ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এক ছাতার নিচে ১৪৫ কর্মসূচী

বহুল আলোচিত সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল অনুমোদন আজ

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ১ জুন ২০১৫

বহুল আলোচিত সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল অনুমোদন আজ

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ দীর্ঘদিন ঝুলে থাকার পর অবশেষে আজ সোমবার অনুমোদন পাচ্ছে জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্র। এটি বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে বদলে যাবে বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী। মন্ত্রীদের আপত্তির কারণে এ কৌশলপত্রে বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের জন্য যে টাকার অঙ্ক প্রস্তাব করা হয়েছিল তা বাদ দেয়া হয়েছে। মন্ত্রীসভায় চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য এর আগে উপস্থাপন করা হলেও তা ফেরত পাঠানো হয়। পরবর্তীতে নির্দিষ্ট করে দেয়া টাকার অঙ্ক বাদ দেয়াসহ বিভিন্ন পরামর্শ অন্তর্ভুক্ত করে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হচ্ছে মন্ত্রীসভায়। তবে মূলবিষয়ে খুব বেশি পরিবর্তন আসেনি বলে জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন কৌশলপত্রটি তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম। তিনি বলেন, এর আগে মন্ত্রীপরিষদ এ কৌশলপত্রটিকে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছিল। কিন্তু বেশকিছু পরামর্শ থাকায় সেটি চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়নি। মন্ত্রীদের পরামর্শগুলোর প্রতিফলন ঘটানো হয়েছে। সূত্র জানায়, এই কৌশলপত্র বাস্তবায়নের মাধ্যমে বদলে যাবে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী। সেই সঙ্গে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর এবং এ খাতে বিনিয়োগ উৎপাদনমুখী করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এজন্য সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মতিতে পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে চূড়ান্ত করা হয়েছিল জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্রের খসড়া। এই কৌশলপত্রের মাধ্যমে চলমান প্রায় ১৪৫টি কর্মসূচীকে এক ছাতার নিচে নিয়ে আসা হবে। তাছাড়া আসছে ব্যাপক পরিবর্তন। আসছে জীবনচক্রভিত্তিক সমন্বিত সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী। নতুন কৌশলপত্রে যেসব বিষয় যুক্ত হচ্ছে সেগুলো হলো, অতিদরিদ্রদের জন্য ভিজিএফ, টিআর, কাবিখা ও বয়স্ক ভাতাসহ যেসব কর্মসূচী রয়েছে, সেগুলোর ধরন ও কৌশলে ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে আসা হয়েছে। কৌশলপত্রে যে বিষয়টির ওপর সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হয়েছে, তা হলো ‘লাইফ সাইকেল’। জিইডি খসড়া কৌশলপত্রে বলছে, ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে হলে ‘লাইফ সাইকেল’ পদক্ষেপ ছাড়া কোন বিকল্প নেই। এজন্য জন্ম থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মোট পাঁচটি লাইফ সাইকেল চালু করতে হবে। অতিদরিদ্র, ক্ষতিগ্রস্ত ও প্রতিবন্ধী সবাইকে এই লাইফ সাইকেলে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। প্রথমত, সারাদেশে শূন্য থেকে চার বছর বয়সী পর্যন্ত যেসব অতিদরিদ্র, প্রতিবন্ধী ও ক্ষতিগ্রস্ত শিশু এবং পরিবার রয়েছে, তাদের প্রতি পরিবারকে মাসে ৮০০ টাকা হারে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। দ্বিতীয়ত, পাঁচ থেকে ১৮ বছর বয়সী যারা রয়েছে, তাদের মাসিক ২৪০ টাকা করে দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। যদিও তারা এখন ১২০ টাকা করে পাচ্ছে। তৃতীয়ত, ১৯ থেকে ৫৯ বছর বয়সী যারা অতিদরিদ্র, ক্ষতিগ্রস্ত ও প্রতিবন্ধী তাদের ৮০০ টাকা হারে দেয়া যেতে পারে। চতুর্থত, যাদের বয়স ৬০ থেকে ৮৯ তাদেরও ৮০০ টাকা করে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। পঞ্চমত, যাদের বয়স ৯০-এর ওপরে তাদের মাসে তিন হাজার টাকা হারে দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে কৌশলপত্রে। আর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সরকার যা নির্ধারণ করে দেবে তাই প্রযোজ্য হবে। সরকার এরই মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকা করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, পাঁচটি লাইফ সাইকেল একসঙ্গে বাস্তবায়িত হবে না। পাঁচ বছরে তা ধাপে ধাপে বাস্তবায়িত হবে। অনুমোদন হতে যাওয়া সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্রে এভাবে টাকার অঙ্ক উল্লেখ আর থাকছে না। এ বিষয়ে মন্ত্রীপরিষদ সভায় কয়েকজন মন্ত্রী আপত্তি করে বলেন, টাকার অঙ্ক নির্দিষ্ট থাকলে পরবর্তীতে ঝামেলা হতে পারে। কিছুটা কম টাকা দিলে তখন এটি নিয়ে হৈচৈ হবে। তার চেয়ে টাকার অঙ্ক নির্দিষ্ট করে না দিলে সুযোগ-সুবিধা মতো টাকা বরাদ্দ করা যাবে। সূত্র জানায়, দুর্নীতি ও অপচয় রোধ করতে এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীতে কাক্সিক্ষত সাফল্য আনতে এ কৌশল হাতে নিতে যাচ্ছে সরকার।
×