ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

হাইকমান্ডের একক সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জের মুখে

অবস্থার উন্নতি না হলে অনেকেই বিএনপি ছাড়বেন

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২ জুন ২০১৫

অবস্থার উন্নতি না হলে অনেকেই বিএনপি ছাড়বেন

শরীফুল ইসলাম ॥ দল পরিচালনায় বিএনপির হাইকমান্ডের একক সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। একক ক্ষমতাবলে দল চালাতে গিয়ে ঘরে-বাইরে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে হাইকমান্ড। ভুল রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে বার বার আন্দোলনে ব্যর্থ ও ক্ষমতা থেকে অনেক দূরে চলে আসায় সমালোচনার জবাব পাচ্ছে না দলের নেতাকর্মীরা। বিএনপির দুরবস্থা কাটাতে দলের নেতারা অতীতের মতো আর পকেট কমিটি না করে সর্বস্তরে নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি পুনর্গঠন করে গঠনমূলক রাজনীতি করার কথা বলছেন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে দল রক্ষায় কৌশল পরিবর্তন না করায় বিএনপি নেতারা একে একে ফুঁসে উঠছেন। বিএনপির ভেতর থেকেই ২০ দলীয় জোট ভেঙ্গে দেয়ার দাবি উঠেছে। আর এ নিয়ে জোট নেতারা বিএনপির প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন। পর্যবেক্ষক মহলের মতে, পাঁচবার রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়া বিএনপি ভুল রাজনীতির কারণে এ পর্যায়ে এসে চরম বেকায়দায় পড়েছে। ওয়ান-ইলেভেনের পর থেকে দলের চেয়ারপার্সনকে সুপরামর্শ দেয়ার মতো কার্যত কেউ নেই। তার চারপাশে যারা আছেন তারাও মাঝেমধ্যে তাকে ‘মিসগাইড’ করেন। এ ছাড়া তার লন্ডন প্রবাসী ছেলে তারেক রহমান ও ২০ দলীয় জোটের শরিক জামায়াতের পরামর্শ নিয়ে তিনি বার বার বিপদে পড়ছেন। না পেরেছেন আন্দোলনে সফল হতে, না পেরেছেন ক্ষমতায় যেতে। তাদের পরামর্শে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে তিনি সাংবিধানিকভাবে বিরোধী দলের নেতা হওয়ার সুযোগও হারিয়েছেন। এখন এমন অবস্থায় এসে তিনি ঠেকেছেন যে, নিজের দলকে নিয়ন্ত্রণ করতেও হিমশিম খাচ্ছেন। দ্রুত এ অবস্থার অবসান ঘটাতে না পারলে অনেক নেতাকর্মী বিএনপি ছেড়ে অন্য দলে চলে যাবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। নাজুক পরিস্থিতি মোকাবেলা করে ঘুরে দাঁড়াতে হলে বিএনপিতে আমূল পরিবর্তন আনতে হবে বলে দলের অধিকাংশ নেতাকর্মীই মনে করছেন। আর এ জন্যই তারা ইদানীং বর্তমান ধারার রাজনীতির সমালোচনা করে বক্তব্য রাখতে শুরু করছেন। দলের অনেক নেতাই মনে করেন বিএনপি এখন ভুল পথে হাঁটছে। তাদের মতে, জিয়ার আদর্শ থেকে বিএনপি আজ লক্ষ্যচ্যুত। তাই বিএনপিকে নতুনভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। জিয়ার ১৯ দফাকে সামনে রেখে দলে আমূল সংস্কার আনতে হবে। এ ছাড়া জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ ও তারেক রহমানের পরামর্শ নেয়া থেকে বিরত থাকার জন্যও খালেদা জিয়ার ওপর চাপ বাড়ছে বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, রাজনৈতিক দলের ভুলত্রুটি সংশোধনে সময়ের প্রয়োজনে পরিবর্তন আনতে হয়। আর কোন দলের কর্মকা- নিয়ে ঘরে-বাইরে সমালোচনা হতেই পারে। দলের সিনিয়র নেতারা যদি ভুল শোধরানোর উদ্দেশ্যে কোন কিছু বলে থাকেন, তা দোষের কিছু নয়। গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে এটাই স্বাভাবিক। আর যারা জিয়ার আদর্শে ফিরে যাওয়া কিংবা এখন আর জোটের দরকার নেই বলে মন্তব্য করেছেন তাদের কাছে নিশ্চয়ই এর সপক্ষে কোন ভাল যুক্তি আছে। আমি মনে করি, দলের