ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মোদির সফর এবং সম্ভাবনা

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ৩১ মে ২০১৫

মোদির সফর এবং সম্ভাবনা

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আগামী ৬ জুন বাংলাদেশ সফরে আসছেন। মোদির এটা হবে প্রথম বাংলাদেশ সফর। সংবাদটি সবাইকে আশাবাদী করে তুলছে। ইতোমধ্যে দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণাও দিয়েছে। অনেকে মনে করছেন, এই সফর দুদেশের মধ্যকার সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। বিশেষ করে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তিটি দীর্ঘ ৪১ বছর পর ভারতের লোকসভা ও রাজ্যসভায় অনুমোদন পেয়েছে। এতে কেবল অমীমাংসিত সীমান্ত সমস্যার সমাধানের পথই দেখাল তা নয়, নতুন করে অন্যান্য ক্ষেত্রেও আশাবাদের সৃষ্টি করেছে। মোদির এই সফর কেবল রাজনীতি ক্ষেত্রে নয়, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। মূলত সীমান্ত চুক্তি অনুমোদনের পরই মোদির বাংলাদেশ সফরের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়। তাই মোদি সরকারের কাছে এ দেশের জনগণের প্রত্যাশা অনেক। বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়নে বিশেষ করে কানেকটিভিটি জোরদারে ভারতের কাছে ১৫টি প্রকল্পের জন্য প্রায় ২৯০ কোটি ডলার ঋণের প্রস্তাব করেছে। প্রস্তাব অনুযায়ী ভারতের পক্ষ থেকে কী পরিমাণ ঋণ দেয়া যায় সফরে এর ঘোষণাও থাকছে বলে জানা গেছে। সফরে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি, নৌ ট্রানজিট প্রটোকল, উপকূলীয় জাহাজ চলাচল চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। একইভাবে কলকাতা-ঢাকা-আগরতলার মধ্যে বাস চলাচল চুক্তি, দু’দেশের মাননিয়ন্ত্রণ সংস্থার মধ্যে পারস্পরিক মানের সনদ স্বীকৃতির চুক্তি, ঢাকা-শিলং-গুয়াহাটির মধ্যে নতুন বাস সার্ভিস উদ্বোধন, বিশেষ ক্ষেত্রে অন এ্যারাইভাল ভিসা এবং অন্য ভিসা ব্যবস্থা সহজ করার পরিকল্পনাসহ যেসব চুক্তি ও সমঝোতা স্বাক্ষরের বিষয়াদি উল্লেখ রয়েছে তার সফল বাস্তবায়নই সবার কাম্য। এ কথা সত্য যে, গত কয়েক বছরে ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটা বড় ধরনের অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় এই সফরে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা দ্বিপক্ষীয় ইস্যুগুলো মীমাংসার পথও খুলে যেতে পারে। তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তিটি যাতে আলোচনায় বিশেষ গুরুত্ব পায় সেদিকে খেয়াল রাখা দরকার। সফরে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা কম হলেও বিষয়টি নিয়ে মোদি একটি নিশ্চিত আশ্বাস দিতে পারেন। এছাড়া বর্ডারহাট চালু, ইইউর আদলে দক্ষিণ এশিয়ার চার দেশ বাংলাদেশ-ভারত-নেপাল-ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগসহ অন্যান্য জনসম্পৃক্ত বিষয়গুলো গুরুত্ব দেয়া দরকার। সীমান্ত হত্যা বন্ধে অতীতে দুই দেশ একমত হলেও এখনও হত্যা পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। কিভাবে সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা যায় তা নিয়েও আলোচনা হওয়া দরকার। এই মুহূর্তে এই অঞ্চলে জঙ্গীবাদ অন্যতম সমস্যা। বিষয়টি উভয় দেশকে গভীরভাবে চিন্তা করেই জঙ্গী দমনে একসঙ্গে কাজ করা জরুরী। ভারত প্রতিবেশী দেশ। দুই দেশের রয়েছে ইতিহাস ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন। আর এই সম্পর্ক আরও জোরদারের ক্ষেত্রে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এই সফরটি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। আসলে প্রতিবেশীর সঙ্গে কার্যকর অংশীদারিত্ব সম্পর্ক ছাড়া উন্নয়ন সম্পূর্ণ ও টেকসই হয় না। প্রতিবেশীর সঙ্গে এই নীতি হওয়া উচিত যাতে সবার নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন নিশ্চিত হয়। এর জন্য দরকার বাণিজ্য, বিনিয়োগ, যোগাযোগের ক্ষেত্রকে আরও সম্প্রসারিত করা। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ গড়ার পথে বাংলাদেশ। সে ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলো আরও গুরুত্ববহ। ভৌগোলিক ও ঐতিহাসিক কারণেই দুটি দেশের বন্ধুত্ব অত্যন্ত সুহার্দ্যপূর্ণ। তাই দু’দেশের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ ও ন্যায়সঙ্গত অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা আরও জরুরী। এমনকি একটি স্থিতিশীল, নিরাপদ ও সমৃদ্ধ দক্ষিণ এশিয়া গড়তে হলে বাংলাদেশ-ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অপরিহার্য। শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী এই রাষ্ট্রীয় সফরে আসছেন। এই সফরের মধ্য দিয়ে দু’দেশের সম্পর্ক বিভিন্ন ক্ষেত্রে আরও জোরদার হবে বলে সবার প্রত্যাশা।
×