ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গণকবরের আড়ালে

প্রকাশিত: ০৪:৪৩, ৫ জুন ২০১৫

গণকবরের আড়ালে

থাইল্যান্ডের পর মালয়েশিয়াতেও আবিষ্কৃত হয়েছে অভিবাসীদের বিপুলসংখ্যক গণকবর। বলা হচ্ছে, কয়েক হাজার অভিবাসীকে হত্যার পর এদের গণকবর দেয়া হয়। হতভাগ্য অভিবাসীদের অপরাধ মানবপাচারকারী চক্রের দাবি অনুযায়ী তাদের আত্মীয়স্বজন মুক্তিপণ দিতে পারেনি। আবার মুক্তিপণ আদায়ের পরও আটক অভিবাসীকে হত্যা করা হয়েছে ঝামেলা এড়ানোর জন্য। মানবপাচারকারীদের কবল থেকে পালানোর চেষ্টাকালেও কাউকে কাউকে প্রাণ দিতে হয়েছে। যে এলাকায় এসব কবর পাওয়া গেছে, তা থাইল্যান্ড-মালয়েশিয়া সীমান্ত এলাকা। যেগুলো সামরিক এলাকার আওতাভুক্ত। আর সেসব এলাকায় রয়েছে কেবল পুলিশ ও সেনাবাহিনী। তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে মানবপাচার, নির্যাতন ক্যাম্প, হত্যা, গণকবরের ঘটনা ঘটেছে। এমনটা বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে না। এসব স্থানে অর্থের বেশ ছড়াছড়ি ঘটেছে, যেখানে মানবপাচার ব্যবস্থাকে রমরমা করে তুলতে তাদের ভূমিকা কম নয়। থাইল্যান্ডে মুক্তিপণ বাণিজ্য সামরিক জান্তা শাসকদের কারণে এতটাই উত্তুঙ্গে ওঠে যে, পাচারকারীরা তাদের কার্যক্রম বাংলাদেশেও বিস্তৃত করে, যেখানে এরই মধ্যে দালালদের প্রতিষ্ঠিত চক্র গড়ে উঠেছে। পাচারের সঙ্গে হাজার হাজার কোটি টাকা জড়িত। যে কারণে থাই-মালয়েশিয়ার শীর্ষপর্যায়ের বহু মানুষও যে এতে জড়িত তা তাদের আচরণে স্পষ্ট হয়। থাইল্যান্ডের ৮৩ বছরের সাংবিধানিক শাসনের ইতিহাসে দ্বাদশ সামরিক অভ্যুত্থানের এক বছর পর জানা গেল গণকবর ও মানবপাচারের কাহিনী। আন্দোলনের মুখে গত বছরের মে মাসে সামরিক জান্তা ক্ষমতা দখল করে। এই দখলের পূর্বাপর আন্দোলনকারীসহ সামরিক বাহিনীর সরকার অনুগত অনেককে হত্যা ও গুম করা হয়। তাদের কবর বা সমাধির কোন সন্ধান মেলেনি। তবে ইংলাক সিনাওয়াত্রার রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় থাকাকালেও মানবপাচার হয়েছে। আর তা হয়েছে সীমান্ত নিয়ন্ত্রক সামরিক বাহিনী ও পুলিশের সহায়তায়। তাই দেখা যায়, থাই সীমান্তের ৫শ’ মিটার উত্তরে মালয়েশিয়া সীমান্তেও গণকবর মিলেছে। একটি মিলেছে সীমান্তের এক শ’ মিটার দূরে। দু’দেশের সীমান্তবর্তী পাহাড়ী এলাকায় পাওয়া কবরগুলোতে অভিবাসী ছাড়াও সামরিক জান্তার হাতে নিহতদের কবর থাকার সম্ভাবনাও কম নয়। জাতিসংঘের তিনটি সংস্থা শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর, অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা আইওএম এবং মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের হিসাবমতে, অভিবাসনকামীদের মধ্যে রোহিঙ্গা ৬০ ভাগ ও বাংলাদেশী ৪০ ভাগ। তাদের মতে, অনেক বছর ধরেই তারা পাচার হচ্ছে। তবে আইওএম যদি যথাযথভাবে কাজকর্ম চালাত, তবে এভাবে রোহিঙ্গারা বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ত না। বিএনপি-জামায়াত জোটের জানুয়ারি হতে মার্চ পর্যন্ত টানা ‘অবরোধ’ থাকায় নাশকতা, বোমাবাজিকালে সবচেয়ে বেশি মানবপাচার হয়েছে। উদ্বাস্তু বিষয়ক হাইকমিশনের মতে, এ সময়ে ২৫ হাজার মানুষ পাচার হয়েছে, যা পূর্ববর্তী বছরের এই সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ। অর্থাৎ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যখন নাশকতারোধে তৎপর তখন অবাধে এরা পাচার হয়েছে। সমুদ্রে বা বন-জঙ্গলে যাদের পাওয়া গেছে তারা সবাই একদিনে যায়নি। যে দালালচক্র নানা লোভ, টোপ ও প্রলোভনের মাধ্যমে অশিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত লোকদের পণ্য বানিয়ে দীর্ঘদিন ধরে যে ব্যবসা চালিয়ে আসছে, তাদের প্রতিভূরা শক্তিশালী। মানবপাচার প্রতিরোধে ২০১১ সালে প্রণীত নয়া আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ-ের বিধান থাকলেও তার প্রয়োগ নেই। এই নারকীয়, অমানবিক, নৃশংস, নির্মম পাচার ব্যবস্থা রোধে জাতিসংঘসহ বিশ্ববাসীকে এগিয়ে আসার বিকল্প কিছু নেই।
×