ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রাসিকে অচলাবস্থা

অনিশ্চিত ৭০০ কোটি টাকার প্রকল্প

প্রকাশিত: ০৪:৩১, ৩১ মে ২০১৫

অনিশ্চিত ৭০০ কোটি টাকার প্রকল্প

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ রাজশাহী নগরীর অবকাঠামো উন্নয়নে প্রায় ৭শ’ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের আমলে এ প্রকল্পগুলো গ্রহণ করা হয়েছিল। বর্তমানে রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) প্রশাসনে অচলাবস্থার কারণে থেমে গেছে ওই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া। মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল মেয়র হওয়ার পর প্রায় ৫ মাস ধরে আত্মগোপনে থাকা এবং বরখাস্ত হওয়ার কারণে রাসিকে অচলাবস্থার সৃষ্টি হওয়ায় অনুমোদন পাওয়া মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। রাসিক সূত্র মতে, বিভিন্ন সময়ে একনেকে অনুমোদন হওয়া ৭০০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে ৫০০ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন পায় সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের আমলেই। আর সাবেক মেয়রের গ্রহণ করা অপর প্রায় ২০০ কোটি টাকার অনুমোদন পায় বর্তমান মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের আমলে। সর্বশেষ গত ১৯ মে একনেকে অনুমোদন পায় ১২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীর তালাইমারী থেকে কল্পনা সিনেমা হল পর্যন্ত সড়ক চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্পটি। এছাড়াও প্রায় শত কোটি টাকা ব্যয়ে ফায়ার সার্ভিস মোড় থেকে কোর্ট হয়ে লিলি সিনেমা হল মোড় পর্যন্ত সড়কটি অনুমোদনের এক বছরেও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। অনুমোদন হয়েও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া আলোর মুখ দেখেনি নওদাপাড়া থেকে বুধপাড়া হয়ে নাটোর রোড পর্যন্ত সড়ক, রাবি ও রুয়েটের মধ্য দিয়ে খড়খড়ি পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ কাজ। এসব সড়ক নির্মাণে কোন বাধা না থাকলেও এখন পর্যন্ত ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু করতে পারেনি রাসিক। সূত্রমতে, নগরীর উপশহর মোড় থেকে সোনাদীঘির মোড় এবং মালোপাড়া হয়ে সাগরপাড়া বটতলা মোড় পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্পটি ২০১১ সালের ২৩ আগস্ট একনেকে অনুমোদন পায়। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয় ৭২ কোটি ১৬ লাখ টাকা। একনেকের অনুমোদনের পর ২০১৩ সালে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ৩১ কোটি টাকা বরাদ্দ করে সরকার। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে জমি অধিগ্রহণের জন্য সিটি করপোরেশন জেলা প্রশাসনকে ৬৩ কোটি টাকা দেয়। কিন্তু তদারকির অভাবে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে কোন অগ্রগতি নেই। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ রাজশাহী-নওগাঁ প্রধান সড়ক থেকে মোহনপুর হয়ে রাজশাহী-নাটোর সংযোগ সড়কটি একনেকে অনুমোদন পায় ২০১১ সালের ২০ ডিসেম্বর। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১২২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। ওই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রথম পর্যায়ে সরকার সাড়ে ৩২ কোটি বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু এখনও আলোর মুখ দেখেনি প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া। সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় প্রকল্পগুলোর ব্যয় বাড়ছে। যা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে নতুন করে জটিলতা দেখা দিতে পারে। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক জানান, ২০১১ সালের হিসাবে প্রকল্পগুলোর ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত কাজ শুরু করতে না পারায় ব্যয় বাড়ছে। রাসিক সূত্রমতে, সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন তার আমলের পাঁচ বছরে রাজশাহী মহানগরীর অবকাঠামোগত উন্নয়নে প্রায় ২৩০০ কোটি টাকা প্রকল্প গ্রহন করেন। এর মধ্যে প্রায় ১২০০ কোটি টাকার প্রকল্প একনেকে অনুমোদন পায়। একনেকে অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পগুলোর মধ্যে ৩৫০ কোটি টাকার প্রকল্প সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বাস্তবায়ন করেন। বাকি প্রায় ৮৫০ কোটি টাকার প্রকল্পের মধ্যে সাবেক মেয়রের আমলে অনুমোদন পাওয়া ১৩৭ কোটি টাকার ড্রানেজ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেন বর্তমান মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের মেয়াদকালের শেষ দিকে ২০১২ সালের শেষে এ প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পেয়েছিল। সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, মেয়র হতে না পারলেও মহানগরীর উন্নয়নে তার গ্রহণ করা প্রকল্পগুলো অনুমোদন ও বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন নিয়েও কিছুটা সংশয় দেখা দিয়েছে। রাসিকের অনুমোদন হওয়া বিভিন্ন প্রকল্পের বিষয়ে জানতে সম্প্রতি বহিষ্কৃত মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে যাওয়া যায়নি।
×