ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আজ লাইলাতুল বরাত

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২ জুন ২০১৫

আজ লাইলাতুল বরাত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পবিত্র লাইলাতুল বরাত আজ। সৌভাগ্য ও মহিমান্বিত্ব রজনী। ইসলামে যে কয়টি মাসকে পবিত্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে তার মধ্যে শাবান মাস অন্যতম। আর শাবান মসের ১৫তম রজনীকে আল্লাহতায়ালা বরকতময় ও মর্যাদাপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করেছেন। ইসলামী চিন্তাবিদদের মতে এ রাতে বিশ্বের সমগ্র মানুষের এক বছরের জন্য জন্মমৃত্যু ছাড়াও ভাগ্য লিপিবদ্ধ করেন ফেরেস্তারা। এছাড়া এ রাতে ইবাদত করলে অধিক ফজিলত পাওয়া ও গুনাহ থেকে মুক্তি লাভের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। সমগ্র বিশ্বের মুসলমানরা রমজানের আগে শাবান মাসের এ রাতটিকে অধিক পবিত্র হিসেবে গণ্য করে থাকে। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য আর যথাযথ মর্যাদা এবং ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে এ রাত অতিবাহিত করবেন মুসল্লিরা। আল্লাহ্র নৈকট্য ও করুণা লাভের আশায় ধ্যানে মগ্ন থাকবেন। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি এ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া পৃথকবাণী দিয়েছেন। এ দিবস উপলক্ষে বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও উৎসবের আমেজে পালিত হয়ে থাকে। আজ শব-ই-বরাতের দিনে দেশের প্রতিটি মুসলমানদের ঘরে ঘরে হালুয়া রুটি খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। সৌভাগ্যের এ রজনীতে রাজধানীসহ সারাদেশের সব বয়সের নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধসহ সর্বস্তরের মুসলমানরা কোরাআন তোলোওয়াত, নফল নামাজ, দোয়া অনুষ্ঠান ও বিশেষ মোনাজাতের মাধ্যমে আল্লাহ্র নৈকট্য লাভে এবাদত বন্দেগীতে মশগুল থাকবেন। বাসাবাড়িসহ মসজিদে মসজিদেও চলবে রাতব্যাপী ইবাদতবন্দেগী। এছাড়াও আল্লাহ্র সন্তুষ্টির জন্য দান খয়রাত ও মৃত স্বজনদের কবর জিয়ারত করবেন অনেকেই। মহিমান্বিত্ব এ রজনী ভাবগম্ভীর পরিবেশে পালনের জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এসব অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে ওয়াজ মাহফিল, কোরআন তেলাওয়াত, মিলাদ মাহফিল, হামদ্, নাত, নফল ও তাহাজ্জত নামাজ এবং মুসলিম উম্মার শান্তি কামনায় বিশেষ মোনাজাত ও দোয়া অনুষ্ঠান পরিচালিত হবে। পবিত্র শব-ই-বরাত উপলক্ষে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকেও যথাযথ মর্যাদায় পালনের জন্য নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এদিন রাতে সারাদেশের মসজিদে মসজিদে মিলাদ মাহফিল, জিকির আজকার, ধর্মীয় আলোচনা ও বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করা হবে। দিনটির গুরুত্ব তুলে ধরে বিভিন্ন সংবাদপত্রেও প্রকাশিত হয়েছে বিশেষ নিবন্ধ। রেডিও টেলিভিশনগুলোতেও আয়োজন করা হয়েছে আলোচনা অনুষ্ঠানের। আজ শব-ই-বরাত উপলক্ষে সংবাদপত্র বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। দেওয়ানবাগ দরবার শরীফে রাতব্যাপী বিশেষ অশোকে রাসূল (সা) মহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। ইসলামী বিধান অনুযায়ী আরবী হিজরীর শাবান মাসের ১৫তম রাতকে লাইলাতুল বরাত হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে। মুসলমানদের জীবনে আল্লাহ্ যে তিনটি রাতকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন শব-ই-বরাত তার মধ্যে একটি। পবিত্র রমজানের সিয়াম সাধনা বা আত্মসংযমের প্রস্তুতি হিসেবেই রাতটি মুসলমানদের কাছে এসে থাকে। শব-ই- বরাতের রাতে ইবাদত বন্দেগী ও আল্লাহ্র দরবারে পানাহ চাওয়ার মধ্যে দিয়ে শুরু হয় রমজানের এ প্রস্তুতি। হাদিস শরীফে বলা হয়েছে, আল্লাহ্ শাবান মাসে ১৫তম রাতে রহমাতে দৃষ্টি দেন। তাওবাকারীদের ক্ষমা করে দেন। রহমত প্রার্থীদের প্রতি দয়াবান হন। শুধু তারা ব্যতীত, যারা পরস্পর শত্রুতা পোষণ করে। অন্য এক বর্ণনায় বলা হয়েছে, এ রাতে সমস্ত বান্দার আমলসমূহ আল্লাহ্র কাছে পেশ করা হয়। হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রা) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা) বলেন, ‘আমার নিকট জিব্রাইল আসল। আর বলল, এটা শাবানুল মুআযযমের ১৫তম রাত। এ রাতে আল্লাহ তাআলা জাহান্নাম থেকে ততগুলো লোককে মুক্তি দেন যত লোম বনী কালবের ছাগলগুলোর গায়ে রয়েছে। অন্যত্র এরশাদ হয়েছে, যখন ১৫ শাবানের রাত আসে তখন এ রাত জেগে ইবাদত কর এবং দিনের বেলায় রোজা রাখ। এ রাত আসলে সূর্যাস্ত থেকেই মহান আল্লাহ্তাআলা নিকটবর্তী আসমানে অবতীর্ণ হন। আর বলেন, আছে কেউ ক্ষমা প্রার্থী তাকে ক্ষমা করে দেবো। আছো কেউ জীবিকা অনুসন্ধানকারী, তাকে জীবিকা দেবো। আছো কেউ বিপদগ্রস্ত তাকে বিপদ থেকে মুক্ত করবো। আছো কেউ এমন। এটা ততক্ষণ পর্যন্ত বলতে থাকেন যতক্ষণ না পর্যন্ত ফজরের সময় হয়। অন্য এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ্ (সা) ইরশাদ করেছেন আল্লাহ্তাআলা চার রাতে কল্যাণের দরজা খুলে দেন। এর মধ্যে রয়েছে কুরবানীর ঈদের রাত, ঈদ-উল-ফিতরের রাত, ১৫ শাবানের রাত এবং ৯ যিলহজ্জের রাত। বলা হয়ে থাকে এ রাতে মৃত্যুবরণকারীদের নাম, মানুষের রিযিক এবং হজ পালনকারীদের নাম লিপিবদ্ধ করা হয়। হাদিস শরীফে এ রাতে ইবাদত বন্দেগী ও দিনের বেলায় রোজা রাখার কথাও বলা হয়েছে। এ রাতের গুরুত্ব সম্পর্কে আরও জানা যায় ৬২৪ খৃষ্টাব্দের এ দিনে মদীনা মনাওয়ারের উপকণ্ঠে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা) সালাতরত অবস্থায় জেরুসালেমের বায়তুল মুকাদ্দাস থেকে মুখ ফিরিয়ে মক্কার বায়তুল্লার দিকে মুখ করে সালাত আদায়ের ওহী লাভ করেন। সেই থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত সালাত আদায়ের এ প্রথা কার্যকর রয়েছে। এছাড়া ওই বছরের এদিনেই মাহে রমজানের সিয়াম পালনের বিধান জারি করা হয়।
×