ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রসূতির পেটে এক হাত কাপড় রেখেই সেলাই

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ৩১ মে ২০১৫

প্রসূতির পেটে এক হাত কাপড় রেখেই সেলাই

স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা ॥ জেলা জুড়ে গড়ে উঠা অনুমোদিত ক্লিনিকগুলোতে সিজারসহ জটিল অপারেশনগুলো করা হচ্ছে সাতক্ষীরা স্টাইলে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ডাক্তাররা তাদের ইচ্ছামত অপারেশন শেষে রোগীদের ঠেলে দিচ্ছেন মৃত্যুর দিকে। এক মাস আগে সিজার হওয়া এক গৃহবধূর পেট থেকে শুক্রবার পুনরায় অপরেশন করে বের করা হয়েছে পেটের মধ্যে ডাক্তারের রেখে দেয়া প্রায় ১ হাত বড় ব্যান্ডেজ। ডাক্তারী ভাষায় এই কাপড়কে মব বলে। গত এক মাস ধরে অসহ্য মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতর হয়ে শুক্রবার শহরের আর একটি ক্লিনিকে অপারেশন করে গৃহবধূ সেলিনা খাতুনের পেট থেকে বের করা হয় এই কাপড়। আর এই জীবন মরণ লড়াইয়ে গত এক মাসে দরিদ্র সেলিনার পরিবারে গচ্ছা গেছে প্রায় লাখ টাকা। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার সীমান্তবর্তী কুশখালি গ্রামের দিনমজুর এলাদার মোল্লার স্ত্রী মোছাঃ জুলেখা বেগম জানান, তার মেয়ে সন্তান সম্ভাবা সেলিনা খাতুনকে গত ১৯ এপ্রিল কাথণ্ডা বাজারের বিসমিল্লাহ সার্জিক্যাল ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। ২৩ মে সকালে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ আসিব কাওছার সিজারের মাধ্যমে সেলিনার পুত্র সন্তান প্রসব করান। সিজারের সেলাই দিয়ে ডাক্তার চলে যাওয়ার পর থেকে সেলিনার ব্যথা যন্ত্রণা বাড়তে থাকে। ব্যথা কমানোর জন্য তাকে উচ্চ শক্তিসম্পন্ন মানের ব্যথার বড়ি ও এন্টিবায়োটিক দেয়া হয়। একপর্যায়ে ২৬ এপ্রিল সেলিনাকে ছাড়পত্র দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়। বাড়ি যেয়ে তার যন্ত্রণা না কমে সেলিনার পেট ফুলতে থাকে। অবস্থার অবনতি হলে ১ মে সেলিনাকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চার ব্যাগ রক্ত (বি+) দেয়া হয়। একপর্যায়ে কয়েকদিন চিকিৎসা দেয়ার পর একটি ব্যবস্থাপত্র ধরিয়ে দিয়ে ৫ মে ছাড়পত্র দেয়া হয়। বাড়িতে নিয়ে পেট আরও ফুলতে শুরু হলে অপারেশনের সময় পেটে কিছু থেকে যেতে পারে এমন আশঙ্কায় ডাঃ ফয়সাল আহম্মদ পুনরায় অপারেশনের জন্য পরামর্শ দিলে সেলিনাকে বৃহস্পতিবার শহরের ফারজানা ক্লিনিকের ২০৪ নং ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। সেখানে সার্জারি কনসালট্যান্ট ডাঃ মনোয়ার হোসেন অপারেশন করে সেলিনার পেট থেকে প্রায় এক হাত ব্যাণ্ডেজ (মব) বের করেন। কাথণ্ডা ক্লিনিকে সেলিনাকে সিজারের পর থেকে পেটে ব্যান্ডেজ থাকার কারণে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে তার রক্ত ও চিকিৎসা বাবদ প্রায় ১ লাখ টাকা খরচ হয়েছে বলে জানান সেলিনার পরিবার। কাথ-া বিসমিল্লাহ সার্জিক্যাল ক্লিনিকের ব্যবস্থাপক মোঃ কামরুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ দায় তাদের নয়, সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের। এ ব্যাপারে ডাঃ মনোয়ার হোসেন সেলিনার পেটে মব পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে সাংবাদিকদের বলেন, মেয়েটির অনেক কম বয়সে বিয়ে হয়েছে। তাতে সিজারের সময় এ ধরনের মব থেকে যাওয়াটা মেয়েটির জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ছিল।
×