ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

লড়াইয়ের প্রস্তুতি বাংলাদেশ-আফগানিস্তানের

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ১ জুন ২০১৫

লড়াইয়ের প্রস্তুতি বাংলাদেশ-আফগানিস্তানের

মোঃ মামুন রশীদ ॥ এবার বিশ্বকাপ বাছাইয়ে সরাসরি খেলবে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। সে কারণে প্রস্তুতি শুরু করেছেন লোডভিক ডি ক্রুইফের শিষ্যরা। প্রথম পরীক্ষায় অবশ্য সফলতা আসেনি। শনিবার আন্তর্জাতিক প্রীতি ফুটবল ম্যাচে নিজেদের চেয়ে শক্তিধর সিঙ্গাপুরের কাছে ২-১ গোলে হেরে গেছে। এবার দ্বিতীয় পরীক্ষা। মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে দক্ষিণ এশিয়ার সেরা দল আফগানিস্তানের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ আরেকটি আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে। শনিবারই বাংলাদেশের মাটিতে পা রেখেছে আফগান দল। আর রবিবারেই অনুশীলনে নেমে পড়ে তারা। সকালে শেখ জামাল ধানম-ি ক্লাব মাঠে দীর্ঘক্ষণ অনুশীলন করে সফরকারী দল। অবশ্য বসে ছিলেন না মামুনুল ইসলামরাও। তাঁরাও অনুশীলন করেছেন। শক্তিমত্তা ও র‌্যাঙ্কিংয়ে তেমন এগিয়ে না থাকলেও সিঙ্গাপুরের বিরুদ্ধে হারের পর অনেক কিছুই যেন পরিষ্কার হয়ে গেছে কোচ ক্রুইফের কাছে। আগে সিঙ্গাপুরের বিরুদ্ধে খেলা দুই ম্যাচেই ড্র করেছিল দল আর এবার হেরেছে। তবু ৮০ ভাগ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ক্রুইফ। হারের পেছনে ক্লান্তি ও গরমকে কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন। ক্লান্তির বিষয়টি ফিটনেসের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তবে কি বাংলাদেশ দলের ফুটবলারদের ফিটনেসে ঘাটতি রয়েছে কারও কারও? আর গরমের সমস্যায় ভোগার কথা বেশি সফরকারী দল সিঙ্গাপুরেরই। লোডভিকই জানিয়েছেন এনামুল হক পুরো সময় স্বাচ্ছন্দ্যে খেললেও বদলি খেলোয়াড় হিসেবে নাসির নেমে ৫ মিনিট পরেই হাঁপাচ্ছিলেন। লোডভিক বুঝে গেছেন সবার সামর্থ্য এক নয়। সেজন্য তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন দলের সবাই যেন একই ছন্দে খেলতে পারেন। সেই ছন্দটা কি দেখা যাবে মঙ্গলবার? এদিন নিজেদের চেয়ে অনেক শক্তিধর হয়ে ওঠা আফগানিস্তান জাতীয় দলের বিরুদ্ধে আরেকটি প্রীতি ফুটবল ম্যাচ। শনিবার দুপুরে বাংলাদেশের মাটিতে পা রেখেছে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের শীর্ষ দল আফগানিস্তান। গত সাফ ফুটবলের চ্যাম্পিয়ন দলটির র‌্যাঙ্কিংও দারুণ ঈর্ষণীয়। বর্তমানে তারা ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে অবস্থান করছে ১৩৫ নম্বরে। বাংলাদেশের চেয়ে তো অবশ্যই দক্ষিণ এশিয়ার বাকি ৬ দেশের চেয়েও অনেক এগিয়ে আছে আফগানরা। যদিও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত জেতার কোন রেকর্ড নেই তাদের। বরং হেরেছে। সেই হারটাও ছিল খুবই বড় ব্যবধানে। সেটি ৩৬ বছর আগের ঘটনা। ১৯৭৯ সালে আফগানদের ৪-১ গোলে হারিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ দল। সেই অবস্থা থেকে আফগানরা যে কতখানি উন্নতি করেছে তা তাদের বর্তমান