ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ফিফা আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ আজ বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে

বাংলাদেশ-আফগানিস্তান দু’দলেরই লক্ষ্য জয়

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ২ জুন ২০১৫

বাংলাদেশ-আফগানিস্তান দু’দলেরই লক্ষ্য জয়

রুমেল খান ॥ বিষয়টা বিস্ময়করই বলতে হবে। বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের চেয়ে ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে অনেক এগিয়ে আছে আফগানিস্তান জাতীয় ফুটবল দল। ‘দ্য লায়ন্স অব খোরাসান’ খ্যাত আফগানিস্তানের র‌্যাঙ্কিং ১৩৫, ‘বেঙ্গল টাইগার্স’ খ্যাত বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের র‌্যাঙ্কিং হচ্ছে ১৬৯। সাফ ফুটবলের বর্তমান শিরোপাধারীও (২০১৩ সালে নেপালে অনুষ্ঠিত সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতকে ২-০ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয় যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান) হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘কাবুলিওয়ালা’ চরিত্রের দেশের ফুটবল দলটি। অথচ আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, যে কোন বয়সভিত্তিক পর্যায়েই আফগানদের কোন জয় নেই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। আর বাংলাদেশের সেই জয়ও বেশ আগের, ৩৬ বছর আগে! বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় ফিফা আন্তর্জাতিক প্রীতি ফুটবল ম্যাচে মুখোমুখি লড়াইয়ে অবতীর্ণ হবে এই দুই দল। আগামী ১১ জুন কিরগিজিস্তান এবং ১৬ জুন তাজিকিস্তানের বিরুদ্ধে ঢাকায় ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব ও ২০১৯ সংযুক্ত আরব আমিরাত এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বের ম্যাচে অংশ নেবে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। সেই ম্যাচ দুটি খেলার আগে সিঙ্গাপুর ও আফগানিস্তান জাতীয় দলের সঙ্গে দুটি ম্যাচ খেলে নিজেদের ঝালিয়ে নিতে চায় ‘বেঙ্গল টাইগার্স’ খ্যাত বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। তারই অগ্রধাপ হিসেবে গত ৩০ মে সিঙ্গাপুরের বিরুদ্ধে প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ। সে ম্যাচে ১-২ গোলে হারে স্বাগতিক দল। এটি হবে বাংলাদেশ-আফগানিস্তানের মধ্যে পঞ্চম ফিফা আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ। সম্প্রতি শক্তিমত্তায় এগিয়ে আফগানরা, তবে অতীত পরিসংখ্যানের আলোকে আবার এগিয়ে বাংলাদেশ। একটি ম্যাচে জিতেছে বাংলাদেশ, বাকি তিন ম্যাচ ড্র হয়। আন্তঃমহাদেশীয় বাছাইপর্বে ১৯৭৯ সালে ঢাকায় ১৬ জানুয়ারির ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছিল ৪-১ গোলে। ওই বছরের ১২ জানুয়ারির প্রথম ম্যাচটি ড্র হয় ২-২ গোলে। ২০০৮ সালে কলম্বোতে অনুষ্ঠিত দুটি প্রীতি ম্যাচে দু’দল ড্র করে ২-২ এবং ০-০ গোলে। এ ম্যাচ উপলক্ষে সোমবার বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) কনফারেন্স রুমে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ, জনসংযোগ কর্মকর্তা আহসান আহমেদ অমিত, দুই দলের কোচ, অধিনায়ক ও ম্যানেজার। