ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংবর্ধনায় নাগরিক কমিটি নেতৃবৃন্দ

বাংলাদেশকে বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড় করিয়েছেন তিনি

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ৩০ মে ২০১৫

বাংলাদেশকে বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড় করিয়েছেন তিনি

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় নাগরিক কমিটির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘দেশরতœ’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে। নাগরিক কমিটির সভাপতি ও লেখক সৈয়দ শামসুল হক তাঁকে এ উপাধিতে ভূষিত করে বলেন, আজ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামের প্রারম্ভে আবশ্যিকভাবে ‘দেশরত্ন’ শব্দটি ব্যবহার হবে। আমি সবার পক্ষ থেকে তাঁকে ‘দেশরতœ’ উপাধিতে ভূষিত করছি। এ সময় উপস্থিত জনতা করতালির মাধ্যমে এ উপাধিকে স্বাগত জানায়। যদিও বেশ কয়েক বছর পূর্বে ছাত্রলীগ শেখ হাসিনাকে ‘দেশরত্ন’ উপাধি দিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীকে দেয়া নাগরিক সংবর্ধনায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের মিলনমেলায় দাঁড়িয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতৃবৃন্দরাও দেশের উন্নয়ন ও জঙ্গী-সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতামুক্ত উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রজ্ঞা, সাহসিকতা ও রাষ্ট্রনায়কোচিত কর্মকা-ের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে মাথা উঁচু করে দাঁড় করিয়েছেন। আমাদের মর্যাদাবান করেছেন, সম্মানিত করেছে। দেশে আজ সেই ২০০১-০৫ সালের বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের নির্যাতন, মানুষ হত্যা নেই, ২০১৩ সালে নির্বাচন ঠেকানোর নামে তা-ব নেই। সবই শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কারণে এখন স্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে শেখ হাসিনা দেশে বিচারের সংস্কৃতি সৃষ্টি করেছেন। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে। সভাপতির বক্তব্যে সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক বলেন, শেখ হাসিনা শুধু বঙ্গবন্ধুর কন্যা নন, বঙ্গবন্ধুর সম্প্রসারিত বাহু। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু যেমন ছিলেন রাজনীতির কবি, তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা হচ্ছেন উন্নয়নের কবি। প্রজ্ঞা, দূরদৃষ্টি এবং অকুতোভয় চিত্রে তিনি দেশকে ক্রমাগত উন্নততর দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় শুধু সরকার কিংবা বিরোধী দল নয়, নাগরিক সমাজই হচ্ছে সবচেয়ে শক্তিশালী। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের মানুষ আজ শান্তি, স্বস্তি ও প্রগতির মধ্যে বসবাস করছে। অপশক্তিদের জ্বালাও-পোড়াও ও পুড়িয়ে মানুষ হত্যা অপরাজনীতি দক্ষতার সঙ্গে মোকাবেলা করে দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে উন্নীত করার জন্যই প্রধানমন্ত্রীকে আমরা নাগরিক সংবর্ধনা দিচ্ছি। বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে এখন দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে। আমাদের রফতানি বেড়েছে ২ বিলিয়ন ডলার। চলতি বছরের প্রবৃদ্ধি ৬.৫ শতাংশ হবে। মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ বেড়েছে কয়েকগুণ। দারিদ্র্যতার হার কমার পাশাপাশি ধনী গরিবের বৈষম্যও কমেছে। বাংলাদেশ এখন সবচেয়ে স্থিতিশীল ও গতিশীল অর্থনীতির দেশ। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে দেশকে গড়ে তুলতে প্রধানমন্ত্রী একজন শ্রমিকের মতো দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি শক্তিশালী হওয়ার কারণে নিজস্ব অর্থায়নে শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু নির্মাণ করছেন। সেদিন আর বেশি দূরে নয়, বাংলাদেশ থেকে দারিদ্র্যতা পালিয়ে যাবে। ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন বলেন, এদেশে সব সময় নৈতিবাচক বিষয়ই গুরুত্ব পায়, ইতিবাচক কর্মকা- খুব একটা গুরুত্ব পায় না। বিগত সময়ে আমাদের দেশের ভাবমূর্তি বার বার নষ্ট করা হয়েছে। আর শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে মাথা উঁচু করে দাঁড় করিয়েছেন। আমাদের মর্যাদাবান করেছেন, সম্মানিত করেছেন। দেশে আজ সেই ২০০১-০৫ সালের জোট সরকারের নির্যাতন, মানুষ হত্যা নেই, ২০১৩ সালে নির্বাচন ঠেকানোর নামে তা-ব নেই। সবই শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কারণে এখন স্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে। গত ৭০ বছরে যে সমস্যার সমাধান করা যায়নি, শেখ হাসিনা সেই সমস্যা সমাধান করেছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তিচুক্তি, ভারতের সঙ্গে গঙ্গা চুক্তি, সমুদ্রসীমা বিজয় অর্জন করেছেন। এখন মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি বাস্তবায়ন করছেন। অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রব্যবস্থা আমাদের ফিরিয়ে দিয়েছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছেন। অথচ এর চেয়ে কম কাজ করে কেউ কেউ বিদেশে বড় সম্মান পেয়েছেন। অর্থনীতিবিদ ড. খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, আজকে আমাদের উপস্থিতি শুধু সংবর্ধনা দিতে নয়, আমরা এসেছি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি, নেতৃত্বের প্রতি নাগরিকের সমর্থন ও আস্থা জানানোর জন্য। তিনি বলেন, আমাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক যে অর্জন তা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে নেই। দারিদ্র্যের হার কমেছে। মানুষের আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। একজন দিনমজুরও সারাদিন পরিশ্রম করে ১১ কেজি চাল ক্রয় করতে পারে। জ্বালাও-পোড়াও ও ধ্বংসাত্মক কর্মকা-ের মধ্যেও আমাদের প্রবৃদ্ধি ৬ ভাগের ওপরে। আর এসব সম্ভব হচ্ছে কেবল শেখ হাসিনার গৃহীত নানামুখী নীতি বাস্তবায়নের ফলে। তবে টেকসই উন্নয়নে সবার অংশীদার হতে হবে। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, শেখ হাসিনা যখন নির্বাসনে ছিলেন তখনও একটা সংস্কৃতি ছিল, তা হলো ভয়ের সংস্কৃতি, শঙ্কার সংস্কৃতি। কিন্তু তিনি তা অতিক্রম করে দেশে ফিরেছেন। সাহসের সংস্কৃতি সৃষ্টি করেছেন। বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে তিনি বিচারের সংস্কৃতি সৃষ্টি করেছেন। অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠনে শেখ হাসিনার সাহসী পদক্ষেপ পুরো দেশের সংস্কৃতিই পাল্টে দিয়েছে। জঙ্গী-সন্ত্রাস-সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার লড়াইয়ে পুরো দেশের মানুষ তাঁর সঙ্গে থাকবে। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. অনুপম সেন বলেন, শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে বই বিতরণ কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। বিদেশীদের কেউ যদি এ দেশে আসে তাহলে তারা দেখতে পারবে শিক্ষার পূর্ণভূমিতে এসেছে। বর্তমান সরকারই শিক্ষার আলো দান করেছে। শহীদ জয়া শ্যামলী নাসরিন বলেন, শেখ হাসিনার সরকার আমলে যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও রায় কার্যকর হওয়ায় শহীদদের আত্মা শান্তি পাচ্ছে। আমরা শহীদ পরিবার স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারছি। বীরাঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ায় নারী জাতির পক্ষ থেকে শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানাই। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক আকরাম খান ক্রিকেটসহ ক্রীড়াঙ্গনে প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা তুলে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সব ধরনের সহযোগিতার জন্য দেশের বিভিন্ন জায়গায় আধুনিক ক্রীড়া অবকাঠামো গড়ে উঠেছে। তাঁর অনুপ্রেরণায় বাংলাদেশ নিউজিল্যান্ড ও পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করতে সক্ষম হয়েছে। যেখানে যে অবস্থায় খেলা হয়, তিনি খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। এটা পরবর্তী জয়ে অবদান রাখে। সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিশাল মঞ্চে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী মঞ্চে থেকে বিশিষ্ট রবীন্দ্র সঙ্গীতশিল্পী মিতা হক ও মনিরুজ্জামান চৌধুরীর পরিবেশনায় রবীন্দ্র সঙ্গীত, এম এ মান্নান ও বুলবুল মহলানবীশসহ অন্য শিল্পীদের পরিবেশনায় নজরুলসঙ্গীত এবং মমতাজ বেগম এমপির কণ্ঠে ছিটমহল নিয়ে লেখা গান শুনেন। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের পর দেশের ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর পরিবেশনায় মনোজ্ঞ নৃত্যও পরিবেশন করা হয়। এদিকে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের সুবিশাল মঞ্চও সাজানো হয়েছিল অপরূপভাবে। বিশাল ব্যানারের একপাশে ১৯৭৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্থলসীমান্ত চুক্তির ঐতিহাসিক স্থিরচিত্র এবং বামপাশে ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের চিত্র স্থান পায়। অনুষ্ঠানের সভাপতি সৈয়দ শামসুল হক তাঁর বক্তব্যের সময় পুরো সংবর্ধনা অনুষ্ঠান সফল হওয়ার পেছনে কঠোর পরিশ্রম করার জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমসহ নাগরিক সমাজের সংশ্লিষ্ট সবার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
×