র‌্যাঙ্কিং, সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়া এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সম্প্রতি নৈপুণ্য দেখেই উপলব্ধি করা যায়। সিঙ্গাপুরের বিরুদ্ধে ম্যাচটায় জয়ের আশা করেছিলেন অনেকেই। কারণ খুব বেশি এগিয়ে নেই তারা বাংলাদেশের চেয়ে। বর্তমান ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ দল ১৬৯ নম্বরে। মাত্র ৭ ধাপ এগিয়ে ১৬২ নম্বরে সিঙ্গাপুর। তাছাড়া স্বাগতিক দল হিসেবে জয়ের আশা অবশ্যই ছিল বাংলাদেশ দলের। প্রত্যাশা অনুসারে বেশ ভালভাবেই শুরুও করেছিল, প্রথমেই গোল করে এগিয়ে যায় মামুনুলরা। কিন্তু সেটা আর ধরে রাখতে পারেনি। পরে দুটি গোল হজম করে শেষ পর্যন্ত ২-১ গোলের পরাজয় বরণ করে। ম্যাচে হার হলেও ভুলগুলো সামনে চলে এসেছে। এবার আফগানদের মুখোমুখি হওয়ার আগে সেই ভুল নিয়েই কাজ করতে হবে লোডভিক ডি ক্রুইফকে। সিঙ্গাপুরের বিরুদ্ধে ম্যাচের আগেই বাংলাদেশ দলের সহকারী কোচ সাইফুল বারী টিটু জানিয়েছিলেন এ ম্যাচ থেকে মূলত পরবর্তী কৌশল কেমন হতে পারে সেসব নির্ধারণ করা হবে। শক্তিশালী বিদেশী দলগুলোর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের শক্তিমত্তার গভীরতা খতিয়ে দেখা এবং দুর্বলতা চিহ্নিত করাই লক্ষ্য বলে জানিয়েছিলেন তিনি। লক্ষ্য একটাই আগামী ১১ ও ১৬ জুন। এ দু’দিন যথাক্রমে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে শক্তিশালী দুটি দল কিরগিজস্তান ও তাজিকিস্তানের সঙ্গে খেলবে বাংলাদেশ। ২০১৯ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিতব্য এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বের ম্যাচ এ দুটি। এছাড়া সেপ্টেম্বরে আছে বিশ্বকাপ বাছাই ম্যাচ। এ কারণে প্রীতি ম্যাচগুলো বাংলাদেশের জন্য বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত জয়ের মুখ দেখেনি আফগানিস্তান। সবমিলিয়ে দু’দল ৪ ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ জিতেছে একটি এবং ড্র হয়েছে তিনটি। সর্বশেষ ২০০৮ সালের জুনে শ্রীলঙ্কার মাটিতে বাংলাদেশকে হারিয়েই দিয়েছিল আফগানরা। দুই গোলে পিছিয়ে থেকেও অবশ্য শেষ পর্যন্ত তা পরিশোধ করে ড্রয়ের স্বস্তি নিয়ে মাঠ ছাড়তে পেরেছিল বাংলাদেশ। এবার আবারও মুখোমুখি হতে যাচ্ছে দু’দল। আগের দিনই সিঙ্গাপুরের বিরুদ্ধে ম্যাচ খেলার পর সময় নষ্ট করেননি মামুনুলরা। রবিবারই নেমে গেছেন অনুশীলনে। কারণ ভুলগুলো যত দ্রুত সম্ভব শোধরাতে হবে। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে পরাজিত হলে চলবে না। বড় এক চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড়িয়ে মামুনুল বাহিনী। হেরে গেলেই মনোবলে আরেকটু চিড় ধরবে। তাজিকিস্তান ও কিরগিজস্তানের বিরুদ্ধে নামার আগে উজ্জীবিত হওয়ার মতো কিছু বের করে আনার চ্যালেঞ্জ আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে। আর সেজন্যই আগের দিন ম্যাচ খেলেই পরদিন অনুশীলনে নেমে গেছে ক্রুইফের শিষ্যরা। সফরকারী আফগানরাও পিছিয়ে থাকেনি। শনিবার দুপুরে আসার পর দীর্ঘক্ষণ বিশ্রাম নিয়েছে তারা। রবিবারই নেমে পড়েছে অনুশীলনে। বাংলাদেশ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে তারাও।
×