ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগমুখী করার চেষ্টা

প্রকাশিত: ০৪:১১, ৪ জুন ২০১৫

উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগমুখী করার চেষ্টা

রহিম শেখ ॥ ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বেশ কিছু সুবিধা দিয়ে উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগমুখী করার চেষ্টা করবে সরকার। আগামী বাজেটে রাজধানী, সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার বাইরে শিল্প স্থাপনে রাজস্ব ছাড়; সবুজ শিল্পায়নে উৎসাহিত করাসহ বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। দেশের অভ্যন্তরে ইকোনমিক জোন বা অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগে ১০ বছর ও ডেভেলপারদের ১২ বছরের কর অবকাশ সুবিধা ও বিশেষ প্রণোদনা দেবে সরকার। বেসরকারী খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে ব্যাংকঋণের সুদের হার কমানোর ঘোষণা আসতে পারে। এছাড়া বিনিয়োগ বাড়াতে উদ্যোক্তাদের কর অবকাশ সুবিধা দেয়াসহ বিভিন্ন ধরনের সুবিধার কথা থাকছে। আজ বৃহস্পতিবার সংসদে বাজেট প্রস্তাবে শিল্প-বিনিয়োগ বাড়াতে এমন সব আশার কথা শোনাবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। জানা গেছে, বর্তমানে কর অবকাশ সুবিধা পাচ্ছে শিল্পের ১৭টি খাত। এ সুবিধার মেয়াদ ২০১৫ সালের ৩০ জুন শেষ হবে। এনবিআর সূত্র মতে, এসব শিল্পে নতুন বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে ২০১৯ সাল পর্যন্ত কর অবকাশ সুবিধা বাড়ানো হবে আগামী অর্থবছরে। যদিও দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই কর অবকাশ সুবিধাপ্রাপ্ত শিল্পের তালিকা বাড়ানো এবং এ সুবিধার মেয়াদ টানা ১০ বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করে। বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন বলছে, রাজনৈতিক অস্থিরতার পর রাজস্ব ছাড় না দিলে শিল্প-বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন না উদ্যোক্তারা। বন্ড সুবিধার অপব্যবহারে বিপাকে আছেন সৎ ব্যবসায়ীরা। এ অনিয়ম রোধের দাবি জানিয়ে আসছেন তাঁরা বহুদিন থেকে। বন্ড সুবিধায় শুল্কমুক্ত পণ্য এনে খোলাবাজারে বিক্রি করে অনেকে। অন্যদিকে একই জাতীয় পণ্য বন্ড সুবিধার বাইরে উচ্চ শুল্কে আমদানি করায় অসম প্রতিযোগিতার মুখে পড়ছেন অন্য ব্যবসায়ীরা। এনবিআর সূত্রে জানা যায়, নতুন বাজেটে এক হাজারের বেশি পণ্যে সম্পূরক শুল্কহার সমন্বয় করা হবে। এতে আমদানি করা পণ্যের শুল্কহার কমবে। এনবিআর থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো সারসংক্ষেপে উল্লেখ আছে, ‘বন্ড সুবিধাপ্রাপ্ত বহুল প্রচলিত শিল্পের সম্পূরক শুল্কহার বেশি পরিমাণে কমানো হচ্ছে। এতে বন্ড সুবিধার অপব্যবহার অনেকাংশে কমবে। এ ছাড়া ঘন ঘন দুর্ঘটনা এড়াতে কারখানায় ব্যবহৃত অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক ছাড় দেয়ার কথা উল্লেখ থাকছে প্রস্তাবিত বাজেটে। কারখানায় পরিবেশ রক্ষার্থে আন্তর্জাতিক চাপ থাকায় পরিবেশের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে সবুজ শিল্পায়নে উৎসাহিত করার পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে নতুন বাজেটে। সম্পূর্ণ নতুন ধারণায় আরোপ হচ্ছে গ্রীন ট্যাক্স। যেসব