ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

কঠোর পরিশ্রম অধ্যবসায় শেষে আনন্দের বার্তা, ভবিষ্যতের হাতছানি

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ৩১ মে ২০১৫

কঠোর পরিশ্রম অধ্যবসায় শেষে আনন্দের বার্তা, ভবিষ্যতের হাতছানি

মোরসালিন মিজান ॥ যে সে পরীক্ষা নয়। এসএসসি! বিরাট প্রস্তুতি। পরিশ্রম। এরপর পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়া। তাতে কী? ফলের সময় ঘনিয়ে আসতেই বুক ধুকধুক শুরু হয়ে যায়। কোন তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই বলে দেয়া যায়, এবারও ফল প্রকাশের আগের রাতটি না ঘুমিয়ে কাটিয়েছে বহু শিক্ষার্থী। কী ফল হবে? কত ভাল হবে? যদি কিছু মন্দ হয়! কত মন্দ হবে? এসব ভেবে রাত ভোর করে দিয়েছে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা। বাবা-মায়েদের অবস্থা তো আরও খারাপ। যেন তাঁরা নিজেরাই পরীক্ষা দিয়েছেন! সেই থেকে ফলাফলের অপেক্ষা। যাই হোক, অপেক্ষার অবসান হয়েছে। শনিবার প্রকাশিত হয়েছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল। অনেক বড় উপলক্ষ্য। তাই দুপুরের আগেই নিজ নিজ স্কুলে সমবেত হয়েছিল শিক্ষার্থীরা। ঢাকার স্কুলগুলোতে বেলা ১টার পর পরই চলে আসে ফলাফল। অমনি শুরু হয়ে যায় উৎসব। হাসিরাসি আনন্দ। নাচ গান হৈ হুল্লোড়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা জানিয়ে দেয়Ñ স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। বিকেলে এই আনন্দ এই উদ্যাপন চলে পরীক্ষার্থীদের ঘরে ঘরে। সব মিলিয়ে অনন্য সাধারণ উৎসবের দিন। ফলাফল অনুযায়ী, এ বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হার ৮৭.০৪ শতাংশ। মাদ্রাসা বোর্ডে পাসের হার ৯০.০২ শতাংশ। কারিগরিতে পাস করেছে ৮৩.০১ শতাংশ। মোট জিপিএ ৫ পেয়েছে ১ লাখ ১১ হাজার ৯০১ জন। মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১৪ লাখ ৭৩ হাজার ৫৯৪ জন। পাস করেছে ১২ লাখ ৮২ হাজার ৬১৮ জন। ৫ হাজার ৯৫টি প্রতিষ্ঠানে পাস করেছে শতভাগ শিক্ষার্থী। তবে বড়সরো চমক সৃষ্টি করেছে ডেমরার শামসুল হক খান স্কুল এ্যান্ড কলেজ। ঢাকার একেবারে শেষ প্রান্তের এই স্কুলটি এবার সেরা কলেজের তালিকায় ওঠে আসেনি শুধু, প্রথম স্থান অধিকার করেছে। দ্বিতীয় হয়েছে রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল এ্যান্ড কলেজ। তৃতীয় হয়েছে আইডিয়াল স্কুল এ্যান্ড কলেজ। ফল প্রকাশের দিন প্রায় প্রতিটি স্বনামধন্য স্কুলের সামনেই ছিল উৎসবের আমেজ। প্রথমবারের মতো শীর্ষস্থান অধিকার করায় যেন আনন্দের বন্যা বয়ে গিয়েছিল ডেমরা শামসুল হক খান স্কুল এ্যান্ড কলেজে। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থী শিক্ষক অভিভাবক কেউ বসে নেই। সকলেই মেতেছে উৎসবে। স্কুলের সামনের খোলা জায়গাটিকে মনে হচ্ছিল কোন সমাবেশ স্থল। ভাল ফলাফল করা শিক্ষার্থীরা এখানে সমবেত হয়েছিল। নিজেদের ব্যক্তিগত ভাল এবং স্কুলের ভাল দুটো একসঙ্গে উদ্যাপন করেছে তাঁরা। কিছুক্ষণ পর পর মাইকে স্কুলের প্রথম হওয়ার খবরটি প্রচার করা হচ্ছিল। উল্লাসে তখন ফেটে পড়ছিল শিক্ষার্থীরা। নাচছিল। গাইছিল। কখনও সহপাঠীকে জড়িয়ে ধরছিল। প্রতিমা নামের এক শিক্ষার্থী বার বার চুমো খাচ্ছিল মাকে। কেন? অনুমান করা যায় বৈকি! তবু জানতে চাওয়া, কেন? তাঁর উত্তরÑ আমি জিপিএ ৫ পেয়েছি। এই ফলাফলের জন্য নিজে যতটা কষ্ট করেছি, মা কষ্ট করেছেন তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। তাঁর ত্যাগ আমি বলে বোঝাতে পারব না...। কথা শেষ করা হয় না। মেয়ের চোখ জলে ভিজে যায়। মা নিজেও চোখে জল ধরে রাখতে পারেন না। জলে জলে কথা হয়। কথা চলতে থাকে। প্রথম স্থান হারিয়ে এবার দ্বিতীয় সেরা হয়েছে রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল এ্যান্ড কলেজ। কিছুটা হতাশা হয়ত ছিল। তবে ভাল ফলাফল করা শিক্ষার্থীদের পেছনে ফিরে তাকানোর সময় ছিল না। সবাই মেতেছিল উৎসবে। ড্রাম বাজিয়ে ছেলে-মেয়েরা নিজেদের আনন্দ প্রকাশ করে। জাহিদ নামের এক শিক্ষার্থী জানায়, পরীক্ষায় ভাল ফলাফলের ব্যাপারে সে আশাবাদী ছিল। এরপরও ফলাফল ঘোষণার আগের রাতে একদম ঘুমোতে পারেনি। খুব টেনশনে গেছে। সেই টেনশন দূর হয়েছে জিপিএ ৫ পাওয়ার খবরে। ২০১৫ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল এ্যান্ড কলেজ। এখানেও ছিল অভিন্ন উদ্যাপন। হৈ হুল্লোড়ের মধ্যেই কেউ ফোনে বাসায় খবর দিচ্ছিল। কেউ ব্যস্ত ছিল মোবাইল ফোনে ছবি (সেলফি) তোলার কাজে। বন্ধুদের সঙ্গে ছবি তুলতে তুলতে আবির নামের এক শিক্ষার্থী বলল, বহু পরিশ্রমের ফল। স্মৃতিটা ধরে রাখতে হবে তো। এ কারণেই সেলফি! শীর্ষ দশ স্কুলের পাশাপাশি রাজধানীর নামীদামী স্কুলগুলোতেও দিনভর চলে উৎসব। বিকেল নাগাদ তা ছড়িয়ে পড়ে পরীক্ষার্থীদের ঘরে ঘরে। চলে মিষ্টিমুখ। ছেলে-মেয়ের অনেক বায়না এদিন পূরণ করে দেন বাবা-মা। সব মিলিয়ে অন্য রকম একটি দিন। তবে এই উৎসবের ক্ষণে মনে রাখা জরুরী, শুধু পরীক্ষায় ভাল ফল করাই শেষ কথা নয়। আলোকিত মানুষ হয়ে ওঠা জরুরী। এ দিকটি গুরুত্ব দিয়ে ভাববার পরামর্শ দিয়েছেন বিদগ্ধ জনেরা।
×