ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কলাপাড়ায় পাঁচ গ্রামের কৃষক ॥ লোনা পানিতে নিঃস্ব

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৩০ মে ২০১৫

কলাপাড়ায় পাঁচ গ্রামের কৃষক ॥ লোনা পানিতে নিঃস্ব

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ২৯ মে ॥ কলাপাড়ায় নিজামপুর গ্রামের মানুষ এখন দু’চোখে সর্ষেফুল দেখছেন। বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধটি যথাযথভাবে মেরামত না করায় লোনা পানির গ্রাসে সবকিছু হারাতে বসেছে শত শত কৃষক পরিবার। এসব পরিবার তিন বছরে ঘরে তুলতে পারেনি আমনসহ কোন ফসল। একই দশায় পড়েছে কোমরপুর, সুধীরপুর, ইউসুফপুর ও পুরান মহিপুর গ্রামের কৃষকরা। এখন বিধ্বস্ত বাঁধটি তাদের কাছে স্থায়ী দুর্যোগে পরিণত হয়েছে। জোয়ারের তা-বে বাড়িঘরে পর্যন্ত থাকতে পারছেন না মানুষ। প্রত্যেকটি মুহূর্ত কাটছে ভেসে যাওয়ার আতঙ্কে। বাঁধটি মেরামতের দাবিতে এলাকার মানুষ কলাপাড়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ের সামনে ২০১৪ সালে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা মানববন্ধন শেষে অফিসের সামনে অবস্থান নেয়। কিন্তু শুধুই আশ্বাস নিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়েছে। কাজের কাজ কিছু হয়নি। এলাকার সকল শ্রেণির মানুষের অভিযোগ এ বাঁধটি মেরামতের নামে বিভিন্ন সময় পাউবোর কর্মকর্তা ও ঠিকাদাররা কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করে গেছে। কিন্তু দুর্ভোগ কাটেনি মানুষের। এখন লোনা পানির ঝাপটায় সব হারিয়ে নিঃস্ব হওয়ার উপক্রম হয়েছে। মহিপুর ইউনিয়নের ৪৭/১ পোল্ডারের এ বাঁধটির অন্তত ২শ’ মিটার বেড়িবাঁধ ২০১৪ সালের ১৩ জুন সাগর মোহনা সংলগ্ন আন্ধার মানিক নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারের তা-বে ল-ভ- হয়ে যায়। সেখানকার শত শত কৃষক পরিবারের আবাদি জমি বাড়িঘর লোনা পানিতে ডুবে যায়। এরপর আর মেরামত করা হয়নি। এরপর থেকে কৃষিনির্ভর পরিবারগুলোর জীবন-জীবিকার পথ বন্ধ হয়ে গেছে। ভেসে গেছে কোটি টাকার মাছ। বয়োঃবৃদ্ধ আমির হাওলাদার জানান, ফি-মাসে অমাবস্যা-পূর্ণিমায় তারা লোনা পানিতে দুই দফা ভাসেন। সব শেষ হয়ে গেছে এসব মানুষের। বিধ্বস্ত বাঁধের পাশের বাসিন্দারা এও বলেছেন, সাগরের মোহনায় খাজুরায় চর পড়েছে ওই চরের বালু কেটে নেয়ায় জলোচ্ছ্বাসের ঝাপটা আরও বেশি আঘাত হানছে। অসহায় কৃষকরা জানান, ২০০৯ সাল থেকে বেড়িবাঁধটি কয়েকদফা মেরামত করা হয়েছে। মেরামতের নামে চলেছে কোটি কোটি টাকার লুটপাট। সিসি ব্লক ঠিকমতো করা হয়নি। জিওটেক্সটাইল বস্তার পরিবর্তে দেয়া হয়েছে বালু ভর্তি প্লাস্টিকের বস্তা, ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। সব গেছে জোয়ারের ঝাপটায় ভেসে। যে কারণে সরকারের বিপুল অর্থ ব্যয় হলেও তা পাউবোর কর্মকর্তা ও কাজে জড়িত ঠিকাদারদের পেটে চলে গেছে। তাই তাঁরা সঠিক মান নিয়ন্ত্রণ করে বাস্তব সম্মত পদক্ষেপ নিয়ে দ্রুত বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ মেরামতের দাবি করেছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের জানান, নিজামপুরের বেড়িবাঁধ রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
×