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আফগানিস্তানের বিপক্ষে এখনও হারিনি। তবে সেই অতীত পরিসংখ্যান মাথায় রাখতে চাই না। তাদের হারানোর ক্ষমতা আমাদের আছে। আমরা মানসিকভাবে শক্ত আছি। আমরা নিজেদের সেরাটা খেলে জয়ের ধারা ধরে রাখতে চাই। এ ম্যাচ জিতলে আমরা ১১ ও ১৬ জুনের ম্যাচ দুটির জন্য ভাল মতো প্রস্তুতি নিতে পারব।’ উল্লেখ্য, গত ২০১৪ সালে এশিয়ান গেমসে ফুটবল ইভেন্টে বাংলাদেশ অনুর্ধ-২৩ ফুটবল দল ১-০ হারায় আফগানিস্তানকে। জয়সূচক গোলটি করেছিলেন মামুনুল। বাংলাদেশ দলের ডাচ্ কোচ লোডভিক ডি ক্রুইফ বলেন, ‘আফগানিস্তান সিঙ্গাপুরের চেয়েও অনেক ভাল দল। যদিও এশিয়ান গেমসে তাদের হারিয়েছি। তবে ওই দলের ৮৫ শতাংশ খেলোয়াড়ের পরিবর্তন হয়েছে। আমি যখন হল্যান্ডে ছিলাম, তখন কয়েক বছর আগে ওদের তিন খেলোয়াড়কে কোচিং করিয়েছিলাম। ওরা হলোÑ মুর্তেজা আলীবাইক, ইসমাত শানওয়ারি এবং আনুশ দস্তগীর। ওদের এখানে দেখে খুব ভাল লাগছে। কালকের (মঙ্গলবার) ম্যাচটি আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই ম্যাচের পর আমরা ৯ দিন সময় পাব। এরপরই বিশ্বকাপ বাছাইয়ে খেলব। যদিও ফ্রেন্ডলি ম্যাচ খেলে কোন পয়েন্ট পাওয়া যায় না। তবে খেলায় উন্নতি করা যায়। আমরা সে চেষ্টাই করব। আশা করি ম্যাচটি খুবই উপভোগ্য হবে। ‘এই ম্যাচটা আমাদের জন্য সত্যিকারের পরীক্ষা। এ ম্যাচে কিছু খেলোয়াড় বদল হবে।’ জার্মান কোচ (যুগোশ্লাভিয়ান বংশোদ্ভূত) সø্যাভেন স্কেলেজিচ তিন মাস হলো হেড কোচ হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন আফগানিস্তান দলের। তিনি বলেন, ‘প্রতিপক্ষ হিসেবে অবশ্যই বাংলাদেশ অনেক সমীহ জাগানিয়া দল। আমাদের খেলোয়াড়রা নতুন এবং বিভিন্ন দেশের লীগে খেলে থাকে। আশা করি ম্যাচটি জমবে। আমরা জয়ের জন্যই খেলব। তিনদিন ধরে আমরা এসেছি। চেষ্টা করেছি এখানকার কন্ডিশনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে।’ আর আফগানিস্তান অধিনায়ক জালালুউদ্দিন বলেন, ‘ফুটবলে সব সম্ভব। বাংলাদেশের বিপক্ষের ম্যাচটি আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সব ফুটবলার যার যার পজিশন থেকে লড়াই করার জন্য প্রস্তুত। আমরা বাংলাদেশের বিপক্ষে জয়ের জন্য মাঠে নামব।’ আফগানিস্তান দলের খেলোয়াড়রা সারা বছর জার্মান, হল্যান্ড, সুইডেনসহ বিভিন্ন দেশের লীগে খেলে থাকেন। আজকের ম্যাচটিকে আফগান দলের জার্মান কোচ সø্যাভেন স্ক্যালেজিচ ও গুরুত্ব সহকারেই দেখছেন। কেননা এই ম্যাচ খেলার কিছুদিন পর তারাও বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে অংশ নেবে। এখন দেখার বিষয়, আজকের ম্যাচে বাংলাদেশকে হারিয়ে আফগানরা তাদের কাক্সিক্ষত প্রথম জয়টি কুড়িয়ে নিতে পারে কি না এবং বাংলাদেশ আফগানদের বিরুদ্ধে তাদের অপরাজিত থাকার রেকর্ডটিকে অক্ষুণœ রাখতে পারে কি না।
×