ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

‘হরতাল অবরোধের কারণে কাক্সিক্ষত ফল আসেনি’

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ৩১ মে ২০১৫

‘হরতাল অবরোধের কারণে কাক্সিক্ষত ফল আসেনি’

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ মানুষ পুড়িয়ে মারার রাজনীতি এবং নৈরাজ্যের বিস্তারসহ ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম থেকে বিএনপি-জামায়াতকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, যারা জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলবে তাদের কোন ক্ষমা নেই। তারা কেন মানুষ খুন করবে? কেন মানুষ পুড়িয়ে মারবে? মানুষ পোড়ানো অথবা হত্যা করার তাদের কোন অধিকার নেই। আমি আশা করি এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না। যদি এর পুনরাবৃত্তি ঘটে, আমরা তো অপরাধীকে ছাড়ব না। তাদের অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। শনিবার সকালে গণভবনে চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলের অনুলিপি এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তরকালে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোটের টানা হরতাল-অবরোধের কারণে এ বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার কাক্সিক্ষত ফল আসেনি। হরতাল-অবরোধ না থাকলে ও পরীক্ষার সময় বারবার না বদলাতে হলে পাসের হার আরও বাড়ত। তিনি বলেন, বিএনপির জ্বালাও, পোড়াও, হরতাল, অবরোধের কারণে বারবার পরীক্ষায় সময়সূচী বদলাতে হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ নষ্ট হয়েছে। প্রতিকূল অবস্থায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নিয়ে এ ফল করেছে। রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে প্রতিকূল অবস্থায় পরীক্ষা দিয়েও পাসের হার এত বেশি হওয়ায় শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিকূল অবস্থায়ও এত পাসের হার কম কথা নয়। এটা বড় অর্জন। একটু সুন্দর পরিবেশ পেলে শিক্ষার্থীরা অবশ্যই পরীক্ষায় পাস করবে। পরীক্ষার ফল হাতে পাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা রাজনীতি করি মানুষের জন্য। রাজনীতির লক্ষ্য তো আমাদের মানুষের কল্যাণ করা। মানুষের জীবন উন্নত করা, সমস্যা দূর করা। এটাই তো মূল্য লক্ষ্য। তিনি বলেন, মানুষের জীবন উন্নত করতেই জাতির পিতা দীর্ঘদিন সংগ্রাম করেছেন। কোন বাধা না মেনে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। রাজনীতির এই আদর্শ নিয়েই আমরা বড় হয়েছি। স্কুল জীবন থেকেই আন্দোলনে ছিলাম। কিন্তু রাজনীতির নামে মানুষ পোড়ানোর এই আন্দোলনের বীভৎস রূপ কখনও দেখিনি। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, এটা দেখেছি, একাত্তর সালে যখন হানাদার বাহিনী দেশকে পোড়ামাটি করতে চেয়েছিল। তাদের কথাই ছিল-‘মানুষ চাই না, মাটি চাই’। হানাদার বাহিনীর সেই প্রতিধ্বনি যেন দেখেছি, বিএনপি নেত্রীর (খালেদা জিয়া) মুখে। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে পুড়িয়ে, হুকুম দিয়ে দিয়ে তারা মানুষকে হত্যা করেছে। অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর হাতে পরীক্ষার ফলের অনুলিপি হস্তান্তর করেন। পরে আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, একটি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ও একটি কারিগরি শিক্ষা বোর্ডসহ মোট ১০টি শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানগণ তাদের নিজ নিজ শিক্ষা বোর্ডের ফলাফল প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর ল্যাপটপে পরীক্ষার ফল দেখেন। এ সময় তিনি বলেন, ডিজিটাল পদ্ধতিতে ফল প্রকাশিত হলো। পরে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ফল প্রকাশ বিষয়ে রাঙ্গামাটি ও নীলফামারিতে সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসকবৃন্দ, শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেক জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলাই সরকারের লক্ষ্য। ছেলেমেয়েরা যাতে ঘরের কাছে উচ্চশিক্ষা