হাইকমান্ড সবকিছু বিবেচনা করেই ভবিষ্যতে দলের সার্বিক কর্মকা- পরিচালনা করবেন। সূত্র মতে, ৩ বছর পর পর হওয়ার কথা থাকলেও সাড়ে ৫ বছর ধরে বিএনপির নির্বাহী কমিটির বৈঠক হয় না। ৬ মাস পর পর জাতীয় নির্বাহী কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও ৩ বছর ধরে এ বৈঠক হয় না। প্রতি মাসে স্থায়ী কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও ৬ মাস ধরে তা হয় না। তাই দলের ভাল-মন্দ নিয়ে নিয়ে খোলামেলা আলোচনার সুযোগ কমে যাওয়ায় নেতারা ব্যক্তিগত বা কোন আলোচনা সভায় এ ধরনের কথা বলছেন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন, টানা তিন মাসের অবরোধ-হরতাল কর্মসূচী ও ৩ সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেও বর্জন দলীয় ফোরামে আলোচনা করে হয়নি। ভবিষ্যতে দল কিভাবে চলবে তা নিয়ে আলোচনা করার কোন প্রয়োজনই মনে করছেন না খালেদা জিয়া। এ ছাড়া কখন থেকে দল পুনর্গঠন শুরু হবে তাও বলছেন না তিনি। জিয়ার আমল থেকে বিএনপি করেন এমন নেতারা মনে করেন, এ দলটি একটি উদার গণতান্ত্রিক মধ্যপন্থী রাজনৈতিক দল। তাই এ দল চরম ডানপন্থী হতে পারে না। কিন্তু দেশে-বিদেশের অনেকে এখন মনে করে, বিএনপি চরম ডানপন্থী রাজনৈতিক দল। বিশেষ করে জামায়াত ও হেফাজতসহ সংশ্লিষ্ট কিছু দলের সঙ্গে জোট করা এবং যুদ্ধাপরাধের বিচার ইস্যুতে নীরবতা পালন করায় এ দলটি চরম ডানপন্থী হয়ে যাচ্ছে বলে অনেকেই মনে করেন। বিভিন্ন মহল থেকে দেশ-বিদেশে বিএনপির এ অবস্থান তুলে ধরার কারণেই বিএনপি এখন বেকায়দায় রয়েছে। কূটনৈতিক তৎপরতায়ও ব্যর্থ হয়েছে দলটি। এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইউটিউবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও সাবেক ছাত্রদল নেতা বজলুল করীম চৌধুরী আবেদের ফোনালাপ নিয়ে বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা চলছে। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও আবেদের ফোনালাপেও জামায়াত ছাড়ার প্রসঙ্গটি উঠে এসেছে। এতে আরও উঠে এসেছে বর্তমান ধারার বিএনপি দিয়ে হবে না। সময়ের প্রবাহে জিয়াউর রহমানের ১৯ দফা থেকে অনেক দূরে সরে এসেছে বিএনপি। চলমান দলীয় রাজনীতির প্রতি নেতাকর্মীরা দৃশ্যত নিষ্ঠাবান থাকলেও দলের পক্ষ থেকে ১৯ দফার বিষয়ে কোন চর্চা না থাকায় দিন দিন প্রতিষ্ঠাকালীন মৌলিক বিষয়গুলো ভুলতে বসেছেন নেতাকর্মীরা। ব্যারিস্টার মওদুদের সঙ্গে মে মাসের প্রথমদিকে ফোনে কথা হয় সাবেক ছাত্রদল নেতা বজলুল করীম চৌধুরী আবেদের। ২ মিনিট ৮ সেকেন্ডের ফোনালাপে ব্যারিস্টার মওদুদ ও বজলুল করীম চৌধুরী আবেদের মধ্যে রাজনৈতিক বিষয়ে কথাবার্তা হয়। একপর্যায়ে ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, এই বিএনপি দিয়ে হবে না। জিয়াউর রহমানের বিএনপি যদি করতে পার...। এ সময় ছাত্রনেতা আবেদ বলেন, স্যার আপনি তো আমার মনের ক্ষুধা জানেন। আপনারা যেভাবে রাজনীতি করে আসছেন, আমি সেভাবেই রাজনীতি করতে চাচ্ছি। আমরা অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে বিশ্বাস করি। ধর্ম আমি কতটুকু করব না করব, তা আমার ব্যক্তিগত বিষয়। যে যার ধর্মে বিশ্বাস করে, তাদের সম্মান করে রাজনীতি করতে চাই। এ সময় মওদুদ বলেন, অবশ্যই, অবশ্যই। আবেদ বলেন, স্যার আপনাকে আগেই বলেছিলাম, জামায়াতের ব্যাপারে বিএনপি যতদিন সিদ্ধান্ত নিতে না পারবে, ততদিন বিশ্বের দরবারে বলেন আর দেশে বলেনÑ কোথাও বিএনপি তার পজিটিভ ইমেজ তুলে ধরতে পারবে না। এ সময় মওদুদ বলেন, ঠিক কথা, ঠিক কথা। তুমি জানো, আমিও এটাই বিশ্বাস করি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিএনপির ঐক্য ধরে রাখা এখন চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পর পর দুইবার বড় আন্দোলন ব্যর্থ হওয়া, দশম জাতীয় সংসদ ও তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন বর্জন করা, সর্বস্তরে দলের কমিটির বেহাল দশা, নেতাকর্মীদের ওপর ঝুলে থাকা মামলাসহ বিভিন্ন কারণে দলটি সাংগঠনিকভাবে চরম নাজুক অবস্থায় পড়েছে। ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর দল গঠনের পর এমন নাজুক পরিস্থিতি আর কখনও বিএনপিকে মোকাবেলা করতে হয়নি। ২৮ মে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৩৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় খালেদা জিয়ার সামনেই বিকল্পধারার সভাপতি অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজাসহ বেশ ক’জন বক্তা বিএনপির বর্তমান রাজনৈতিক কৌশলের কঠোর সমালোচনা করেন। কেউ কেউ বলেন, জিয়াউর রহমানের রেখে যাওয়া আদর্শ বিএনপি ধরে রাখতে পারেনি। এ জন্য দলের নেতাকর্মীদের লজ্জিত হওয়া উচিত। বিকল্পধারা সভাপতি অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, দলকে এগিয়ে নিতে হলে আগে আত্মসমালোচনার মাধ্যমে নিজেদের ভুলত্রুটি সংশোধন করতে হবে। খালেদা জিয়াসহ দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আমি যদি কোন ভুল করে থাকি তাহলে ক্ষমা করে দেবেন। আর আপনারা যদি কোন ভুল করে থাকেন তাহলে ইতিহাস আপনাদের ক্ষমা করবেন না। তিনি বিএনপিকে পুনরায় সংগঠিত হতে বলেন। এ জন্য জিয়াউর রহমানের আদর্শ ধারণ করে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আর যারা জিয়ার আদর্শ ধারণ করে তাদের সন্দেহের চোখে দেখলে হবে না। তাদের বিশ্বাস করতে হবে। জিয়ার ইতিহাস ভুলে গেলে চলবে না। জিয়াউর রহমান দলে খারাপ লোক থাকলে বের করে দিতেন কিন্তু এখন আর তা হয় না। জিয়ার আদর্শে রাজনীতি করতে হলে খারাপ লোক ছাঁটাই করতে হবে। যার যার ভুল যদি সংশোধন করি তবে জাতীয়তাবাদী শক্তি আবার ঘুরে দাঁড়াবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য যে, জিয়ার রেখে যাওয়া আদর্শ ধরে রাখতে পারিনি। এ জন্য নেতাকর্মীদের লজ্জিত হওয়া উচিত। আমরা আবার জিয়ার আদর্শে ফিরে যেতে চাই। বিএনপির সমালোচনা করে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বিএনপিতে ঘুমন্ত স্থায়ী ও নির্বাহী কমিটি রয়েছে। তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারি অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচী ঘোষণার পর রাজপথে বিএনপির কাউকেই দেখা যায়নি। আপনারা মামলার ভয় করেন। রাজনীতি করলে মামলা খেতে হবে। তাই বলে আত্মগোপনে থাকলে বাঁচতে পারবেন না। আত্মগোপনে থাকলে শেখ হাসিনা আপনাদের ইঁদুরের গর্তে ঢুকিয়ে দেবে। বিএনপিতে এক ব্যক্তিকে একাধিক পদ না দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, একজন নেতাকে একটা পদ দিতে হবে। এক ব্যক্তি একের অধিক পদধারী থাকতে পারবে না। মহিলা দলকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। কারণ আন্দোলনে তাদের ভূমিকা থাকে। ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে বলেন, খালেদা জিয়াকে তেল মারা বন্ধ করুন। দলকে এগিয়ে নিতে হলে রোজার ঈদের পর ছাত্রদল ও মহিলা দলসহ বিএনপির সর্বস্তরে নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করুন। তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে সামনে পেলেই অনেকে অনেক রকমের বক্তব্য দিয়ে মুগ্ধ করতে চান। এ সব প্রবণতা বাদ দিতে হবে। খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ঈদের পর ১০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের