ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চট্টগ্রামে বাড়ছে বিয়ে বিচ্ছেদ

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ৩০ মে ২০১৫

চট্টগ্রামে বাড়ছে বিয়ে বিচ্ছেদ

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ প্রযুক্তিনির্ভর সমাজে একান্নবর্তী পরিবার ব্যবস্থা ভেঙে গেছে অনেক আগে। একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এখন বেড়েছে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা। যার প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রাম নগরীতে। এখানে গড়ে প্রতিদিন সাত-আটটি বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন জমা পড়ছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সালিশী আদালতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৪ সালে মোট ৩ হাজার ২৬৮টি বিচ্ছেদের আবেদন জমা পড়েছে। চলতি বছর এ সংখ্যা আরও বেশি হবে। এ বছর মাত্র চার মাসে এক হাজার ১১২টি বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন জমা পড়েছে। এখানে মেয়েদের দিক থেকেই তালাকের নোটিস বেশি আসছে। সিটি করপোরেশন সালিশী আদালত-১ এ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১ জানুয়ারি থেকে ১০ মে পর্যন্ত এই আদালতে ৪৬৭টি বিচ্ছেদের আবেদন জমা পড়েছে। তালাক দেয়ার ক্ষেত্রে মেয়েরাই এগিয়ে। এই আদালতে জমাপড়া আবেদনের প্রায় ৭০ শতাংশ নারীদের পক্ষ থেকে করা হয়েছে। আদালত-২ এ খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, জানুয়ারি থেকে ১০ মে পর্যন্ত সর্বমোট ৬৪৫টি বিচ্ছেদের আবেদন জমা পড়েছে। এখানেও একই অবস্থা লক্ষ করা গেছে। এখানে জমাপড়া আবেদনের ৬৫ শতাংশ নারীরা দিয়েছে। গত বছর এ আদালতে আবেদন জমা পড়েছে ২০০৪টি। এ সম্পর্কে সিটি করপোরেশনের স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট নূরে আলম ভুইয়া জানান, ‘সামাজিক, নৈতিক ও ধর্মীয় অবক্ষয়ের কারণে বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা বাড়ছে। প্রতিদিন সাত-আট জন বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন করছে। মেয়েদের দিক থেকে বেশি আবেদন জমা পড়ছে।’ খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, স্বামী যৌতুক দাবি, শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার, মাদকাসক্তি, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক (পরকীয়া), দুজনের জীবনযাপনে অমিল, সন্দেহ প্রবণতা, স্বামীর কাছ থেকে ভরণ-পোষণ না পাওয়াসহ বিভিন্ন কারণ বিয়েকে বিচ্ছেদে গড়িয়ে দিচ্ছে। সিটি করপোরেশন সালিশী আদালতে জমা পড়া আবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে নিম্নবিত্ত পরিবারে স্ত্রীকে নির্যাতন ও যৌতুক দাবির কারণে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে। নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারে পরকীয়া, মাদকাসক্ত ও নেশার কারণে বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে। আর উচ্চবিত্ত পরিবারে ব্যক্তিত্ববোধ ও মতপার্থক্যই বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ। তবে সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াসহ বিভিন্ন প্রভাবে ছেলেমেয়েদের বিবাহবিচ্ছেদে উদ্বুদ্ধ করছে। পাশাপাশি নারী সচেতনতাও মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। সমাজ পরিবর্তনের কারণে নারীরা এখন আর মুখবুজে স্বামীর অত্যাচার সহ্য না করে বিচ্ছেদের দ্বারস্থ হচ্ছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ও বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার কারণে মেয়েরা অনেক বেশি ফ্যাশনেবল হচ্ছে। এতে করে তাদের মধ্যে চাহিদা ও ভোগ বাড়ছে। স্বামীরা তাদের ওই চাহিদা পূরণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় দুজনের মধ্যে দ¦ন্দ্ব সৃষ্টি হচ্ছে। একজনের মধ্যে না পাওয়ার হতাশা অন্যজনের মধ্যে মানসিক যাতনা কাজ করছে। যার ফলে ছেলে মেয়ে দুই পক্ষ থেকে বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে। সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে দিন দিন এটি বাড়ছে।’ তিনি বিবাহ বিচ্ছেদের হার কমানোর জন্য পুরুষদের আচরণগত পরিবর্তনসহ মিডিয়ার সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের কথা বলেন।
×