নিতে পারে, সরকার সেই সুযোগ সৃষ্টি করতে চায়। তিনি বলেন, শত প্রতিকূলতার মধ্যেও ২০১৪ ও ২০১৫ সালে সময়মতো শিক্ষার্থীদের কাছে বিনামূল্যে সরকার বই পৌঁছে দিয়েছে। ওই সময় অনেকটাই গেরিলা কায়দায় প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বই পৌঁছে দেয়া হয়েছে। অবরোধ-হরতালে নাশকতার মধ্যে এ বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে শুধু সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার পরীক্ষা নেয় সরকার। এ ঘটনার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, শিক্ষামন্ত্রীকে আমি বললাম, এত মানুষের জীবন আমি ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারি না। ঠিক আছে, যখন হরতাল থাকবে না, অবরোধ থাকবে না- তখন ফাঁকে ফাঁকে পরীক্ষা হবে। যদিও হরতালে মানুষের সাড়া ছিল না, হরতাল বা অবরোধ কখনোই সফল হয়নি। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের অবরোধ বোধহয় এখনও চলমান, কারণ অবরোধ নাকি প্রত্যাহার হয়নি। যাই হোক, বাংলাদেশের মানুষ ওই হরতালে সাড়া দেয়নি। তাদের তথাকথিত আন্দোলন ছিল একটা গোষ্ঠীর স্বার্থে, জনস্বার্থে নয়। সেজন্য তারা আন্দোলনে জনসমর্থন পায়নি। তবুও ওই অবস্থায় আমরা কোন ঝুঁকি নিতে চাইনি। তাই পরীক্ষা নিতে হয়েছে ফাঁকে ফাঁকে। প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, আমি জানি এভাবে পরীক্ষা দিতে আমাদের ছেলে-মেয়েদের খুবই কষ্ট হয়েছে। কারণ একটা বিষয়ে পরীক্ষা দিতে ভাল পড়াশোনা করে তারা প্রস্তুত হয়। তারপর তাদের পরীক্ষা হবে না, এটা জানার পর আসলে এক্ষেত্রে তাদের মনটাই তো ভেঙ্গে যায়। পরীক্ষার মনোযোগটা তো নষ্ট হয়ে যায়। এভাবেই তাদেরকে পরীক্ষা দিতে হয়েছে। এতকিছুর পরও এবার ৮৭ দশমিক ০৪ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা কিন্তু এর আগে ৯৩ ভাগ পর্যন্ত পাসের হার তুলতে সক্ষম হয়েছিলাম। খুব আকাক্সক্ষা ছিল- এবার আরও বৃদ্ধি পাবে। আমি জানি, যদি হরতাল-অবরোধ না থাকত, পরীক্ষার সময় বারবার পরিবর্তন না হতো তাহলে অবশ্যই পাসের হার আমাদের ছেলে-মেয়েরা বাড়াতে পারত। ভবিষ্যতে আমি আশা করি, পাসের হার আরও বাড়বে। চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি বিএনপি-জামায়াতের অবরোধে ফেনীতে বোমা বিস্ফোরণে একটি চোখ হারানো এসএসসি পরীক্ষার্থী মিনহাজুল ইসলাম অনিকের অবস্থা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, অনিকেরও তো পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিল, তারও তো পাস করার কথা ছিল। কিন্তু সে পরীক্ষা দিতে পারেনি। বোমার আঘাতে তার একটা চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বারবার ভারতে পাঠাচ্ছি। সেখানে চিকিৎসা চলছে। অনিকের একটা চোখ সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। সেখানে পাথরের চোখ লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। এ রকম বহু আছে, দেখলে কষ্ট লাগে। এসব শিক্ষার্থীর আজ পরীক্ষার ফল বের হওয়ার কথা ছিল। তবে আমি বলেছি, ফিরে এসে তুমি (অনিক) আবার পরীক্ষা দেবে, পাস করবে। অন্তত একটা চোখ তো ভাল আছে, কাজেই সে পারবে। ফল হস্তান্তরের এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাঙ্গামাটি ও নীলফামারীর জেলা প্রশাসক এবং কয়েকজন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেন। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ১০ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানগণ উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, গতবারের চেয়ে এবার শতকরা ৫ দশমিক ৬৩ ভাগ শিক্ষার্থী কম পাস করেছে। এ বছর শতকরা ৮৭ দশমিক ০৪ ভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে। গতবার তা ছিল ৯২ দশমিক ৬৭ শতাংশ। ২০১৩ সালের ফলও এর চেয়ে ভালো ছিল। ওইবার ৮৯ দশমিক ৭২ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করে। কমেছে জিপিএ-৫ও। গতবার জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১ লাখ ২২ হাজার ৩১৩ শিক্ষার্থী। আর এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ১১ হাজার ৯০১ জন।
×