ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এসএসসি পরীক্ষার ফল

প্রকাশিত: ০৪:০১, ২ জুন ২০১৫

এসএসসি পরীক্ষার ফল

শনিবার দেশের সকল শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। গড় পাসের হার ৮৭ দশমিক ০৪ শতাংশ। গত বছর এ হার ছিল ৯১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ১১ হাজার ৯০১ জন, যা গতবার ছিল ১ লাখ ৪২ হাজার ২৭৬ জন। উল্লেখ্য, এ বছর সারাদেশে মোট ১৪ লাখ ৭৩ হাজার ৫৯৪ পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ১২ লাখ ৮২ হাজার ৬১৮ জন। তাদের মধ্যে ছয় লাখ ৬৫ হাজার ৭৬৪ ছাত্র এবং ছয় লাখ ১৬ হাজার ৮৫৪ ছাত্রী। পরীক্ষায় গত কয়েক বছর ধারাবাহিকভাবে ফলের সব সূচক উর্ধমুখী থাকলেও এবার সেই উর্ধগতিতে ছেদ পড়েছে। কমেছে সর্বোচ্চ ফল জিপিএ-৫ প্রাপ্তিও। সব শিক্ষা বোর্ডেই পাসের হার কমেছে। এ জন্য বিশেষভাবে দায়ী করা হয়েছে পরীক্ষা চলাকালীন বিএনপি-জামায়াত জোটের লাগাতার হরতাল-অবরোধকে। ফল প্রকাশের সময় প্রধানমন্ত্রীও একই অভিযোগ তুলেছেন। একথা অস্বীকার করার সুযোগ নেই যে, রাজনৈতিক কর্মসূচীর কারণে এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষাগুলো নির্ধারিত দিনে হতে পারেনি। দফায় দফায় পেছাতে হয়েছে পরীক্ষার সূচী। পরীক্ষা নিতে হয়েছে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে। ফলে পরীক্ষার্থীদের মনোসংযোগে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ১০ মার্চ এসএসসির তত্ত্বীয় পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা থাকলেও শেষ হয় ৩ এপ্রিল। পরীক্ষার সময়সূচীর এ ছন্দপতনের প্রভাব পরীক্ষার্থীদের ওপর পড়া স্বাভাবিক। সার্বিক ফল বিগত বছরগুলোর চেয়ে খারাপ হওয়ার এটি একটি কারণ হতে পারে। অবশ্য এর অন্য কোন কারণ রয়েছে কি-না তাও খতিয়ে দেখা দরকার। এবার মাধ্যমিকে গণিত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়েই খারাপ করেছে শিক্ষার্থীরা। সবচেয়ে বেশি ছাত্রছাত্রী এবার ফেল করেছে গণিতে। তবে আশার কথা, গত ছয় বছরের মতো এবারও পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যেই ফল প্রকাশিত হয়েছে। এটি একটি ভাল দিক। এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। গত কয়েক বছর ধরে মাধ্যমিক শিক্ষার উন্নয়ন হয়েছে, এটা বাস্তব সত্য। তারপরও এ নিয়ে কিছু প্রশ্নের অবকাশ রয়েছে। নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নপত্র প্রবর্তনের পরই মূলত পাসের হার উত্তরোত্তর বাড়ছে। এরপর চালু হয়েছে সৃজনশীল পদ্ধতির প্রশ্নপত্রও। এসবের উদ্দেশ্য যে শিক্ষার্থীদের মুখস্থবিদ্যার ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আনা তাতে সন্দেহ নেই। টিকচিহ্নভিত্তিক প্রশ্নপত্র পরীক্ষায় নম্বর বাড়াতে সহায়ক হচ্ছে ঠিক, কিন্তু এর মাধ্যমে শিক্ষার মান কতটা বাড়ছে তা নিয়ে সংশয়ের কথা প্রায়ই শোনা যায়। পাসের হার বাড়ানোর চেয়েও বেশি জরুরী শিক্ষার মান বাড়ানো। এ ক্ষেত্রে অগ্রগতি কতটা হচ্ছে তার যথাযথ নিরীক্ষা হওয়া দরকার। কারণ পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের একটি বড় অংশ পরবর্তী ধাপে পৌঁছানোর আগেই ঝরে পড়ছে। এটা ঠিক যে, পরীক্ষায় নকলের প্রবণতা আগের তুলনায় কমেছে। অন্যদিকে শত চেষ্টার পরও নোট-গাইড বইয়ের দৌরাত্ম্য এবং প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি, যা শিক্ষার মানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব রাখছে। এ বিষয়গুলোতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের আরও সুদৃষ্টি প্রয়োজন। দেশে শিক্ষার্থীর সংখ্যা যেমন বাড়ছে তেমনি বাড়ছে উত্তীর্ণের সংখ্যাও। কিন্তু সে অনুপাতে বাড়ছে না শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। উত্তীর্ণ বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তির জন্য ভাল মানের আরও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দরকার, দরকার দক্ষ শিক্ষকেরও। বিগত বছরগুলোতে ভর্তির বিষয়ে এমন সমস্যার কথা শোনা গেছে। ভাল ফল করা অনেক শিক্ষার্থীই মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায় না। সরকারকে এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। রাজধানীর বাইরেও যেন মানসম্মত আরও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে সেদিকে নজর দিতে হবে। পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের প্রতি অভিনন্দন। যেসব শিক্ষার্থী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি বা কাক্সিক্ষত ফল অর্জন করতে পারেনি তাদের হতাশ হলে চলবে না। এখন থেকেই নতুন করে উদ্যমী হতে হবে।
×