ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভারত বিরোধিতা থেকে প্রণতি

প্রকাশিত: ০৩:৫২, ১ জুন ২০১৫

ভারত বিরোধিতা থেকে প্রণতি

বাংলাদেশ সফরে আসা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করার আগে ‘জাতীয় ইস্যু’তে জঙ্গী রাজনীতির ধারক বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম জিয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করতে চান। ভাবটা এমন, যেন অতীতে ক্ষমতায় থাকাকালে তারা এই কাজটি নিয়মিত করতেন। আজ হঠাৎ বিষয়টা জরুরী হয়ে পড়ার কিছু কার্যকারণ অবশ্য রয়েছে। যদিও সরকারী দল তা নাকচ করেছে এই যুক্তিতে যে, বেগম জিয়া বিরোধীদলীয় নেত্রী নয়, নয় কোন জনপ্রতিনিধি। সুতরাং আলোচনা হতে পারে সংসদে বিরোধী নেত্রী রওশন এরশাদের সঙ্গে। বেগম জিয়ার দল অবশ্য বলেনি, জাতীয় ইস্যু বলতে তারা কি বুঝাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি-জামায়াত জোট যে রাজনীতি করে আসছে, তা ভারতের বিরোধিতার। সেই সঙ্গে নতুন উপদ্রব জঙ্গী কানেকশন। যার প্রমাণ তারা ক্ষমতা ও ক্ষমতার বাইরে থাকার সময়ে দিয়ে এসেছে। গ্রেনেড হামলা, বোমাবাজি চালিয়েছে ক্ষমতায় থাকাকালে। আর গত জানুয়ারি-মার্চ সময়ে পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ হত্যা করে দেশে জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদের প্রসার ঘটিয়েছে। এই জঙ্গীরা বাংলাদেশে সন্ত্রাস চালিয়ে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেয়। এবং সেখানেও এরা ঘাঁটি গেড়েছে। জাতীয় ইস্যু হিসেবে তিনি জঙ্গীবাদ মোকাবেলাকে প্রাধান্য যদি দিয়ে থাকেন, তবে বুঝতে হবে শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে জঙ্গী নেত্রী খ্যাত বেগম জিয়ার। কিন্তু তিনি নিজের এই জঙ্গী অবস্থানকে চাপা দিয়ে রাখার জন্য হলেও আলোচনার সুযোগ নিয়ে নিজস্ব দাপটকে সামনে আনতে চান। অবরোধের নামে পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ হত্যা মামলার আসামির অবস্থানকে দুর্বল করার জন্য হয়ত এটাও এক নয়া কৌশল। যা তার ইতিপূর্বের সব চালাকির মতো ধরা পড়ে যাবে অচিরেই। ভারত ইস্যুতে ভোল পাল্টাতে চাইছে ঘৃণ্য সাম্প্রদায়িক ও যুদ্ধাপরাধীর দল জামায়াত সঙ্গী বিএনপি। তাই মোদির সফরকে সামনে রেখে এখন ভারতপ্রেমী সাজার যে কসরত করছে, তার নেপথ্যে পরিবর্তিত প্রেক্ষাপট কাজ করছে মনে হতে পারে। কিন্তু ভারতীয় ‘জুজু’ দেখিয়ে মাঠ গরম করার রাজনীতি ছেড়ে দিলে বিএনপি-জামায়াত জোটের আর অবশিষ্ট থাকে কি? বেগম জিয়া মোদির সঙ্গে বৈঠকের জন্য আগ বাড়িয়ে সময় চেয়েছেন। লক্ষ্য ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ এনে মধ্যবর্তী নির্বাচনের জন্য মোদির মারফতে চাপ প্রয়োগ। কত দুর্বল ও বালকোচিত ভাবনার বশবর্তী হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে দলিল দস্তাবেজ হাজির করার প্রস্তুতি নিয়েছেন তিনি। তাতে ফলাফল কি হবে সে নিয়ে তাদের কোন ভাষ্য পাওয়া না গেলে বাস্তব পরিস্থিতি জানান দেয় যে, ভারতের ক্ষমতাসীন ‘হিন্দুত্ববাদী’ সরকারের অনুকম্পা চায় বিএনপি-জামায়াত। তা পাওয়ার জন্য তারা গত বছরই মোদি বিজয়ী হওয়ায় উল্লসিত হয়ে পড়েছিল। ধরেই নিয়েছিল, জামায়াতের মতোই মৌলবাদী দল হিসেবে বিজেপির সঙ্গে সখ্য গড়ে উঠবে। বিজেপি তাদের ক্ষমতায় বসার পথ সুগম করে দেবে। কংগ্রেসের পতনের পর কংগ্রেস মিত্র আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে যেহেতু বিজেপি, সুতরাং জামায়াত সঙ্গী বিএনপির দিকে ঝুঁকবেন মোদি। কিন্তু আড়াই দফা প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়া হয়ত জানেন না বাংলাদেশে সরকার বদলালে যেমন