ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রতিকেজি বুটের ডালের দাম বেড়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকা

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ৩১ মে ২০১৫

প্রতিকেজি বুটের ডালের দাম বেড়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকা

এম শাহজাহান ॥ হালুয়া ছাড়া যেন শব-ই-বরাতের খাবারের তালিকা পূর্ণ হয় না। আর সেটি যদি হয় বুটের হালুয়া তাহলে তো কথাই নেই। তবে সেই বুট এখন আর সহজে মিলছে না। এক সপ্তায় প্রতিকেজিতে ২০-২৫ টাকা বেড়ে এখন বুটের ডাল বিক্রি হচ্ছে ৭৫-৮০ টাকায়। দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। শব-ই-বরাত সামনে রেখে ব্যবসায়ীরা বুটের ডালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এই বুটের ডাল তৈরি হয় আস্ত ছোলা থেকে। রোজা সামনে রেখে সেই ছোলার দামও এখন কেজিতে বেড়েছে ১৫-২০ টাকা পর্যন্ত। অথচ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, দেশের চাহিদা অনুযায়ী বেশি পরিমাণ ছোলা মজুদ রয়েছে। তাই দাম বাড়ার কোন কারণ নেই। রোজা সামনে রেখে শুধু ছোলা নয়, বেড়ে যাচ্ছে সব ধরনের ডালের দামও। জানা গেছে, শুধু শব-ই-বরাতের আগেই কয়েক শ’ কোটি টাকার অতি মুনাফা হাতিয়ে নিতে চায় ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায়ীরা। এজন্য শব-ই-বরাতে ব্যবহার হয় এমন সব পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। ছোলা, বুট, বুটের ডাল, ব্যাসন, পেঁয়াজ, গাজর এবং কোন কোন ক্ষেত্রে বেড়ে গেছে মসলার দামও। গত এক সপ্তায় প্রতিকেজিতে এসব পণ্যের দাম বেড়েছে ৫-১৫ টাকা পর্যন্ত। ট্যারিফ কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য মতে, এসব পণ্যের সঙ্কট দেশে নেই। রমজান সামনে রেখে পণ্যের মজুদও ভাল। কিন্তু তারপরও শুধু চাহিদা বাড়ায় দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন আমদানিকারক, পাইকারি এবং খুচরা পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা। তাদের উদ্দেশ্য শব-ই-বরাতের আগেই মুনাফার নামে ভোক্তাদের পকেট থেকে অন্তত কয়েক শ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া। আর পণ্যমূল্য বাড়ার খেসারত দিতে হচ্ছে দেশের প্রতিটি ভোক্তাকে। তবে পণ্যের দাম বাড়িয়ে যাতে অসাধু ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মুনাফা করতে না পারে সে লক্ষ্যে সরকারও কঠোর অবস্থানে রয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যাতে কোনভাবেই পণ্যের দাম বাড়িয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা ফায়দা লুটতে না পারে। সম্পতি জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে সচিব স্বাক্ষরিত পত্রে বলা হয়েছে- পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষ করে কতিপয় অসাধু ও মুনাফাখোর ব্যবসায়ী নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করে থাকে। পবিত্র রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রতিবছরের ন্যায় এবারও নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এসব পদক্ষেপের মধ্যে পণ্যের নির্বিঘœ ও নিরাপদ সরবরাহ এবং মজুদ পরিস্থিতি অক্ষুণœ রাখা, ব্যবসায়ীদের উৎসাহ প্রদান, সভা-সেমিনার, প্রচার, বাজার মনিটরিং এবং ক্রেতাদের সচেতনতা বৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিবের সভাপতিত্বে ইতোমধ্যে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই সভায় বাজারে পণ্য সরবরাহ নির্বিঘœ ও নিরাপদ রাখা এবং রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিকহারে বৃদ্ধি না পায় সেজন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে নিজ নিজ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, শব-ই-বরাত ও রমজান মাস সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় সরকারও কিছুটা অস্বস্তিতে রয়েছে। আর এজন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিভিন্ন পণ্যের আমদানিকারক ও পাইকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছে। এসব বৈঠকে ব্যবসায়ীরা যেসব প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন বাস্তবে তার প্রতিফলন ঘটছে না। উল্টো ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, রমজান আসলেই অসাধু ও মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতা বেড়ে যায়। কিন্তু তাদের সব ধরনের অপকৌশল বন্ধ এবং মূল্যবৃদ্ধির কারসাজি নস্যাৎ করতে সরকার কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, শব-ই-বরাতের পরের দিন বাজার মনিটরিংয়ের জন্য ১৪টি টিম মাঠে নামানো হচ্ছে।
×