মাধ্যমে সব কমিটি পুনর্গঠন করতে হবে। তৃণমূলের ভোটে যাকে নেতা বানাবে সে-ই হবে নেতা। এক ব্যক্তি যাতে একাধিক পদে না আসতে পারে সেদিকে নজর দিতে হবে। বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বলেন, ২০ দলীয় জোটের কোন প্রয়োজন নেই। জোট করে কোন লাভ হবে না। যারা জোটে আছেন তারা বিএনপিতে চলে আসেন। তিনি বলেন, যে সব নির্বাচনী এলাকায় জোটের শীর্ষ নেতারা আছেন সেসব এলাকার বিএনপির নেতারা মনে করেন তারা মনোনয়ন পাবেন না। তাই তারা দলে নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে। এতে বিএনপির ক্ষতি হচ্ছে। তাই জিয়ার ১৯ দফায় বিশ্বাস করলে যারা জোটে আছেন তারা বিএনপিতে চলে আসেন। জিয়াউর রহমানও প্রথমে রাজনৈতিক জোট করে পরে সবাইকে বিএনপিতে যোগ দিতে বলেছিলেন এবং মুসলিম লীগসহ অনেক দলের নেতারাই তখন বিএনপিতে যোগ দিয়েছিলেন। জিয়াউর রহমান জোট গঠনের পর তার সঙ্গে যারা জোটে ছিলেন তাদের বিএনপিতে যোগ দিতে বলেছিলেন। সেই সময় আবদুল মান্নান ভূঁইয়া, কর্নেল আকবরসহ অনেকে বিএনপিতে যোগ দেন। তাই আমি ম্যাডামকে বলব, এখন ২০ দলের আর প্রয়োজন নেই। আপনি তাদের বলেন, তোমরা বিএনপিতে চলে আস। ওই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে শাহজাহান ওমরের জোট ছেড়ে বিএনপিতে যোগদানের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) ইব্রাহিম বলেন, ৬৬ বছর বয়স হয়ে গেছে এখন নিজ দল ছেড়ে বিএনপিতে যেতে পারব না। তবে আমি জিয়ার আদর্শে বিশ্বাসী। ওই অনুষ্ঠান শেষে ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমরের বক্তব্যের খবর পেয়ে ২০ দলীয় জোটের বিভিন্ন শরিক দলের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। ইতোমধ্যেই এলডিপির যুগ্ম-মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান ও ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এলডিপির যুগ্ম-মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে তার উপদেষ্টা শাহজাহান ওমর জোটবিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। তার বক্তব্যে আমরা অপমানিত হয়েছি। ২৯ মে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন খালেদা জিয়াকে কেন্দ্রীয় নেতাদের ওপর থেকে নির্ভরতা কমিয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কথা শোনার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বিএনপির বর্তমান নেতৃত্বে পরিবর্তন আনারও আহ্বান জানিয়ে বলেন, বিএনপি হাইকমান্ডকে বড় বড় তালগাছের দিকে তাকালে আর চলবে না। তৃণমূল থেকে নেতৃবৃন্দকে তুলে নিয়ে আসতে হবে। তাদের কথা শুনতে হবে। তারা দলের চেয়ারপার্সনের কাছে নিজেদের দুঃখের কথা বলতে চান। দলের জন্য পরামর্শ দিতে চান। এ অবস্থার অবসানে খালেদা জিয়াকে মাঠে নামতে হবে। সারাদেশে যে হাজার হাজার কর্মী নির্যাতিত হয়েছেন তাদের কথা শুনতে হবে। খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আমাকে মাফ করবেন নেত্রী। আপনি এখনও কিছুটা অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছেন বলে আমার ধারণা। আর অবরুদ্ধ অবস্থায় থাকলে চলবে না। উপরের পর্যায়ের নেতাদের কথার ওপর নির্ভর করলে চলবে না। তৃণমূল পর্যায়ে যেতে হবে। তাদের সঙ্গে দেখা করতে সরাসরি গণসংযোগ করতে হবে। জায়গায় জায়গায় সমাবেশ করতে হবে। এই সঙ্কট থেকে উত্তরণে বিএনপির কাছে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দল পুনর্গঠন করে জিয়ার দর্শনে পরিচ্ছন্ন রাজনীতি করতে হবে। জিয়াউর রহমান চেয়েছেনÑ বিএনপি চরম ডানপন্থী দল হবে না, এটা আমাদের মনে রাখতে হবে।
×