ইরশাদ হয়েছে : যারা সৎ পথ অবলম্বন করবে তারা তো নিজেদের মঙ্গলের জন্যই সৎপথ অবলম্বন করবে এবং যারা পথভ্রষ্ট হবে তারা তো পথভ্রষ্ট হবে ধ্বংসের জন্য এবং কেউ অন্য কারও ভার বহন করবে না। (সূরা বনী ইসরাঈল : আয়াত ১৫)। ইসলামে যে সমস্ত বিষয়ের ওপর ঈমান আনয়ন অপরিহার্য করা হয়েছে তার মধ্যে তকদীরও রয়েছে। তকদীর যে আল্লাহ্্র তরফ হতে নির্ধারিত এ দৃঢ়বিশ্বাস রাখতে হবে। মানুষ তকদীর রদ করতে পারে আল্লাহ্্র মহান দরবারে যথাযথ দু’আ করার মাধ্যমে। হযরত সালমান রাদিআল্লাহু তা’আলা আন্্হু থেকে বর্ণিত আছে যে, হযরত রসূলুল্লাহ্্ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : লা ইয়ারুদ্দুল্্ কাদাআ ইল্লাদ্্ দু’আ ওয়ালা ইয়াযীদু ফিল উম্রি ইল্লাল্ র্ব্রুি- দু’আ ছাড়া আর কিছুই তকদীর রদ করতে পারে না এবং নেক আমল ছাড়া আর কিছুই বয়সে বৃদ্ধি ঘটায় না (তিরমিযী শরীফ)। হযরত আবু হুরায়রা রাদি আল্লাহু তা’আলা আন্্হু বলেন : একবার আমরা তকদীর সম্পর্কে তর্ক-বিতর্ক করছিলাম, এমন সময় হযরত রসূলুল্লাহ্্ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম আমাদের কাছে আগমন করলেন। তিনি ভীষণ রেগে গেলেন, তাঁর চেহারা মুবারক এমন লাল হয়ে গেল যে, তাঁর দুই গালে যেন বেদানার নিংড়ানো রস মেখে দেয়া হয়েছে। তিনি বললেন : এ বিষয়েই কি তোমরা নির্দেশিত হয়েছো? আর আমি কি এ নিয়েই তোমাদের নিকট প্রেরিত হয়েছি? তোমাদের পূর্ববর্তীরা যখন এ বিষয়ে তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হয়েছে তখনই তারা ধ্বংস হয়েছে। আমি তোমাদের কঠোরভাবে বলছি, তোমরা এ নিয়ে আর তর্কাতর্কি করবে না (তিরমিযী শরীফ)। লেখক : পীর সাহেব দ্বারিয়াপুর শরীফ, উপদেষ্টা ইনস্টিটিউট অব হযরত মুহম্মদ (সা.) সাবেক পরিচালক ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ
×