স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মধ্যে বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। শুক্রবার দুপুরে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপির যৌথসভা শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের মুখপাত্র ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ঐকমত্যের ভিত্তিতে ভারতের সঙ্গে দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার জন্য দুই নেত্রীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও বিএনপির এক্সপার্টদের আলোচনায় বসা অত্যন্ত জরুরী।
রিপন বলেন, বৈঠকের মধ্য দিয়ে জাতীয় সমস্যা সমাধানে দুই নেত্রী একমত হলে তা দেশের জন্য ইতিবাচক হবে। তাই নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশে আসার আগেই তাদের বৈঠকে বসা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে সীমান্ত সমস্যা, তিস্তা পানি চুক্তি, বাণিজ্য ঘাটতি, সন্ত্রাসবাদ নিরসনে সহযোগিতাসহ বিভিন্ন অমীমাংসিত সমস্যা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বা বিএনপির
ব্যক্তিগত বিষয় নয়। এসব আমাদের জাতীয় ইস্যু। আমরা এ সব সমস্যার গ্রহণযোগ্য সমাধান চাই।
রিপন বলেন, বিএনপির রাজনীতি ভারতবিরোধিতার রাজনীতি নয়। আমরা আগেও বলেছি, আমাদের রাজনীতি দেশ, দেশের জনগণ, দেশের উন্নয়ন, মানবাধিকার কিভাবে উন্নত করা যায় তা নিয়ে। তাই আমরা চাই, ভারতের সঙ্গে আমাদের রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো মীমাংসার জন্য জাতীয় ঐকমত্য। তিনি বলেন, ভারতের জনপ্রশাসনকে সে দেশের রাজনীতিকরা রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে না। অথচ আমাদের দেশের জনপ্রশাসনকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হয়। আমাদের জনপ্রশাসন দলদাসে পরিণত হয়েছে।
রিপন বলেন, রাজনীতিতে মতবিরোধ থাকবেই। কিছুদিন আগেও বাংলাদেশের সঙ্গে অমীমাংসিত সীমান্ত বিরোধ, তিস্তা পানি চুক্তির বিরোধিতা করেছেন কলকাতার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অথচ সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন মোদির সঙ্গে বাংলাদেশ সফরে আসছেন। এটাই হচ্ছে গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। আমাদের দেশের উন্নয়নেও আমরা রাজনৈতিক মতপার্থক্য সত্ত্বেও জাতীয় ইস্যুতে ঐকমত্যের রাজনীতি চর্চা করতে চাই।
রিপন বলেন, আমাদের হাজার হাজার নাগরিক দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ না পেয়ে ভাগ্য অন্বেষণে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমাচ্ছে। ক্ষুধার যন্ত্রণায় তারা দেশান্তরিত হচ্ছে। দেশে নীরব দুর্ভিক্ষ চলছে। সাগরে ভেসে, না খেয়ে অসুখ-বিসুখে শত শত মানুষ মৃত্যুর মুখে পতিত হচ্ছে। অথচ সরকার তা দেখছে না। তারা প্রকৃত পরিস্থিতি আড়াল করার জন্য ২০১৯ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার কথা প্রচার করছে। তিনি বলেন, কর্মসংস্থানের অভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যে সব সাধারণ মানুষ দালালদের খপ্পরে পড়ে দেশান্তরের শিকার হচ্ছেন তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে প্রধানমন্ত্রী ধরে বিচারের হুমকি দিচ্ছেন। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মহিলা দলের সভাপতি নূরে আরা সাফা, সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইন, ওলামা দলের সভাপতি হাফেজ আব্দুল মালেক, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইসতিয়াক আজিজ উলফাৎ, তাঁতি দলের সভাপতি হুমায়ন ইসলাম খান, জাসাস সভাপতি এমএ মালেক, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি মনির হোসেন প্রমুখ।
খালেদাকে তৃণমূলের কথা শোনার পরামর্শ মাহবুবের ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে কেন্দ্রীয় নেতাদের ওপর থেকে নির্ভরতা কমিয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কথা শোনার পরামর্শ দিয়েছেন তার উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন। শুক্রবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে জিয়াউর রহমানের ৩৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ‘বাংলাদেশ রিপাবলিকান ফোরাম’ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বিএনপির বর্তমান নেতৃত্বে পরিবর্তন আনারও আহ্বান জানান তিনি।
খন্দকার মাহবুব বলেন, বিএনপি হাইকমান্ডকে বড় বড় তালগাছের দিকে তাকালে আর চলবে না। তৃণমূল থেকে নেতৃবৃন্দকে তুলে নিয়ে আসতে হবে। তারাই চলমান আন্দোলনে অমানবিক নির্যাতন সহ্য করে কাজ চালিয়ে গেছেন। আইনজীবীদের নির্বাচন উপলক্ষে সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জেলায় গিয়েছি, বিএনপির তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়েছে। তারা দলের চেয়ারপার্সনের কাছে নিজেদের দুঃখের কথা বলতে চান। দলের জন্য পরামর্শ দিতে চান। কর্মীরা সক্রিয় থাকলেও অনেক স্থানে নেতৃত্বের দুর্বলতা রয়েছে। অনেক নির্যাতন, মামলা-হামলার পরও কর্মীরা শক্তিশালী, তৃণমূলে বিএনপির বিপুল জনসমর্থন রয়েছে। কিন্তু অনেক স্থানে নেতৃত্ব দুর্বল হয়ে পড়েছে। এ অবস্থার অবসানে খালেদা জিয়াকে মাঠে নামতে হবে। সারা দেশে যে হাজার হাজার কর্মী নির্যাতিত হয়েছে তাদের কথা শুনতে হবে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: