ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির দুই মামলা

রানা ও পিতামাতাসহ ৪২ জনের নামে চার্জশীট

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২ জুন ২০১৫

রানা ও পিতামাতাসহ ৪২ জনের নামে চার্জশীট

সৈয়দা ফরিদা ইয়াসমিন জেসি ॥ রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির দুই মামলায় ভবন মালিক সোহেল রানা, তার পিতামাতাসহ ৪২ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশীট দাখিল করছে সিআইডি। আসামির তালিকায় ১২ জন সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী, সাভার পৌরসভার মেয়র, রানার অনুগত বাহিনীর সদস্য এবং তাকে পালানোর কাজে মদদদাতারাও রয়েছে। মামলা দুটির আসামিদের মধ্যে রানাসহ চারজন ছাড়া অন্য আসামিদের অনেকেই জামিনে ও পলাতক রয়েছে। সোমবার মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার বিজয় কৃষ্ণ কর চাজশীটটি দাখিল করেন। আজ মঙ্গলবার চার্জশীট দুইটি শনাক্তের জন্য আদালতে উপস্থাপন করা হবে। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারে নয়তলা ভবন রানা প্লাজা ধসে পড়ে। ধসে পড়া ভবন থেকে ১ হাজার ১১৭ জনকে মৃত উদ্ধার করা হয়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ১৯ জন মারা যায়। সে হিসেবে নিহতের সংখ্যা ১ হাজার ১৩৬ জন। অন্যদিকে আহত হয় ১ হাজার ১৭০ জন। এদের মধ্যে ৭৮ জন পঙ্গু হয়ে গেছেন। মৃত উদ্ধারকৃতদের মধ্যে ৮৪৪ জনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ডিএনএ পরীক্ষার নমুনা রেখে শনাক্ত ছাড়াই ২৯১ জনের লাশ জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়। আহত হন হাজারের বেশি শ্রমিক। ঘটনাটি আন্তর্জাতিকভাবে আলোড়ন সৃষ্টি করে। এমনকি বাংলাদেশের রফতানির অন্যতম আয় তৈরি পোশাক খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বিশ্বের নামকরা অনেক বিদেশী ক্রেতাই মুখ ফিরিয়ে নেয় বাংলাদেশের পোশাক থেকে। ঘটনার দিনই ভবন ধসে প্রাণহানির ঘটনায় অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে একটি মামলা করেন সাভার থানার এসআই ওয়ালী আশরাফ। পরে মামলাটিতে অপরাধজনক প্রাণনাশেরও অভিযোগ আনা হয়। সোহেল রানাসহ ২১ জনকে আসামি করা হয় দায়েরকৃত ওই মামলায়। অভিযোগ প্রমাণিত হলে এ মামলায় আসামিদের মৃত্যুদ-ও হতে পারে। ইমরাত নির্মাণ বিধিতে মামলাটি দায়ের করা হয়। এছাড়া রাজউকের তরফ থেকেও ১৯৫২ সালের ইমারত নির্মাণ আইনের ১২ ধারায় সাভার মডেল থানায় অপর মামলাটি দায়ের করেন রাজউকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ হেলাল আহমেদ। এ মামলায় রানাসহ ১৩ জনকে আসামি করা হয়। দ-বিধি আইনের মামলায় ৪১ এবং ইমারত নির্মাণ আইনের মামলায় ১৮ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ইমারত নির্মাণ আইনের ১৮ জন আসামির মধ্যে ১৭ জনেই দ-বিধির চার্জশীটে রয়েছেন। দুই চার্জশীট মিলে মোট আসামি ৪২ জন। এদের মধ্যে মাহবুবুল আলম নামক একজন গার্মেন্টস ব্যবসায়ী শুধু ইমারত নির্মাণ আইন মামলার আসামি। ফলে দ-বিধির আইনের মামলার মোট আসামি দাঁড়িয়েছে ৪১ জনে। দ-বিধি আইনের মামলার চার্জশীটে বলা হয়েছে, যে কোন মুহূর্তে ভবন ধসের ঘটনা ঘটতে পারে জেনেও শ্রমিকদের নিরাপত্তার কথা না ভেবে তাদের কাজ করতে ওইদিন বাধ্য করানো হয়েছিল। আর ইমারত নির্মাণ আইনের মামলার চার্জশীটে বলা হয়, চার তলার অনুমোদন নিয়ে ভবনটি নয় তলা করা হয়েছিল। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, এ মামলায় আনা অভিযোগ প্রমাণিত হলে আসামিদের সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদ- হতে পারে। দুই মামলা মিলিয়ে আসামিরা হচ্ছে, ভবন মালিক সোহেল রানা, তার বাবা আব্দুল খালেক ওরফে কুলু খালেক, সাভার পৌর মেয়র রেফাত উল্লাহ, কাউন্সিলর মোহাম্মাদ আলী খান, প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, উপ-সহকারী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান রাসেল, নিউওয়েব বাটনের চেয়ারম্যান বজলুস সামাদ আদনান, নিউওয়েব স্টাইপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদুর রহমান তাপস, ইতার টেক্সটাইলের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান ওরফে আনিসুজ্জামান, আমিনুল ইসলাম, সাইট ইঞ্জিনিয়ার মোঃ সারোয়ার কামাল, আবু বক্কর সিদ্দিক, মোঃ মধু, অনিল দাস, মোঃ শাহ আলম ওরফে মিঠু, মোঃ আবুল হাসান, সাভার পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কমকর্তা উত্তম কুমার রায়, সোহেল রানার মা মর্জিনা বেগম, সাবেক সহকারী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান, নগর পরিকল্পনাবিদ ফারজানা ইসলাম, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের সাবেক উপ-প্রধান পরিদর্শক মোঃ আব্দুস সামাদ, উপ-প্রধান পরিদর্শক মোঃ জামশেদুর রহমান, উপ-প্রধান পরিদর্শক বেলায়েত হোসেন, পরিদর্শক প্রকৌশল মোঃ ইউসুফ আলী, পরিদর্শক প্রকৌশল মোঃ মহিদুল ইসলাম, ইমারত পরিদর্শক মোঃ আওলাদ হোসেন, ইতার টেক্সটাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জান্নাতুল ফেরদৌস, মোঃ শফিকুল ইসলাম ভূইয়া, মনোয়ার হোসেন বিপ্লব, মোঃ আতাউর রহমান, মোঃ আব্দুস সালাম, বিদ্যুৎ মিয়া, সৈয়দ শফিকুল ইসলাম জনি, রেজাউল ইসলাম, নান্টু ঠিকাদার, মোঃ আব্দুল হামিদ, আব্দুল মজিদ, মোঃ আমিনুল ইসলাম, নয়ন মিয়া, মোঃ ইউসুফ আলী, তসলিম ও মাহবুল আলম। আসামিদের মধ্যে সোহেল রানা, আব্দুল খালেক ওরফে কুলু খালেক, মর্জিনা বেগম, রেফাত উল্লাহ, মোহাম্মাদ আলী খান, রফিকুল ইসলাম, রাকিবুল হাসান রাসেল, বজলুস সামাদ আদনান, মাহমুদুর রহমান তাপস, আনিসুর রহমান ওরফে আনিসুজ্জামান, আমিনুল ইসলাম, মোঃ সারোয়ার কামাল, উত্তম কুমার রায়, মাহবুবুর রহমান, ফারজানা ইসলাম, রেজাউল ইসলাম ও নান্টু ঠিকাদার দুই মামলারই আসামি। আসামিদের মধ্যে প্রথম ১৬ জন গ্রেফতার হয়েছিলেন। এদের মধ্যে আবদুল খালেক, রেফাত উল্লাহ, অনিল দাস, শাহ আলম ও আবুল হাসান, মোহাম্মদ আলী খান ও রাকিবুল হাসান জামিনে রয়েছেন। অপর ২৬ আসামি মামলা দায়েরের পর থেকেই পলাতক। চার্জশীটে পলাতকদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়েছে। এছাড়াও চার্জশীটে ইমারত নির্মাণ আইনের মামলায় ১৩৫ জন এবং দ-বিধি আইনের মামলায় ৫৯৪ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। অভিযোগের প্রমাণ না পাওয়ায় চার্জশীটে প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক, ডেভিড রিকো, প্রকৌশলী এমতেমাম হোসেন, সহপ্রকৌশলী আলম মিয়া, আব্দুল মান্নান, রাসেল আহমেদ, আলমগীর হোসেন ও তন্ময় হাউজিং কোম্পানির চেয়ারম্যান কাজী সাইফুল ইসলাম বাবুকে অব্যাহতি প্রদানের আবেদন করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার চার্জশীট দুইটি শনাক্তের জন্য আদালতে উপস্থাপন করা হবে। আগামী ২৮ জুন মামলা দুইটির পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। ওইদিন তদন্তকারীর কর্মকর্তার আবেদনের প্রেক্ষিতে পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে পারেন বিচারক।
×