ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

স্বদেশের বহুমাত্রিক রূপ ফ্রেম বাংলাদেশের আলোকচিত্রে

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১ জুন ২০১৫

স্বদেশের বহুমাত্রিক রূপ  ফ্রেম বাংলাদেশের  আলোকচিত্রে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ছবিতে দৃশ্যমান কোন এক গাঁয়ের মেঠোপথ। বিকেলের আকাশে মেঘের ঘনঘটায় দুর্যোগের আভাস। হয়ত বৃষ্টির আশঙ্কায় একটু আগেভাগেই ফসলের মাঠ ছেড়ে গরুর পাল নিয়ে ঘরে ফিরছে কৃষক। আর তাঁর পেছনে জমি চাষের সরঞ্জাম নিয়ে হাঁটছে আরেক কৃষাণ। সাদা-কালো মাধ্যমে জীবনের ছন্দ শিরোনামের আলোকচিত্র ক্যামেরাবন্দী করেছেন হামীম চৌধুরী। আবহমান গ্রামবাংলার চিরচেনা এই ছবিটি এখন ঝুলছে ধানম-ির দৃক গ্যালারিতে। এখানে চলছে নবীন আলোকচিত্রীদের সংগঠন ফ্রেম বাংলাদেশ আয়োজিত দ্বিতীয় যৌথ আলোকচিত্র প্রদর্শনী। নগর থেকে গ্রাম কিংবা যাপিত জীবন অথবা নিসর্গ আশ্রিত রূপময় বাংলার সুখময় দৃশ্যকল্পের সমাবেশ ঘটেছে এই আয়োজনে। সেই সূত্রে উপস্থাপিত হয়েছে স্বদেশের বহুমাত্রিক রূপ। রবিবার বিকেলে এই প্রদর্শনী উদ্বোধন হয়। একই আয়োজনে প্রদর্শনীতে অংশ নেয়া আলোকচিত্রীদের পুরস্কার প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতিসংঘের অবসরপ্রাপ্ত উর্ধতন কর্মকর্তা কানিজ খান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ফ্রেম বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মউদুদুল আলম, বেস্টওয়ে গ্রুপের চীফ অপারেটিং অফিসার শৈবাল ঘোষ ও আমেরিকান ডেয়ারি লিমিটেডের উপদেষ্টা মঞ্জুর এইচ খান। সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের চেয়ারম্যান হামীম চৌধুরী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে ফটোবুক ‘লার্নিং ফ্রেম টু ফ্রেম’ গ্রন্থের মোড়ক করা হয় এবং জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী ফাহমিদা নবীকে ফ্রেম বাংলাদেশের ব্র্যান্ড এ্যাম্বাসেডর ঘোষণা করা হয়। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে প্রতিযোগীদের পুরস্কৃত করা হয়। বছরের সেরা ছবির পুরস্কার পেয়েছেন আনিসা ফজলে লিসি। সেরা ইভেন্ট ফট্রোগ্রাফির পুরস্কার জিতেছেন নাজমুল হুদা। আবদুস এস আলীমকে প্রদান করা হয়েছে লাইফটাইম এ্যাচিভমেন্ট এ্যাওয়ার্ড। বিশেষ পুরস্কার দেয়া হয়েছে খান মোঃ নজরুল ইসলামকে। ২৮ জন নবীন ও সৌখিন আলোকচিত্রীর ধারণকৃত রকমারি বিষয়ের আলোকচিত্র দিয়ে সাজানো হয়েছে প্রদর্শনী। দৃকের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলাজুড়ে ছড়িয়ে দেয়া বহুমাত্রিক ছবিগুলো। পিঞ্জিরামুক্ত জীবন শীর্ষক আবদুস এস আলীমের ছবিটি যেন দর্শনাথীর নয়নে ছড়িয়ে দেয় প্রশান্তির পরশ। নীলাকাশে সমান্তরাল রেখায় মনের আনন্দে উড়ে বেড়াচ্ছে লাল ডানা ও হলুদ শরীরের তিনটি পাখিÑ মুক্ত বিহঙ্গরা যেন জানিয়ে দিচ্ছে শঙ্কাহীন স্বাধীন জীবনের বার্তা। পাহাড়ের শরীর বেয়ে ঝরছে ঝরণাধারা। আর সেই জলধারায় যেন নিজেকে নিমজ্জিত করেছে পাহাড়ী পোশাকে এক তরুণী। জীবনের আনন্দ শিরোনামের এই ছবিটি ক্যামেরাবন্দী করেছেন ইকবাল কবির। ফজলুর রহমানের তোলা জীবনের ভ্রমণ নামে আলোকচিত্রে হাতের