ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

উচ্চ আদালতে ছুটি

প্রকাশিত: ০৩:৫২, ১ জুন ২০১৫

উচ্চ আদালতে ছুটি

প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেয়ার পর গত ১৮ জানুয়ারি প্রথম আদালতে বসেন বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহা। এরপর চিরাচরিত প্রথা অনুযায়ী এ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের পক্ষ থেকে এ্যাটর্নি জেনারেল এবং আইনজীবীদের পক্ষ থেকে সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি তাঁকে সংবর্ধনা দেন। আইনজীবী ও বিচারপতির ওই মিলনমেলায় প্রধান বিচারপতি উচ্চ আদালতসহ সারাদেশের আদালতে বিরাজমান মামলার জট কমানো, আদালতের ছুটি কমানো, অধস্তন আদালত নিয়ন্ত্রণ ও বিচারক নিয়োগ, সিনিয়র বিচারপতিদের গুরুত্ব দিয়ে বেঞ্চ গঠনসহ কিছু বিষয়ে কথা বলেন। তবে সুনির্দিষ্টভাবে মামলা জট কমাতে উচ্চ আদালতে ১৮৬ দিন ছুটির বিপক্ষে তিনি নিজের মত প্রকাশ করেন গত ১৭ এপ্রিল সুপ্রীমকোর্ট মিলনায়তনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ল’ এ্যালামনাই এ্যাসোসিয়েশনের ‘বৈশাখী উৎসবে’ যোগ দিয়ে। তিনি বলেন, ‘সব ছুটি যোগ করলে বাংলাদেশে একজন বিচারক বছরে ছয় মাসের বেশি সময় ছুটি ভোগ করেন। এটা রিয়েলিটি। এটা কেউ আমরা ধামাচাপা দিয়ে পারব না। এই ছুটি নিয়ে আমরা যদি চলি তাহলে তিন লাখ মামলা থেকে ১০ লাখ মামলা হবে আরও দশ বছরে।’ মামলাজটে আমাদের বিচার বিভাগ। বছরের পর বছর নিষ্পত্তিকৃত মামলাকে ছাড়িয়ে অমীমাংসিত মামলার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, গত কয়েক বছরে উচ্চ ও নিম্ন আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৩০ লাখের নিচে নামছেই না! পঞ্চাশ হাজার নয়, এক লাখও নয়, ত্রিশ লাখ মামলা! এটি কল্পনা করতেও বুকের পাটা লাগে! ইংরেজীতে একটি কথা আছেÑ জাস্টিস ডিলেইড ইজ জাস্টিস ডিনাইড অর্থাৎ বিচার বিলম্বিত হওয়া বিচার না পাওয়ার শামিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে দেশে বিচার প্রার্থীদের প্রায়ই এ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। উচ্চ আদালতে মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতার কারণে বিচার প্রার্থীদের দুর্ভোগের শেষ নেই। তাদের হয়রানির শিকার হতে হয় নানাভাবে। মামলা দায়েরের পর তা কার্যতালিকায় না ওঠা, সেকশন থেকে বেঞ্চে সময়মতো ফাইল না আসা ইত্যাদি কারণে মামলার সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে, সে তুলনায় আদালত বা বিচারকের সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব হয়নি। বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতার কারণে বিচার প্রার্থীর বিবিধ বিড়ম্বনার নজির পাওয়া যাবে। বিচার ব্যবস্থা রাষ্ট্রের চারটি স্তম্ভের অন্যতম। এই স্তম্ভকে সর্ব উপায়ে সর্বতোভাবে সুস্থ রাখার দায়িত্ব রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের। গত মাসে এক সেমিনারে প্রধান বিচারপতি প্রদত্ত বক্তব্যে আরও উঠে আসে মামলাজটের বাস্তবতা ও তার সমাধানের ইঙ্গিত। তিনি যথার্থই বলেছেন, ‘এ জট কমাতে প্রয়োজন যথেষ্ট বিচারক এবং লজিস্টিক সাপোর্ট।’ উচ্চ আদালতে দীর্ঘ ছুটির ব্যাপারে প্রধান বিচারপতি যে পর্যবেক্ষণ ও মন্তব্য প্রদান করেছেন তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণের কোন অবকাশ নেই। আমরা তাঁর অভিজ্ঞতালব্ধ বক্তব্যকে সম্পূর্ণ সমর্থন করি। অদূর ভবিষ্যতে উচ্চ আদালতে ছুটি স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসা হলে মামলা জট কমাতে তা যথেষ্ট সহায়ক হবে এতে কোন সংশয় নেই।
×