ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জিয়ার দর্শনে বিএনপি পুনর্গঠনই এখন চ্যালেঞ্জ ॥ মওদুদ

জিয়ার মাজারে খালেদা জিয়া ॥ ছাত্রদলের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৩১ মে ২০১৫

জিয়ার মাজারে খালেদা জিয়া ॥ ছাত্রদলের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৩৪তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করেছে বিএনপি। এ উপলক্ষে দুপুর পৌনে ১২টায় দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে শেরেবাংলানগরে জিয়ার মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। এদিকে জিয়ার মাজারে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে ছাত্রদলের দুই গ্রুপ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এতে ২ জন আহত হয়। মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, জিয়ার দর্শনে বিএনপি পুনর্গঠনই এখন চ্যালেঞ্জ। দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে জিয়ার প্রতি খালেদা জিয়ার শ্রদ্ধা নিবেদনের আগে ছাত্রদলের দুই গ্রুপ সংঘর্ষে লিপ্ত হলে সেখানে এক ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। কেউ কেউ ঝামেলা এড়াতে দূরে সরে পড়েন। সরকারী তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মোহাম্মদপুর থানা ছাত্রদল নেতাকর্মীদের প্রথমে কথা কাটাকাটি ও পরে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় ছাত্রদলের নারী কর্মীরাও প্রতিপক্ষের আক্রমণের শিকার হন। একপর্যায়ে উভয় গ্রুপের ছাত্রদল নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হলে আশপাশের এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেলসহ অন্যদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন ও ফাতেহা পাঠ শেষে তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাতে অংশ নেন খালেদা জিয়া। এরপর মাজার প্রাঙ্গণে ওলামা দলের দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে অংশ নেন খালেদা জিয়া। এ সময় সেখানে ড্যাব ও জিসাস স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচীর আয়োজন করে। জিয়ার মাজারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আ স ম হান্নান শাহ, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সেলিমা রহমান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, ড. মুশফিকুর রহমান, রুহুল আলম চৌধুরী, ডাঃ এজেডএম জাহিদ হোসেন, এ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, বিএনপি নেতা মোহাম্মদ শাহজাহান, ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, ফজলুল হক মিলন, আসাদুজ্জামান রিপন, নাজিম উদ্দিন আলম, হাবিবুর রহমান হাবিব, খায়রুল কবির খোকন, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, শিরিন সুলতানা, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শাহজাহান মিয়া সম্রাট, হেলেন জেরিন খান, নিলুফার চৌধুরী মনি, শাম্মী আখতার, সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু, শামা ওবায়েদ প্রমুখ। জিয়ার মাজার থেকে বের হয়ে খালেদা জিয়া রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ করেন। দুপুর সোয়া ১২টায় প্রথমেই জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ পাশে টিএ্যান্ডটি মাঠে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ করেন তিনি। এর পর একে একে মোহাম্মদপুর টাউন হল প্রাঙ্গণ, কলাবাগান, ধানম-ি, আজিমপুর, লালবাগ বালুর মাঠ, হাইকোর্ট মাজার, শান্তিনগর, মৌচাক, খিলগাঁও, শাহজাহানপুর, নয়া পল্টন, মতিঝিল, দয়াগঞ্জ, যাত্রাবাড়ী শহীদ ফারুক রোড, রায় সাহেব বাজার, নয়াবাজার, জজকোর্ট, বংশাল, নর্থসাউথ রোডসহ বিভিন্ন স্পটে দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ করেন খালেদা জিয়া। বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ধানম-ির সুগন্ধা কমিউনিটি সেন্টারে পুলিশি বাধার কারণে দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ করতে পারেননি খালেদা জিয়া। দুপুর ১টার দিকে সুগন্ধা কমিউনিটি সেন্টারে স্থানীয় বিএনপির পক্ষ থেকে গরিব ও দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণের আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু পুলিশের বাধায় ওইখানে আর খাবার বিতরণ করতে পারেননি। পরে পাশের মেডিনোভার সামনের রাস্তায় খালেদা জিয়া দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ করেন। আজ রবিবার ও কাল সোমবারও রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে খাবার বিতরণ করবেন তিনি। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নয়া পল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সকাল ৬টায় দলীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার পাশাপাশি উত্তোলন করা হয় কালো পতাকা ও জাতীয় পতাকা। দিবসটি উপলক্ষে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া আগেই বাণী দিয়েছেন। মাগরিবের নামাজের পর বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে জিয়াউর রহমানসহ দলের সকল প্রয়াত নেতার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। জিয়ার দর্শনে বিএনপি পুনর্গঠনই এখন চ্যালেঞ্জ-মওদুদ ॥ খালেদা জিয়ার সঙ্গে জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, জিয়ার দর্শনে বিএনপি পুনর্গঠনই এখন চ্যালেঞ্জ। তার দর্শনের ভিত্তিতে বিএনপিকে পুনর্গঠিত করে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। তিনি বলেন, বিএনপি কোন চরম ডানপন্থী দল নয়। বিএনপি হলো মধ্যমপন্থী উদার ও গণতান্ত্রিক দল। মওদুদ বলেন, আজ গণতন্ত্র সঙ্কটের মধ্যে পড়েছে। এই সঙ্কট থেকে উত্তরণে বিএনপির কাছে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা। এজন্য আমাদের দল পুনর্গঠন করতে হবে। জিয়ার দর্শনের আদলে পরিচ্ছন্ন রাজনীতি করতে হবে। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান উদার রাজনীতি করতে চেয়েছেন। তিনি চেয়েছেন, বিএনপি চরম ডানপন্থী দল হবে না, এটা আমাদের মনে রাখতে হবে। জিয়া যে দর্শন দিয়ে গেছেন, তা এখনও আমরা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারিনি। এখন আমাদের প্রথম কাজ হচ্ছে দল পুনর্গঠন করা। শুধু তাই নয়, বিএনপির রাজনীতিকেও জিয়ার আদর্শে পরিচ্ছন্ন করতে হবে। ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, জিয়াউর রহমান গণতন্ত্রের কথা বলে গেছেন। তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের কারণেই জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও দেশকে আত্মনির্ভরশীল হিসেবে গড়ে তোলার দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন। হাতে হাতিয়ার নিয়ে তিনি রণাঙ্গনে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিলেন। তিনি বলেন, আমরা সেই রাজনীতি করতে চাই, যে রাজনীতি জিয়া আমাদের শিখিয়ে গেছেন। তিনি বলেন, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা, সেনা অভ্যুত্থানের পর ক্ষমতায় আসা, বিএনপি গঠন এবং দেশকে একদলীয় শাসন থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় জিয়ার অবদান ছিল।
×