পররাষ্ট্র নীতিসহ বহু কিছু বদলায়, তেমনি ভারতে তা বদলায় না। পূর্ববর্তী সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় থাকে। তথাপি বেগম জিয়া প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ভারতীয় শাসককুলের দৃষ্টিগ্রাহ্য হতে। ক্ষমতায় থাকাকালে বেগম জিয়া প্রতিবেশীমুখী কূটনীতি চর্চার চেয়ে পূর্বমুখী এক অলীক কূটনীতির চর্চা করে গেছেন। নেতিবাচক ও প্রতিবেশী বিরোধিতার রাজনীতি যে একুশ শতকে অচল হয়ে গেছে, তিনি তা বুঝতে পারেন না। বরং পুরনো ধারা বজায় রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে করে ক্লান্তপ্রায়। ছিলেন জেনারেলের স্ত্রী, ফার্স্টলেডি এবং গৃহবধূ থেকে দলের চেয়ারপার্সন হয়ে অবশেষে প্রধানমন্ত্রী হন আড়াই দফা। এই যে সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠা, যার প্রতি পদে পদে রয়েছে মিথ্যাচার ও ভারতবিরোধিতা। ভারত মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে যে সমর্থন ও সহায়তা করেছে, তা বেগম জিয়ার মনোপূত নাও হতে পারে। কারণ তিনি সেক্টর কমান্ডার স্বামীর ডাকে পাকিস্তানী হানাদারদের ছেড়ে মুক্তাঞ্চলে যেতে রাজি হননি। ক্ষমতায় গিয়ে তাই কাছে বসান যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতাদের। এমনকি মন্ত্রী পদেও তাদের অলঙ্কৃত করে স্বাধীন দেশের পতাকা ব্যবহারের সুযোগ করে দেন। পাকিস্তানী মানসিকতার আধিপত্যে লালিত হওয়ার কারণে নেতিবাচক রাজনীতির অন্ধগলিতে চলাফেরা করছেন। বিবিসিখ্যাত সাংবাদিক মার্ক টালি সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, ‘বিএনপি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ভারতবিরোধী জাতীয়তাবাদের ওপর ভিত্তি করে। বাংলাদেশে ভারতবিরোধী কথা বলে দক্ষিণ ও চীনাপন্থীদের এক গোয়ালে জড়ো করেছিলেন জিয়া। একদা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গোয়েšদা বিভাগে দীর্ঘদিন কর্মরত জিয়া পাকিস্তানী ধারাকে প্রতিষ্ঠিত করতে ভারত নামক ‘জুজু’র ভয় দেখাতে থাকেন। ভারত যে জুজু তা জনগণের মস্তিষ্কে অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে পাকিস্তানী চেতনাধারী জামায়াত, মুসলিম লীগসহ সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী ও ডানপন্থীদের মিশ্রণে দল গঠন করেন। ভারতবিরোধিতা মানেই দাঁড়ায় তখন পাকিস্তানের প্রতি সহমর্মিতা, আনুগত্য প্রকাশ। অন্ধ ভারত বিরোধিতা এবং চরম সাম্প্রদায়িকতার ওপর নির্ভর করে বিএনপি জনগণকে বিভ্রান্ত করার সুযোগ কাজে লাগিয়ে ক্ষমতাকে দীর্ঘ সময় আঁকড়ে রাখে। জিয়া তাই ভাসানীর ভারতবিরোধী ইমেজকে ব্যবহার করে ফারাক্কার পানির দাবিতে সাজানো লংমার্চ করে ভারতবিরোধী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। দাবি করেন নিজে ব্রাহ্মণ্যবাদ বিরোধী। নির্বাচনকালে ভারতের আগ্রাসন ও ভারতীয় জুজুর ভয় দেখিয়ে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের দোহাই পেড়ে জনগণের বিশ্বাসকে বিভ্রান্ত করার মাধ্যমে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার কাজটিতে সাফল্য পেয়েছিলেন জিয়া। শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরতে বাধা সৃষ্টির জন্য জিয়া ও তার দলবল ভারতবিরোধী অপপ্রচারে মেতে উঠেছিল। তালপট্টি দ্বীপ নামক পাকিস্তানী আমলের পুরনো বিবাদকে উসকে দিয়ে এমন পরিবেশ তৈরি করেন, যাতে জনগণ মনে করে শেখ হাসিনা ভারতের সেবাদাস। জিয়া এমন ভাষ্যও দেন হাসিনাকে ইঙ্গিত করে যে, দেশের অভ্যন্তরীণ শক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিদেশী শক্তি দেশের ভেতর বিশৃঙ্খলা ও অশান্তি তৈরির জন্য সচেষ্ট, এদের বিরুদ্ধে জনগণকে সতর্ক থাকার কথাও বলেন। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ক্ষমতা দখলকারীরা ভারতবিরোধী জজবা তুলে প্রচার চালায় যে, মুজিব সরকার ছিল ভারতের ‘পুতুল সরকার’। ১৯৭৫-এর ৭ নবেম্বর গুজব ছড়ানো হয়, ভারতের সেনাবাহিনী বাংলাদেশে প্রবেশ করে জেলে আটক আওয়ামী লীগের চার নেতাকে ক্ষমতায় বসাতে চায়। তাই তড়িঘড়ি করে জেলে তাদের হত্যা করা হয়। জাসদের গণবাহিনী ও জিয়ার অনুসারীরা তথাকথিত সিপাহি-জনতা বিপ্লবের নামে খালেদ মোশাররফকে ভারতের এজেন্ট অভিহিত করে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। জিয়া ক্ষমতায় বসার পর সেøাগান ওঠে, ‘রুশ-ভারতের দালালেরা, হুঁশিয়ার, সাবধান।’ এর লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগ। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সবচেয়ে শীতল সম্পর্ক ছিল জিয়ার সময়। দু’দেশের মধ্যে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে কোন ভূমিকা রাখতে পারেননি জিয়া। গঙ্গার পানির হিস্যাটুকুও দাবি করার সাহস পাননি। সে সময় প্রচার চলতে থাকে যে, বাংলাদেশ সত্যিকারের স্বাধীন হয়েছে ৭ নবেম্বর। ১৯৭১ হতে ভারতের কবলে থাকা দেশ মুক্ত হয়েছে জিয়ার নেতৃত্বে। চীনপন্থী বুদ্ধিজীবীরা সোচ্চারে গলা ফাটিয়ে জানান দিতে থাকে যে, ভারতের রাহুমুক্ত হয়ে দেশ স্বাধীন হলো। কিন্তু যতই ভারতবিরোধী প্রচারণা চালানো হোক সেনাশাসক জিয়ার নতজানু ভারত নীতি ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ভারতকে তোষণ করা থেকে বিরত থাকেননি। জিয়া ভারতে বসে ১৯৭১ সালে সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেও ভারতবিরোধী হওয়ার পেছনে পাকিস্তানের কাকুলের প্রশিক্ষণের ফলাফল। ভারতবিরোধিতা মানসিক আধিপত্যে এমনভাবে ঠাঁই নিয়েছে যে এর বাইরে অন্য কিছু ভাবে না। তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করেন অপর কাকুল প্রশিক্ষিত সামরিক জান্তা শাসক এরশাদ। পাকিস্তানের সামরিক জান্তা শাসকদের মতোই বাংলাদেশের দুই জান্তা শাসক প্রকাশ্যে ভারতবিরোধিতা প্রদর্শন করলেও তলে তলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতেন। নতজানু নীতির আধিক্যে তারা গোপনে সম্পর্ক রাখত। ভারত বিরোধী জজবার বিস্তারে তারা যে অবদান রেখেছেন, তার রেশ অনেকদূর পর্যন্ত গড়িয়েছে। ক্ষমতা দখলের পর পাকিস্তানের শাসকরা বাঙালীকে ঘৃণা করতে শুরু করে। আইউব খান তার গ্রন্থে বলেছেনও, বাঙালীরা তাদের কাছে হিন্দু প্রভাবিত হিসেবে প্রতিভাত হয়। তাই দেখা যায়, আইউব ১৯৫৮ সালে ক্ষমতা নিয়েই ঘোষণা করে, যুক্তফ্রন্ট ভারতের সঙ্গে মিলে পাকিস্তান বিক্রির চক্রান্ত করেছিল। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের অপর জান্তাশাসক ইয়াহিয়া খান বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানকে ভারতের কাছে তুলে দেয়ার ষড়যন্ত্রে মেতেছিল। একই সময় যুদ্ধাপরাধীদের শীর্ষ নেতা জামায়াতের গোলাম আযম বলেছিল, মুক্তিযুদ্ধের নামে যা হচ্ছে, তা হলো পূর্ব পাকিস্তানকে ভারতের কাছে বিক্রি করে দেয়া। পাকিস্তানীদের প্রেতাত্মায় পরিণত হওয়া জিয়াউর রহমান ১৯৭৯ সালে বলেছিল, যারা বিএনপিকে সমর্থন করে না, তারা বাংলাদেশকে বিক্রি করে দিতে চায়। আর ওনার স্ত্রী আড়াই দফা প্রধানমন্ত্রী থাকা বেগম খালেদা ২০১০ সালে এসে বলেন সেই পাকিস্তানীদের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে, প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) ভারতের কাছে দেশ বিক্রি করে এসেছেন। দেশ বিক্রির গল্পটা পাকিস্তান হতে উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন। ১৯৭২ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফরকালে ১৯ মার্চ বঙ্গবন্ধু ও ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী, সহযোগিতা ও শান্তি চুক্তি সম্পাদন করেন। ২৫ বছর মেয়াদী চুক্তিটি। তখন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের হাতে অস্ত্র, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী মার্কিন-চীন প্রভৃতি দেশ তখনও বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়নি। চুক্তিটি ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বরে সম্পাদিত ভারত-সোভিয়েত মৈত্রী চুক্তির অনুরূপ। বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী চুক্তির শুরুতে উল্লেখ রয়েছে, ‘শান্তি, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদের একই আদর্শ অনুপ্রাণিত হয়ে একই আদর্শের বাস্তব রূপায়ণের লক্ষ্যে একযোগে সংগ্রাম, রক্তদান এবং আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে বন্ধুত্বের বন্ধন সুদৃঢ় করার অঙ্গীকার নিয়ে মুক্ত, স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের বিজয় অভ্যুদয় ঘটিয়ে...। ১২টি অনুচ্ছেদের চুক্তিটি ছিল সদ্য স্বাধীন দেশের জন্য রক্ষাকবচ। চীনপন্থী, ভারতবিদ্বেষী মহল, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি প্রচার করতে থাকে, ‘এই চুক্তির মাধ্যমে দেশের সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দিয়েছে।’ চুক্তির ‘গোপন শর্তাবলী’ বাংলাদেশকে ভারতের আশ্রিত রাজ্যের মর্যাদায় নামিয়ে দিয়েছে। ’৭৫ পরবর্তী জান্তাশাসকরা দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকলেও চুক্তিটি বাতিল করেনি। এমনকি বেগম জিয়া যাকে দাসত্বের চুক্তি বলে অভিহিত করেছেন, তিনিও ক্ষমতায় এসে তা বাতিল করেননি। এমনকি কথিত ‘গোপন শর্তাবলী’ও প্রকাশ করেননি। অথচ এ নিয়ে প্রচুর অপপ্রচার ছড়ানো হয়েছিল। আবার দেখা যায়, ১৯৮০ সালে জিয়া ভারতের সঙ্গে ট্রানজিট চুক্তি করেন। খালেদা ২০০২ সালে দিল্লী গিয়ে তা নবায়ন করেন। মিথ্যা ও মোনাফেকির রাজনীতির মাধ্যমে ভারতবিরোধিতার নামে রাজনৈতিক ফায়দা লুটেছে তারা। এইভাবে তারা সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ, অন্ধ ভারতবিরোধিতা এবং পাকিস্তানী মানসিকতার পরিচয় দিয়ে আসছে। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ২০১০ সালের ১১ জানুয়ারি ভারতে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে তিনটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি ও ২টি সমঝোতা স্মারক সই করেন। বেগম জিয়া এই চুক্তির বিরোধিতা করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী ভারতে গিয়ে দেশ বিক্রি করে দিয়ে এসেছেন। বাংলাদেশ-ভারত যৌথ ঘোষণাকে প্রত্যাখ্যান করে বেগম জিয়া বলেন, ওটা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের সঙ্গে ভারত সরকারের ইশতেহার। চুক্তিটিকে তিনি ‘দাসখত’ বলে অভিহিত করেন। আরও বলেন, বাংলাদেশের যা কিছু দেয়ার ছিল, ভারতকে উজাড় করে দিয়ে এসেছেন শেখ হাসিনা। তার এই ভারতবিরোধিতার অস্ত্র ভোঁতা, পুরনো ও মরচে ধরা। বেগম জিয়া ভারত সফরকালে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী সাদর অভ্যর্থনা জানান। কিন্তু প্রণব মুখার্জীর ঢাকা সফরকালে তিনি হরতাল ডেকে বসেন এবং কোন অজুহাত ছাড়াই পূর্বনির্ধারিত সাক্ষাত বাতিল করেন। পার্বত্য শান্তিচুক্তিকালে বেগম জিয়া বলেছিলেন, এর ফলে ফেনী পর্যন্ত ভারতের দখলে যাবে। কিন্তু যায়নি। ক্ষমতায় এসেও তিনি সে চুক্তি বাতিল করেননি। ভারতবিরোধিতা যার রাজনীতি, সেই তিনি হঠাৎ ভারতের প্রতি প্রণতি জানানোর জন্য এত লম্ফঝম্ফ করছেন, তার মাজেজা একটাইÑ ভারতের সহায়তায় ক্ষমতায় বসার সর্বশেষ প্রচেষ্টা।
×