ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বর্ষা যখন বন্যা

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ৩০ মে ২০১৫

বর্ষা যখন বন্যা

আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে এখন আর আগের মতো স্বাভাবিক বর্ষা চোখে পড়ে না। বর্ষা অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে থাকে। বর্ষায় প্রতিটি নদী পানিতে ভরে যায়। নদীর জল পলি বহন করে অসংখ্য খালের ভেতর প্রবেশ করে বাংলার আনাচে কানাচে কৃষি জমিকে ভিজিয়ে মাটি উর্বর করতে সাহায্য করে। ধান, পাট, কলাই, সরিষা, গম, মশুর প্রভৃতি ফল উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। ফলন ভাল হয়, পোকামাকড় ধ্বংস হয়। সার ও কীটনাশক মাটির নিচে চলে না গিয়ে পানির সঙ্গে সাগরে চলে যায়। বর্ষায় গ্রামের ভেতর দিয়ে বড় বড় নৌকা চলাচল করত, নদীতে সারি সারি জেলে নৌকা দেখা যেত। এখন বর্ষা নেই অথচ বন্যা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মধ্য দিয়ে হাজির হচ্ছে বাংলাদেশে। বর্ষা পরিণত হয়েছে বন্যায়। উজানে ছোট বড় প্রতিটি নদ-নদী পলি জমে জমে চরে পরিণত হয়েছে। নদীর গভীরতা হ্রাস পেয়েছে। চরের কারণে নদীর প্রশস্ততা কমে গিয়েছে, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা ও পদ্মা প্রতিটি বড় নদী উজানে বালু জমে গভীরতা যেমন হ্রাস পেয়েছে তেমনি চর জেগে অসংখ্য ছোট-বড় চর পড়ে নদী খ- খ- খালে পরিণত হয়েছে। এসব নদ-নদীর শাখা নদীগুলো যেমন আত্রাই, ধরলা, ঘাঘট, গড়াই, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র প্রভৃতি নদী বালু ও পলি জমে গভীরতা একেবারেই হ্রাস পেয়েছে। সুরমা ও কুশিয়ারা নদের অবস্থা অনুরূপ। বাংলাদেশের উজানে কোন নদ-নদী বর্ষার নিয়মিত পানিকে ধরে রাখতে না পারার কারণে অগভীর নদী দিয়ে দ্রুতভাবে প্রবাহিত বাধা প্রাপ্ত হয়ে দেশের সমতল ভূমিতে উঠে যাচ্ছে অতি সহজে। ফলে স্থলভাগ সামান্য পানিতে তলিয়ে গিয়ে বন্যার আকার ধারণ করে থাকে। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গে সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম এবং তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনার উভয় পাড়ে অসংখ্য উপজেলা বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে। যে কারণে স্বাভাবিক বর্ষার পানিতে বন্যা হয়ে থাকে। অথচ যমুনার বঙ্গবন্ধু সেতুর ভাটিতে বন্যার পানি চোখে পড়ে না। অবস্থাদৃষ্টে অনুভব করা যায় তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়ন হলেও বাংলাদেশে তিস্তা ও যমুনায় পানি ধরে রাখতে এবং পানির প্রবাহকে সচল রাখতে প্রয়োজন নদী ড্রেজিং যাতে বর্ষায় অতিরিক্ত পানি অতি সহজে গভীর নদী দিয়ে ভাটিতে প্রবেশ করে সাগরে পতিত হতে পারে। এতে করে নদীতে চর পরবে না। নদী প্রশস্ত থাকবে ও ভাঙ্গন রোধ পাবে। ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস পাবে। লালমনিরহাটে তিস্তা সেতুর ভাটি হতে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের বেলকা-পাঁচপীড় কামারজিনিবালাসী ঘাট ও ফুলছড়ি ঘাটের ভাটিতে মাত্র ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত নদী ৯ থেকে ১২ ফুট গভীর করলে নদী স্বাভাবিক গতি ফিরে পাবে। বন্দরগুলো সচল হবে। পরিবহন যোগ্য যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হবে। পানির প্রবাহ চলমান থাকলে চর থাকবে না। জীববৈচিত্র্য রক্ষা পাবে। আবহাওয়ারও পরিবর্তন ঘটবে না। মেছের আলী শ্রীনগর।
×