ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নদীতে ইলিশের আকাল

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৩০ মে ২০১৫

নদীতে ইলিশের আকাল

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ বৃষ্টি না থাকায় নদীতে জোয়ারের পানির স্রোত নেই। ফলে ইলিশ রক্ষায় দুই মাস মাছ ধরা বন্ধ থাকার পর উন্মুক্ত নদীতে ইলিশ শিকারে নেমে জেলেরা শূন্য হাতেই তীরে ফিরছেন। বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীতে চলছে ইলিশের আকাল। মেঘনা, তেঁতুলিয়া, কালাবদর কিংবা বঙ্গোপসাগরের মোহনা কোথাও ইলিশের দেখা মিলছে না। ফলে জেলে পরিবারে এখন চরম হতাশা দেখা দিয়েছে। সূত্রমতে, টানা দু’মাস জেলেরা কর্মহীন থাকার পর জাল-নৌকা-ট্রলার নিয়ে নদীতে মাছ ধরতে নেমেছিলেন। কিন্তু ইলিশ ধরা না পড়ায় তাদের মাঝে এখন চরম হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। পহেলা মে ইলিশ শিকারের ওপর নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর ঘাটে ঘাটে আড়তদার, শ্রমিকসহ মৎস্য সংশ্লিষ্ট লোকজন তৎপর হয়ে উঠেছিল। প্রতি বছরই এ সময়ে জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়তে শুরু করে। এবারের চিত্র পুরোটাই উল্টো। এক মাস অতিবাহিত হতে চললেও এখন পর্যন্ত ইলিশের দেখা মিলছে না। উপকূলের নদ-নদীতে ইলিশের আকাল দেখা দেয়ায় জেলেদের মনে নেই উৎসবের আমেজ। সূত্রে আরও জানা গেছে, মাছের প্রজননকাল হিসেবে মার্চ ও এপ্রিল দুই মাস চাঁদপুুরের ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুরের চরআলেকজান্ডার পর্যন্ত মেঘনার নিম্ন অববাহিকার ১০০ কিলোমিটার, ভোলার মদনপুর ইলিশা থেকে চরপিয়াল পর্যন্ত মেঘনার শাহবাজপুর শাখা নদীর ৯০ কিলোমিটার, ভোলার ভেদুরিয়া থেকে পটুয়াখালীর চররুস্তুম পর্যন্ত তেঁতুলিয়া নদীর ১০০ কিলোমিটার ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া থেকে আন্দারমানিক পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার এলাকাকে অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়। মূলত ইলিশ রক্ষায় গত ৯ বছর ধরে চলছে অভয়াশ্রমে মাছ শিকার বন্ধের সরকারী নিষেধাজ্ঞা। মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দেশের ৪০ জেলায় সাড়ে ৪ লাখ ইলিশ শিকারি জেলে রয়েছে। এছাড়া কেনাবেচা, পরিবহনসহ সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োজিত রয়েছে ২০ থেকে ২৫ লাখ লোক। গত দুই মাস মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা থাকায় এ অঞ্চলের জেলেদের জীবন কেটেছে চরম কষ্টে। দুই মাস এক প্রকার তাদের বেকার কাটাতে হয়েছে। দুস্থ জেলেদের জন্য সরকারের পুনর্বাসন বরাদ্দ ছিল অপ্রতুল। যেটুকু বরাদ্দ এসেছে তা রাজনৈতিক স্বজনপ্রীতি এবং ইউপি চেয়ারম্যানদের নানান অজুহাতের কারণে সাধারণ জেলেদের হাতে পৌঁছেনি। ফলে উপকূলের হাজার হাজার জেলে সরকারী বরাদ্দ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। অভাব অনটনে তাদের দু’টি মাস বড় কষ্টে কেটেছে। অভাবের তাড়নায় সরকারী আদেশ অমান্য করে যারা জাল নৌকা নিয়ে নিষিদ্ধ এলাকায় ঢুকে পড়েছিলেন তারা নৌ-বাহিনী, কোস্টগার্ডসহ মৎস্য কর্মকর্তাদের অভিযানের মুখে পড়ে জাল ও জাটকাসহ সব হারিয়ে শূন্য হাতে ঘরে ফিরেছেন। দু’মাস বেকার থাকার পর তাদের দেনার ভার বৃদ্ধি পেয়ে কয়েক গুণ হয়েছে। এসব হতাশার মাঝেও জেলেরা আশা করছেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বৃষ্টির পাশাপাশি নদ-নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেলে ইলিশ ধরা পড়তে শুরু করবে।
×