কারখানায় কর্মপরিবেশ আন্তর্জাতিক মানের নয় বা কারখানার উৎপাদিত পণ্য পরিবেশ দূষণ করছে, সেসব প্রতিষ্ঠানের ওপর নতুন এ কর ধার্য করা হবে। আবার বর্জ্য শোধনাগার না থাকলেও সংশ্লিষ্ট শিল্প-কারখানার ওপর এ কর ধার্য করা হবে। তবে বর্জ্য শোধনাগার নির্মাণের যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রে রাজস্ব ছাড় থাকছে নতুন বাজেটে। জানা যায়, এবার বিনিয়োগজনিত রেয়াত কমানো হচ্ছে। আবার রফতানি উৎসাহিত করতে নগদ সহায়তার ওপর বর্তমান কর ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ ধার্য করার প্রস্তাব থাকছে নতুন বাজেটে। তবে এ হার ৫ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে এফবিসিসিআই। সূত্র মতে, সুষম শিল্পোন্নয়নের স্বার্থে ঘনবসতিপূর্ণ রাজধানী ও আশপাশের এলাকার বাইরে শিল্প স্থাপনে উদ্যোক্তাদের আগ্রহী করতে রাজস্ব ছাড় দেয়ার প্রস্তাব থাকছে। এ সুবিধা সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভার বাইরে শিল্প স্থাপনেও থাকবে। জানা যায়, শিল্প-কারখানায় শ্রমিক কল্যাণে উন্নয়ন সারচার্জ ধার্য করা হচ্ছে। তামাক বা তামাক জাতীয় পণ্যের ওপর আরোপ করা রাজস্বের একাংশ থেকে সংগ্রহ করা হবে উন্নয়ন সারচার্জের তহবিল। এ ছাড়া বিভিন্ন মাসুল বা ক্ষতিপূরণ থেকেও এ তহবিলে অর্থ সরবরাহের নির্দেশ থাকছে বাজেট প্রস্তাবে। নতুন বাজেটে অবকাঠামো উন্নয়নে বড় অঙ্কের বরাদ্দ থাকছে। এ বরাদ্দের একাংশ অর্থনৈতিক জোন বা শিল্প পার্ক নির্মাণে ব্যয় করার চিন্তা আছে। এনবিআর সূত্র জানায়, খসড়া প্রস্তাবনায় দেশে বিনিয়োগ বাড়াতে অর্থনৈতিক জোনে ডেভেলপাররা ১০ বছর সম্পূর্ণ কর অবকাশ সুবিধা ও দ্বাদশ বছরে ৭০ শতাংশ এবং ১২তম বছরে ৩০ শতাংশ অবকাশ সুবিধা পাবেন। আর বিনিয়োগকারীরা তাদের আয়ের ওপর প্রথম ৩ বছর সম্পূর্ণ ও পরবর্তী বছরগুলোতে ধারাবাহিকভাবে এ কর অবকাশ সুবিধা পাবেন। এ ব্যাপারে এনবিআরের এক কর্মকর্তা বলেন, বেসরকারী খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে বিশেষ ছাড়ে প্রস্তুত সরকার। এর অংশ হিসেবে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনে ও তাতে বিনিয়োগ করতে বিনিয়োগকারী ও ডেভেলপারদের কর অবকাশ সুবিধা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া অবকাঠামো খাতে থাকছে বড় অঙ্কের বরাদ্দ। আগামীতে বিনিয়োগ বাড়ানোই হবে সরকারের মূল চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ নানা কারণেই উদ্যোক্তারা আস্থা সঙ্কটে ভুগছেন। এছাড়া গ্যাস, বিদ্যুত ও অবকাঠামো সমস্যাও রয়েছে। ফলে নতুন বিনিয়োগে আগ্রহ কমছে। এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, আগামী বাজেটে ট্যাক্স ও ভ্যাট কমানোর সুযোগ আছে। ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে আগামী বাজেটে ১০ শতাংশ করা যেতে পারে। তিনি বলেন, সরকারী বিনিয়োগ বেসরকারী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সহায়তা করে। সরকারী বিনিয়োগ বেসরকারী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সহায়তা করে। তাই সরকারের এডিবির প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নিতে হবে। এডিবির প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে বেসরকারী বিনিয়োগও বৃদ্ধি পাবে।
×