ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হোটেল সুন্দরবনসহ আশপাশ দ্রুত ঝুঁকিমুক্ত দেখতে চাইছে শঙ্কিত এলাকাবাসী

পান্থপথে নির্মাণাধীন ভবনের পাইলিংয়ে ধস থামছেই না

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ৩০ মে ২০১৫

পান্থপথে নির্মাণাধীন ভবনের পাইলিংয়ে ধস থামছেই না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর পান্থপথ মোড়ে নির্মাণাধীন বহুতল ভবনের পাইলিংয়ে ধস থামছে না। থেমে থেমে ধসের ঘটনা ঘটছে। ইতোমধ্যেই নতুন করে ধসে পড়েছে নির্মাণাধীন ভবনের আশপাশের রাস্তা, বিলবোর্ড, গাছ, বৈদ্যুতিক খুঁটি, নির্মাণ শ্রমিকদের জন্য তৈরি করা পাকা ঘর। নির্মাণাধীন ভবনটির প্রাচীরের ভেতরে থাকা ইট-বালু-সিমেন্ট-পাথর মিশ্রণের মেশিনটিও কাত হয়ে আছে। যে কোন সময় ধসে পড়তে পারে। আশপাশের সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পুরো এলাকায় বড় বড় ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে। যেকোন সময় রাস্তাসহ সেখানে থাকা বৈদ্যুতিক খুঁটি, গাছসহ সবকিছু ধসে গভীর খাদে পড়তে পারে। নির্মাণাধীন ভবনের চারদিকের রাস্তায় বড় বড় ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। ফলে বালু বোঝাই ট্রাক পাইলিংয়ের গভীর গর্তের কাছাকাছি যেতে পারছে না। সুন্দরবন হোটেলের সামনের একটি মাত্র জায়গা দিয়ে ট্রাক দিয়ে বালু ফেলতে হচ্ছে। এতে অপর তিনটি পাশ দিয়ে ধসের ঘটনা ঘটছে। ঝুঁকির মধ্যেই থেকে যাচ্ছে নির্মাণাধীন ভবনটির আশপাশের এলাকা। চারদিক থেকে বালু ফেলা সম্ভব হলে দ্রুত ধস ঠেকানো সম্ভব হতো বলে রাজউক ও সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশলীদের ধারণা। নির্মাণাধীন টুইন টাওয়ারের আশপাশের এলাকা পুলিশ ও র‌্যাব দিয়ে কর্ডন করে রাখা হয়েছে। অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে সার্ক ফোয়ারা থেকে পান্থপথ হয়ে ধানম-ি ৩২ নম্বরের দিকে যাওয়ার রাস্তা। গত ২৭ মে বুধবার সকাল সাতটার দিকে পান্থপথ মোড়ে সি আর দত্ত সড়কের ১/সি/১ নম্বর হোল্ডিংয়ে নির্মাণাধীন বহুতল ভবনের পাইলিংয়ের গর্তে ধসে পড়ে পাশের সুন্দরবন হোটেলের সীমানা প্রাচীর, রাস্তা, ফুটপাথ, বৈদ্যুতিক তারের খুঁটি, কয়েকটি গাছ, টংঘর, ফুচকা বিক্রির কয়েকটি ভ্যানগাড়ি। চাপা পড়েছে চারটি ছোট ক্রেন। সুন্দরবন হোটেলের নিচের প্রায় চল্লিশ ফুট জায়গার মাটি সরে যায়। এতে হোটেলের নিচের পিলারে ফাটল দেখা দেয়। ওইদিনই অতিথিদের সরিয়ে দিয়ে হোটেল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ঘটনার দিন রাতে আরেক দফা ধসের ঘটনা ঘটে। হোটেলের পূর্ব দিকে থাকা বাথরুম ধসে পড়ে। আর নির্মাণাধীন ভবনসংলগ্ন পনেরো ফুট সড়ক আর দশ ফুট ফুটপাথ ধসে অন্তত দু’শ ফুট গভীর খাদে পড়ে যায়। ওইদিন থেকেই পাইলিংয়ের গর্তে বালু ভরাট করে হোটেল ও আশপাশের ভবনগুলো ঝুঁকিমুক্ত করার কাজ শুরু হয়। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রায় পাচশ’ ট্রাক বালু ফেলা হয়। বালুর চাপে আশপাশের রাস্তার কিছু অংশ আবার ধসে পড়ে। সেই সঙ্গে ধসে পড়ে হোটেলের সীমানা প্রাচীরের আরও কিছু অংশ। বৃহস্পতিবার বিকেল চারটার পর বালু ফেলা বন্ধ করা হয়। রাত নয়টার দিকে সুন্দরবন হোটেলের পূর্ব-দক্ষিণ কোণার ইট, পাথর, মাটি ও দেয়াল ধসে পড়ে। দ্বিতীয় দফা ধসের ঘটনাটি ঘটে সুন্দরবন হোটেলসংলগ্ন সামনের রাস্তার পান্থপথের কোণার দিকে। কোণার অংশে বিশাল আকৃতির তিনটি ভারি স্টিলের বিলবোর্ড ছিল। রাত দশটার দিকে বিলবোর্ডের নিচের অংশের মাটি সরে গিয়ে পাইলিংয়ের গভীর খাদে পড়ে যায়। এতে একটি বিলবোর্ড বিকট শব্দে হুড়মুড় করে সামীনা প্রাচীরের ভেতরে আছড়ে পড়ে। তৃতীয় দফা ধসের ঘটনাটি ঘটে এর মিনিটদশেক পরেই। ধসেপড়া ওই বিলবোর্ডের পাশেই ছিল আরও দুটি বিলবোর্ড। এ দুটি বিলবোর্ড ছিল পান্থপথের কোণার সার্ক ফোয়ারার দিকে। ওই দুই ভারি বিলবোর্ডের নিচের অংশের মাটিও ধসে পড়লে একটি বিলবোর্ড সীমানা দেয়ালের ভেতরে পাইলিংয়ের গভীর খাদে পড়ে যায়। আর অপরটি পান্থপথ ও সার্ক ফোয়ারা বরাবর পুরো রাস্তার ওপর আছড়ে পড়ে। ধসের ঘটনার পর থেকেই সুন্দরবন হোটেলের সামনের এবং পাশের রাস্তাটি বন্ধ করে দেয়া হয়। বিলবোর্ড ধসে পড়ায় বৃহস্পতিবার রাতেই পান্থপথ সড়কের সার্ক ফোয়ারা থেকে ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের দিকে যাওয়ার দক্ষিণ পাশের রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়। রাজউক ও সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশলীরা বলছেন, বার বার ধসের ফলে নির্মাণাধীন ভবনের চারদিকের রাস্তায় বড় বড় ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে। পান্থপথ ও সুন্দরবন হোটেলের সামনের রাস্তাটি কয়েক ফুট দেবে গেছে। যেকোন সময় ধসে পড়া বিচিত্র নয়। ফলে বালু বোঝাই ভারি ট্রাকগুলো নির্মাণাধীন ভবনের পাইলিংয়ের গভীর গর্তের কাছাকাছি পৌঁছতে পারছে না। কারণ বালু বোঝাই ভারি ট্রাক পাইলিংয়ের গর্তের কাছাকাছি গেলে তা ধসে পড়তে পারে। নির্মাণাধীন ভবনের উত্তর, পূর্ব ও পশ্চিম পাশ দিয়ে কোন প্রকার যানবাহন চলাচলের সুযোগ নেই। শুধুমাত্র সুন্দরবন হোটেলের দক্ষিণ-পূর্ব কোণার দিক খোলা ঝুঁকিমুক্ত রয়েছে। ফলে সেখান দিয়েই ট্রাকে করে বালু ফেলা হচ্ছে। শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ১৫শ’ ট্রাক বালু ফেলা হয়েছে। যা গভীর খাদে ধস ঠেকানোর প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই কম। অপর তিন দিক দিয়ে বালু ফেলতে না পারায় সেখান দিয়ে প্রায়ই ধসের ঘটনা ঘটছে। ইতোমধ্যেই ফ্রেশ সিমেন্টের মিশ্রণ মেশিন কাত হয়ে পড়ে আছে। যেকোন সময় গভীর খাদে পড়ে যেতে পারে। কর্মচারীদের থাকার পাকা ঘর প্রায় পুরোটাই ধসে পড়েছে। সামনের দিকের একটি দেয়াল শুধু কাত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পাইলিংয়ের ভেতরে থাকা স্টিলের বারগুলো ল-ভ- হয়ে পড়ে গেছে। ফুটপাথ, রাস্তা, নির্মাণাধীন ভবনের সামনের দিকে থাকা হাতিল ও হাইটেক ফার্নিচারের দোতলা ভবন, সেখানে থাকা আরও একটি ভারি বিলবোর্ড কাত হয়ে রীতিমত ঝুঁকি বাড়িয়েছে। যেকোন সময় এগুলো ধসে পড়তে পারে। আশপাশের সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এদিকে শুক্রবার পুরো বিষয়টির সমন্বয়কের দায়িত্ব পালনকারী থাকা ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক অভিযোগ করেন, ধসের পর আশপাশের ভবন ও এলাকা ঝুঁকিমুক্ত করতে নির্মাণাধীন ন্যাশনাল ব্যাংক সহযোগিতা করছে না। রাজউকের তরফ থেকে চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দেয়ার কথা থাকলেও দুদিনেও প্রতিবেদনের অগ্রগতি সম্পর্কে জানা যায়নি।
×