তালুতে ঘুরছে লাটিম। হামীম চৌধুরীর তোলা নারীর ক্ষমতায়ন নামের ছবিতে উপস্থাপিত হয়েছে কোন এক চাতালে দুই নারীর ধান মাড়াইয়ের চিত্র। এভাবেই যাপিত জীবন থেকে শুরু করে নিসর্গের সৌন্দর্য, পাখির কলরবহ নানা বিষয়ে ছবি প্রদর্শনীতে যোগ করেছে বৈচিত্র্যময়তা। ৯৫টি আলোকচিত্র দিয়ে সাজানো তিন দিনের এ প্রদর্শনী শেষ হবে মঙ্গলবার। প্রতিদিন বেলা ২টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা থাকবে। প্রীতিলতাকে নিবেদিত সাময়িকীর প্রকাশনা ও যাত্রাপালা ॥ ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের প্রথম নারী শহীদ বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। উপমহাদের স্বাধীনতার আকাক্সক্ষায় ১৯৩২ সালে চট্টগ্রামের ইউরোপিয়ান ক্লাবে সশস্ত্র অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানে তিনি গুলিবিদ্ধ হলে ব্রিটিশদের হাতে ধরা না পড়ার প্রত্যয়ে পটাসিয়াম সায়ানাইট খেয়ে আত্মাহুতি দেন। বিট্রিশবিরোধী আন্দোলনের এই বীরকন্যার নামে যাত্রা শুরু করল মাসিক পত্রিকা ‘প্রীতিলতা’। সেই সঙ্গে প্রথমবারের মঞ্চায়িত হলো তাঁর জীবনভিত্তিক যাত্রাপালা ‘বীরকন্যা প্রীতিলতা’। রবিবার সন্ধ্যায় পত্রিকাটির যাত্রা শুরু উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় প্রকাশনা উৎসব ও যাত্রাপালা ‘বীরকন্যা প্রীতিলতা’র প্রথম মঞ্চায়ন। দুটি পর্বে বিভক্ত এ আয়োজনের শুরুতেই ‘প্রীতিলতা’ পত্রিকাটির মোড়ক উন্মোচন করেন অনুষ্ঠানের উদ্বোধক নজরুলসঙ্গীত শিল্পী ফাতেমাতুজজোহরা, প্রধান অতিথি শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, বিশেষ অতিথি মুক্তিযোদ্ধা ও ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিনী এবং সোনালী ব্যাংকের উপব্যবস্থাপক দিদার মোঃ আবদুর রব। এ সময় পত্রিকাটির উপদেষ্টা এনায়েত কবির খোকনের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন মাসিক প্রীতিলতার সম্পাদক হাসান কবির শাহীন। আলোচনা শেষে নারীদের কাগজ ‘প্রীতিলতা’র যাত্রা শুরু উপলক্ষে প্রথমবারের মতো মঞ্চস্থ হয় যাত্রাপালা ‘বীরকন্যা প্রীতিলতা’। উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিপ্লবী ও প্রতিবাদী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের শৌর্যবীর্য, বীরত্ব এবং অনেক দুঃসাহসিক ঘটনার ঐতিহাসিক সাক্ষর নিয়ে রচিত হয়েছে এই যাত্রাপালাটি। যাত্রাপালাটিতে উঠে এসেছে দেশমাতৃকার জন্য প্রীতিলতার আদর্শিক চেতনা, নিষ্ঠা, তার অসীম সাহসিকতা আর সুমহান আত্মত্যাগের অনন্য উদাহরণের দেশের প্রতি দেশের মানুষকে প্রাত্যহিক উদ্বুদ্ধ করার নানান বিষয়। শিল্পকলায় মঞ্চস্থ দেশ নাটকের প্রযোজনা অরক্ষিতা ॥ ক্ষমতা যেন নিরন্তর পরির্তনশীল। কখনই এক পাত্রে থাকে না। ক্ষমতার ধর্মই হচ্ছে পাত্র পরিবর্তন করা। তবু মানুষ ধরে রাখতে চায় ক্ষমতাকে। ফলে সৃষ্টি হয় নানা দ্বন্দ্ব-সঙ্কট। সেই অনভিপ্রেত ক্ষমতার উত্তাপে বিনষ্ট হয় সভ্যতার ইট, কাঠ ও কঙ্কাল। আর এমন চিরন্তন সত্যকে ধারণ করে নির্মিত হয়েছে দেশ নাটকের বিশতম প্রযোজনা অরক্ষিতা। রবিবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে দেশ নাটকের এই নাটকটির ১২তম মঞ্চায়ন অনুষ্ঠিত হয়।
×