ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

করের হার না বাড়িয়ে এবারের বাজেটে বাড়ছে করের আওতা

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১ জুন ২০১৫

করের হার না বাড়িয়ে এবারের বাজেটে বাড়ছে করের আওতা

এম শাহজাহান ॥ এবারের বাজেটে কর না বাড়িয়ে আওতা বাড়ানোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে উপার্জনক্ষম দেশের প্রতিটি মানুষকে করের আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। এর ফলে বাজেট ঘোষণার পর কর আদায়ের আওতা বাড়ছে। দেশের প্রতিটি উপজেলায় কর অফিস স্থাপন করা হবে। নিজস্ব অর্থায়নে বাজেট বাস্তবায়নে আগামী চার বছরে ৮৬ লাখ করদাতা বাড়ানোর পদক্ষেপ নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। শুধু তাই নয়, বাজেটে ব্যক্তি শ্রেণীর করদাতাদের করমুক্ত আয়ের সীমা দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা করা হচ্ছে। বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে কমানো হচ্ছে কর্পোরেট ট্যাক্স। তবে ন্যূনতম কর ও পোশাক রফতানির ওপর উৎসে কর বাড়ানো হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, বর্তমানে নিবন্ধিত করদাতার সংখ্যা দেশে ১৪ লাখ হলেও ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মধ্যে তা ১ কোটিতে উন্নীত করার লক্ষ্যে ৪ বছরে ৮৬ লাখ করদাতা বাড়ানো হবে। উদ্বুদ্ধ করার মাধ্যমে অধিকসংখ্যক মানুষকে যাতে কর দিতে বাধ্য করা যায়, সেজন্য বাজেটে নানা পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এজন্য বিভাগীয় ও জেলা শহরের বাড়ির মালিকদের পাশাপাশি পৌরসভাসহ উপজেলাগুলোর করযোগ্য সব নাগরিককে কর জালের আওতায় আনার পদক্ষেপ নেবে এনবিআর। এ লক্ষ্য পূরণে প্রত্যেক উপজেলায় কর অফিস স্থাপন করা হবে। বর্তমানে দেশের ৮৫টি উপজেলায় কর অফিস রয়েছে। বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরের কর প্রদানে সক্ষম বাড়ির মালিকদের করদাতা শনাক্ত কর নম্বর (ই-টিআইএন) দেয়া হবে। এছাড়া ২০১৫ সালের শেষ নাগাদ সব কর অঞ্চলের করদাতারা অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন। এ প্রসঙ্গে বাজেট বিষয়ক এক পরামর্শক কমিটির সভায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, দেশের ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে মাত্র কর দেন ১১ লাখ। তাই আগামীতে উপার্জনক্ষম সব মানুষকে করের আওতায় নিয়ে আসা হবে। তিনি বলেন, গত ছয় বছরে রাজস্ব আদায় বেড়েছে ৩ শতাংশ। এর আগে গত ২৭ বছরে মাত্র ৩ শতাংশ বেড়েছিল। তবে আগামী চার বছরে আরও ৩ শতাংশ রাজস্ব বৃদ্ধির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। দেশে বর্তমানে ছয় স্তরে কর্পোরেট করহার রয়েছে। নন-পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানির ক্ষেত্রে ৩৫ শতাংশ, পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানির ক্ষেত্রে ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ, ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ, মার্চেন্ট ব্যাংকের ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ, সিগারেট প্রস্তুতকারক ও মোবাইল অপারেটর কোম্পানির জন্য করহার ৪৫ শতাংশ। তবে আগামী অর্থবছরে পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানির (পুঁজিবাজারে যেসব কোম্পানি রয়েছে) বিদ্যমান করহার ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ব্যাংক, বীমা ও অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানের (মার্চেন্ট ব্যাংক ছাড়া) ওপর বিদ্যমান কর ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। তবে পাবলিকলি ট্রেডেড ও নন-পাবলিকলি ট্রেডেড সিগারেট প্রস্তুতকারী কোম্পানির ওপর থাকা বিদ্যমান করভার কমানো হচ্ছে না। আর ব্যক্তি শ্রেণীর করদাতাদের করমুক্ত আয়ের সীমা দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা করা হচ্ছে। বর্তমানে এ শ্রেণীর করদাতাদের করমুক্ত আয়ের সীমা নির্ধারিত রয়েছে দুই লাখ ২০ হাজার টাকা। এছাড়া বর্তমানে ব্যক্তি শ্রেণী করদাতাদের ওপর তিন ধরনের ন্যূনতম কর চালু রয়েছে। এ ন্যূনতম করের পরিমাণ হচ্ছে ৩, ২ ও ১ হাজার টাকা। আগামী বাজেটে এর পরিমাণ বৃদ্ধি করা হচ্ছে। বর্তমানে সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বসবাসরত করদাতাদের ন্যূনতম করের পরিমাণ রয়েছে ৩ হাজার টাকা। আগামী অর্থবছরে এটি বাড়িয়ে ৪ হাজার টাকা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে জেলা শহরে পৌরসভায় অবস্থিত করদাতাদের ন্যূনতম আয়কর ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা এবং অন্যান্য এলাকায় অবস্থিত করদাতাদের বিদ্যমান ন্যূনতম কর এক হাজার থেকে বৃদ্ধি করে ২ হাজার টাকা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে তৈরি পোশাক খাতের ওপর কর বাড়ানো হচ্ছে। বর্তমানে এ খাতের ওপর উৎসে আয়কর (এআইটি বা এ্যাডভান্স ইনকাম ট্যাক্স) রয়েছে শূন্য দশমিক ৩০ শতাংশ। এটিকে প্রায় তিনগুণ বাড়িয়ে শূন্য দশমিক ৮০ শতাংশ করা হচ্ছে।
×